একসঙ্গে তিনটে ছবিতে অভিনয় করেছেন সানি দেওল ও অনিল কপূর। তিন বারই তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৩২ বছর একসঙ্গে কাজ করেননি এই দুই তারকা।
তখন বলিউডে নায়ক হিসেবে অমিতাভের পড়ন্ত বেলা। উঠে এসেছেন পরবর্তী প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ। মিঠুন, গোবিন্দ, জ্যাকি শ্রফ, সানি দেওল, সঞ্জয় দত্ত, অনিল কপূর তখন পাল্লা দিয়ে যুদ্ধ করছেন নিজের জায়গা মজবুত করতে।
সঞ্জয় ও সানির পিছনে তাঁদের পারিবারিক পরিচিতি ছিল। গোবিন্দ আর মিঠুনের তুরুপের তাস ছিল নাচ। জ্যাকি ছিলেন সুভাষ ঘাইয়ের পছন্দের অভিনেতা। অনিলকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর দাদা বনি কপূর।
সানি এবং অনিলের একসঙ্গে প্রথম ছবি ছিল ১৯৮৮ সালে, ‘রাম অবতার’। ছবির একটি দৃশ্যে অনিলের গলা টিপে ধরছেন সানি, এমন একটি সিকোয়েন্স ছিল। অনিলের অভিযোগ, সানি ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর গলা খুব জোরে টিপে ধরেছিলেন।
এই ঘটনার পরে সংবাদমাধ্যমেও বলেছিলেন অনিল। ফলে সে নিয়ে তাঁদের দু’জনের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। তাঁরা ঠিক করেছিলেন একসঙ্গে আর কোনওদিন অভিনয় করবেন না। কিন্তু সে বছরই তাঁদের একসঙ্গে দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যায়।
রাজকুমার কোহালির পরিচালনায় ‘ইন্তেকাম’ ছবিতে অভিনয় করেন দুই তারকা। রাজকুমার ছিলেন তাঁদের দুজনেরই বন্ধু। ফলে তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হয়ে পারেননি অনিল ও সানি।
এই ছবির একটি দৃশ্য়ে সানির উপর অনিল চিৎকার করছেন, এরকম সিকোয়েন্স ছিল। কিন্তু বার বার সেই দৃশ্য রিটেক করতে হচ্ছিল। কারণ সানির অভিযোগ ছিল, চিৎকার করার সময় অনিলের মুখ থেকে থুতু ছিটে এসে তাঁর মুখে পড়ছিল।
অনিলকে বার বার বুঝিয়ে বলার পরেও একই ঘটনা ঘটতে থাকে। শেষে দৃশ্যের শুটিং হয়ে যাওয়ার পরে সানি এত রেগে যান, তিনি অনিলের কলার ধরে তাঁকে মারতে উদ্যত হন। শেষে সেটে উপস্থিত বাকিদের মধ্য়স্থতায় দু’জনে শান্ত হন।
এর পর তাঁরা ঠিক করে ফেলেন, একসঙ্গে অভিনয় আর নয়। কিন্তু তার পরেও তাঁদের তৃতীয় ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালে। ছবির নাম ‘জোশিলে’। এই ছবির শুটিং শেষ হয়েছিল ১৯৮৪-৮৫ সালে। কিন্তু ছবি মুক্তি পেতে দেরি হয়। ছবির মুক্তির সময়েও দুই তারকার মধ্যে চরম ঝামেলা হয়।
‘জোশিলে’ যখন শুটিং হয়েছিল তখন সানির ‘বেতাব’ সুপারহিট। পাশাপাশি ধর্মেন্দ্র তাঁর বাবা। ফলে অনিলের তুলনায় তিনি অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন জনপ্রিয়তায়। কিন্তু পাঁচ বছর পরে যখন ছবিটি মুক্তি পেল, তখন আমূল বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি।
অনিল তখন জনপ্রিয়তার দৌড়ে সানির থেকে অনেক এগিয়ে। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘তেজাব’, ‘রাম লক্ষ্মণ’-সহ বহু সুপারহিট ছবির তারকা অনিলকে তখন বলা হচ্ছিল অমিতাভের যোগ্য উত্তরসূরি।
ফলে ‘জোশিলে’-এর পোস্টারে অনিলের নাম সানির আগে ছাপা হয়েছিল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ধর্মেন্দ্র।
ধর্মেন্দ্র জানতে পারেন বনি কপূর এ ভাবে পোস্টার তৈরির নির্দেশ দেন। ঘটনার জেরে ধর্মেন্দ্র সানিকে নিষেধ করে দেন অনিলের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করতে।
বাবার এই আদেশ মেনে চলেছেন সানি। তার পর কোনওদিন তিনি অভিনয় করেননি অনিল কপূরের সঙ্গে। ফলে তিন দশকেরও বেশি সময় দুই অভিনেতার যুগলবন্দি থেকে বঞ্চিত দর্শক।