রক্ষণশীল গুজরাতি পরিবার। সেখানে কি না বধূ হয়ে আসবেন হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রী! ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল অম্বানী পরিবার। কিন্তু বাড়ির ছোট ছেলে অনিল প্রেমের প্রতি অনড়। দাদা মুকেশ বিয়ে করেছেন বাড়ির পছন্দ করা মেয়েকে, ১৯৮৫ সালে। তারপর অনিলের বিয়ে নিয়ে পরিবারে প্রবল আপত্তি। অনেক ঝড় সামলে অবশেষে বিয়ে হল অনিল ও টিনার, ১৯৯১ সালে।
আটের দশকে নায়িকা টিনা মুনিম তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। এক বিয়েবাড়িতে তাঁকে কালো শাড়িতে দেখে মুগ্ধ অনিল। সারা বিয়েবাড়িতে একমাত্র টিনাই কালো শাড়ি পরেছিলেন। এরপর দু’জনের আবার দেখা ফিলাডেলফিয়ায়। টিনাকে অনিলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন এক পরিচিত। কিন্তু প্রথম আলাপে টিনা পাত্তা দেননি অনিলকে।
১৯৮৬ তে আবার দেখা দু’জনের। এ বার আলাপ এক আত্মীয় মারফত। তখন খারাপ সময়ের মধ্যে যাচ্ছিলেন টিনা। বারবার দেখা করার সময় পিছিয়ে দিচ্ছিলেন টিনা। কিন্তু অবশেষে দু’জনের দেখা হল। পরবর্তী কালে সাক্ষাৎকারে সিমি গারেওয়ালকে টিনা জানিয়েছিলেন, প্রথম দর্শনে অনিলের সারল্য তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। অন্যদিকে সুন্দরী টিনার মধ্যেও নিপাট সরল মেয়েকে খুঁজে পেয়েছিলেন অনিল।
সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই বাধা এল অম্বানী পরিবার থেকে । সিনেমার মেয়েরা ‘ভাল’ হয় না। ফলে ভাটা পড়ল দু’জনের প্রেমের জোয়ারে। সিনেমা ছেড়ে টিনা উড়ে গেলেন আমেরিকা | ইন্টেরিয়র ডেকরেশন নিয়ে পড়তে | চার বছর ধরে বন্ধ থাকল দুজনের দেখাসাক্ষাৎ এবং কথা |
দু’জনের মাঝে সেই আগল ভেঙে দিল এক ভূমিকম্প। টিনা লস অ্যাঞ্জেলসে থাকাকালীন সেখানে একবার ভয়াবহ ভূমিকম্প হল। একদিন বেজে উঠল তাঁর ঘরের ফোন| রিসিভার তুলতেই ওপারে উদ্বিগ্ন অনিলের কণ্ঠ | টিনা নিরাপদে আছেন জেনে নিশ্চিন্ত হলেন অনিল। কয়েক হাজার মাইল দূরত্বে থেকেও দু’জনে অনুভব করলেন সত্যিকারের প্রেম কাকে বলে। ফোনে ক্ষণিকের কথা এনে দিল সেই মুহূর্ত।
এর পর অনিল স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি টিনা ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেন না। পরিবারের তরফে আনা একের পর এক সম্বন্ধ ফিরিয়ে দেন তিনি। শেষ অবধি ছেলের জেদের কাছে হার মানলেন ধীরুভাই অম্বানী ও কোকিলাবেন।
টিনার মায়ের কাছে গিয়ে কন্যার পাণিগ্রহণের প্রস্তাব দিলেন অনিল। রাজকীয় বিবাহ-অনুষ্ঠানে এক হল দু’জনের চার হাত।
অভিনেত্রী থেকে অম্বানী পরিবারের বধূ। টিনা মুনিম থেকে টিনা অম্বানী। সম্পূর্ণ অন্য সত্তা। ১৯৯১ সালেই শেষ বার মুক্তি পেয়েছিল টিনা মুনিমের ছবি। তারপর সিনেমাকে বিদায় জানিয়েছেন ‘কর্জ’, ‘রকি’, ‘পুকার’-এর নায়িকা। এখন তাঁর প্রধান পরিচয় শিল্পপতি অনিল অম্বানীর স্ত্রী।
অনিল-টিনার দুই ছেলে জয় আনমোল এবং জয় অংশুল । তাঁরা খুব বেশি প্রচারের আলোয় আসেন না।
জীবনের উত্থানপতনে আদর্শ অর্ধাঙ্গিনীর মতোই অনিলের পাশে থেকেছেন টিনা। তাঁরা দেশের পাওয়ার কাপলদের মধ্যে অন্যতম।