আমার কাছে ‘পথের পাঁচালী’ সাদাকালো ছবি হিসেবেই ম্যাজিকাল থাকবে

সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’-র কিছু দৃশ্যকে রঙিন করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন অনিকেত বেরা। আমেরিকা থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিলেন ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’-র কিছু দৃশ্যকে রঙিন করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন অনিকেত বেরা। আমেরিকা থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিলেন ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ১৯:১৫
Share:

রঙিন ‘পথের পাঁচালী’।

লকডাউনে হঠাৎ ‘পথের পাঁচালী’ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার কথা মাথায় এল কেন?

Advertisement


অনিকেত: ‘পথের পাঁচালী’ আমার চিরকালীন প্রিয় ছবি। তাই যখন টেকনোলজিটা তৈরি হল, তখন সবার প্রথমে ওই ছবির কথাই মাথায় এসেছে। তবে এটা শুধু ‘কালারাইজেশন’ নয়। ভিডিয়োগুলো ডিজিটালি উন্নততর এবং স্বচ্ছ। হলিউডে এইপদ্ধতি এখন খুবই ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি আমার প্রিয় ছবির হাত ধরে ভারতীয় ছবিতেও সেটির ব্যবহার করতে চেয়েছি। বলা যেতে পারে আমার এই এক্সপেরিমেন্ট সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ। ওই নির্দিষ্ট দৃশ্যগুলো কেন বেছে নেওয়া হল? কোনও বিশেষ কারণ?

আমি তেমন কিছু ভেবে সব দৃশ্য রাখিনি, তবে সেই বিখ্যাত ট্রেনের দৃশ্যটি রাখতে চেয়েছিলাম। পুরনো ভিডিয়োর সঙ্গে আমার করা ভিডিয়োর তুলনামূলক ছবিও আমি দিয়েছি যাতে বোঝা যায় এই নতুন পদ্ধতি কতটা কার্যকরী।

Advertisement

এই পুরো কাজটার জন্য মনে রাখার মত নিন্দে কিম্বা প্রশংসা কিছু আছে, বিশেষত কোন বিখ্যাত মানুষের কাছ থেকে?

আমি মনে করি এক জন গবেষকের ক্ষেত্রে সব রকমের ফিডব্যাক পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ দর্শক, গবেষক, তরুণ প্রজন্ম, এমনকি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেকের থেকেই বেশ ভাল রিভিউ এসেছে। কিছু প্রডিউসার আমারসঙ্গে কোলাবরেশনও করতে চান বলে জানিয়েছেন। অনেকের থেকে সাজেশনও পেয়েছি আরও কী করে বেটার করা যায় আমার পদ্ধতিকে। তবে আমি কোনও দিন ভাবিনি এটিনিয়ে বিতর্ক হতে পারে। আমার নিজের জন্যও সারা জীবন ‘পথে্র পাঁচালী’ সাদাকালো ছবি হিসেবেই ম্যাজিকাল থাকবে। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স(এআই) দিয়ে কত দূর যাওয়া যায়। প্রচলতি সব পদ্ধতি খুবই খরচ এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যদি রংয়ের বাহার নিয়ে ‘পথের পাঁচালী’র সেটে থাকতাম তবে কেমন হত আমার এআই পদ্ধতি, সেটুকুই আমার দেখারছিল শুধু।

সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’-র কিছু দৃশ্যকে রঙিন করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন অনিকেত বেরা

প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে কালারিংয়ের তফাৎ কী? সিনেম্যাটিক অ্যাঙ্গল থেকে সেটা কতটা কার্যকরী? ভবিষ্যতে এ রকম আর কোনও পরিকল্পনা আছে?

আগেই বললাম, প্রচলিত পদ্ধতি হয়ত কিছু ক্ষেত্রে একটু ভাল দেখতে লাগে কারণ সেখানে পেশাদার আর্টিস্টরা কাজ করেন। কিন্তু সময় এবং খরচ বিচার করলে এআই অনেক বেশি এগিয়ে। তা ছাড়া ভিডিয়ো কোয়ালিটির উন্নতিকরণের ক্ষেত্রে এআই অনবদ্য। আজ থেকে ২/৩ বছরের মধ্যে এই পদ্ধতি আরও অনেক এগিয়ে যাবে। তাছাড়া এআই হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। ফলে কারও আর্ট কিম্বা
টেকনিক্যাল জ্ঞান সীমাবদ্ধ হলেও সে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করতে পারবে। কিছু ছবি রঙিন হলে হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে। তবে সাদাকালো পুরনো ছবিতেও ভিডিয়ো কোয়ালিটি বেটার করার জন্য এআই দারুণ। এটি আসলে মানুষের ব্রেনের মতোই কাজ করে। যেন স্বপ্ন দেখছে। ধরা যাক এআই একটি সাদাকালো বলের ছবি দেখল যেটি একটি পুরনো ছবির অংশ এবং খুবই ঝাপসা। কিন্তু যেহেতু এআই জানে সেটি একটি ক্রিকেট বল (এবং অন্যান্য রংয়ের কথাও সে জানে) তাই সে নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পিক্সেলের কারসাজি ঘটিয়ে দিব্যিরঙিন এবং ঝকঝকে বানিয়ে দিতে পারে বলের ছবিটি। সে ভাবেই আমার
এক্সপেরিমেন্ট এগিয়েছে।

মহামারি রোধে এআই কিভাবে কার্যকর হতে পারে?

কোভিড প্রিভেনশন রোবটস নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ফলে প্রথমত, পথচারীদের চলাফেরা লক্ষ্য রাখা হবে যাতে ঠিকমতো সোশ্যাল দূরত্ব বজায় থাকছেকি না। দ্বিতীয়ত, ক্যামেরা, থার্মাল সেন্সর এবং মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ভাইটাল সাইন দেখে আক্রান্ত কেউ আছে কি না বুঝে নেওয়া যেতে পারে এবং তৃতীয়ত, পথচারীদের ব্যবহারকে প্রভাবিত করা যায় কি না সেটাও দেখা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement