ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
ফিল্মি কেরিয়ারকে বিদায় জানিয়েও পরিচালক ও ভক্তদের জোরাজুরিতেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রঞ্জিত মল্লিক। সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর নতুন ইনিংসের প্রথম ছবি ‘হনিমুন’। সেই সূত্রেই সাক্ষাৎকার দিলেন তাঁর গল্ফ ক্লাব রোডের বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে ফোন করতেই গেট খুলে বেরিয়ে এলেন স্বয়ং গৃহকর্তা। বাড়ির লনে আনন্দ প্লাসের ফোটোশুট শেষ হতেই শুরু হল আড্ডা।
ফিরে আসার নেপথ্যে
কেরিয়ারের নতুন ইনিংসে ইতিমধ্যেই তো তিন-তিনটে ছবিতে অভিনয় করছেন... প্রশ্নের রেশ ধরেই শুরু করলেন, ‘‘অনেকেই অভিনয়ে ফেরার অনুরোধ করতেন। শেষ পর্যন্ত হরনাথ (চক্রবর্তী), চাকী (প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী) আর নেহালের (দত্ত) অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। ছবিগুলোর বিষয়ও বেশ ইন্টারেস্টিং।’’ আবার ‘হনিমুন’ ছবিটিতে নিজের চরিত্র নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি, ‘‘এই ছবিতে আমি একজন ওয়র্কোহলিক বসের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি নিশ্চিত যে, এই ছবি সকলের মুখেই হাসি ফোটাবে।’’
বিরতিটা দরকার ছিল
অবসর সময়টায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোই তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইউরোপ, কেনিয়া, ইজিপ্ট, আমেরিকা... কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিকে মিস করেননি? বললেন, ‘‘কাজকে খুব একটা মিস করিনি। ৪২ বছর একটানা কাজের ক্লান্তি কাটাতে এই বিরতিটা প্রয়োজন ছিল। তার উপর দক্ষিণী ছবির রিমেকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম!’’ বই পড়া, আড্ডা দেওয়া তো ছিলই। সঙ্গে শুরু করেছিলেন বাংলা প্রবাদ নিয়ে গবেষণাও।
অভিনেতার মেকিং
‘ইন্টারভিউ’, ‘শাখাপ্রশাখা’র মতো অন্য ধারার ছবির পাশাপাশি ‘শত্রু’, ‘মৌচাক’-এর মতো কমার্শিয়াল ছবিও করেছেন তিনি। তবে নিজেই স্বীকার করলেন, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’য় মানসিক ভারসাম্যহীনের চরিত্রটা ঝুঁকির ছিল। প্রথাগত অভিনয়ের তালিম নেননি। উত্তমকুমার, উৎপল দত্তর অভিনয় দেখেছেন সামনে থেকে। সেখান থেকেই খুঁজেছেন শিক্ষার রসদ। পাশাপাশি তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে ইন্ডাস্ট্রির ‘আড্ডাঘর’ও। ‘‘কেরিয়ারের শুরুর দিকে এনটিওয়ান স্টুডিয়োর দশ নম্বর মেকআপ রুম ছিল আড্ডার জায়গা। সৌমিত্রদা, অনুপকুমার, তরুণকুমার, শুভেন্দু, রবি ঘোষ, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত... সকলেই থাকতেন সেখানে। রসিকতা, ঠাট্টার পাশাপাশি সিরিয়াস আলোচনাও হতো,’’ বলছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘বিলু রাক্ষস’-এর মুকুটে নতুন পালক
আদ্যন্ত পারিবারিক মানুষ
কেরিয়ারের মতো পরিবারও সমান গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর কাছে। ‘‘আমার নিয়ম ছিল, সন্ধে সাতটার পরে আর কাজ করব না। সকাল দশটা থেকে সাতটা পর্যন্ত কাজ করলেই যথেষ্ট। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ তো ছ’টায় প্যাক আপ করে দিতেন। আর সারা দিন কাজ করার মতো প্যাশনও আমার ছিল না! কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনটাও গুরুত্বপূর্ণ। কোয়েলের মধ্যেও এই মূল্যবোধ রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গেই উঠে এল কোয়েলের দাম্পত্যে ঝামেলা নিয়ে গুজবের কথা। তা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিলেও কাজের ক্ষেত্রে মেয়েকে রঞ্জিতের পরামর্শ, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে কারও কাছে কোনও প্রত্যাশা রেখো না।’’
মহিলাদের শ্রদ্ধা করি
তিন যুগেরও বেশি গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে দেওয়ার পরও তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। রহস্যটা কী? হেসে বললেন, ‘‘কানাডায় এক মহিলা ভীষণ রেগে বলেছিলেন, ‘আপনার নামে তো গসিপ পাই না।’ আসলে আমার পরিচিতি মল্লিক বাড়ির ছেলে হিসেবে। তাই সচেতন ছিলাম, যাতে কখনও এমন কাজ না করি, যা বাড়ির গায়ে কালো ছোপ লেপে দেয়। আমি বরাবরই মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’’
উপহার হিসেবেও বেল্ট!
সাক্ষাৎকারের শেষে এল ‘বেল্টম্যান’ প্রসঙ্গও। হেসে বললেন, ‘‘আমি খুবই শান্তশিষ্ট মানুষ। তবে কখনও খারাপ মানুষ দেখলে সত্যিই মারতে ইচ্ছে করে! সিনেমায় অনেক বারই আমাকে বেল্ট হাতে দেখা গিয়েছে। কিছু দিন আগে তো উপহার হিসেবেও বেল্ট পেয়েছিলাম!’’
বিদায় জানানোর সময় বললেন, ‘‘আবার আসবেন। কাজ না থাকলেও নিছক আড্ডা দিতেই,’’ আন্তরিকতা চুঁইয়ে পড়ছিল অভিনেতার কণ্ঠে।