শ্রীদেবী। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় সাক্ষাৎকারের সময় দেওয়া হয়েছিল। পৌঁছে গিয়েছিলাম ছ’টার মধ্যেই। প্রথমে আয়োজক সংস্থার মুখপাত্র জানালেন, ফ্লাইট দেরি করেছে। একটু অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সেই অপেক্ষা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগল। অবশেষে রাত ন’টার পরে কথা বলতে বসলাম বলিউডের অন্যতম সিনিয়র অভিনেত্রী শ্রীদেবীর সঙ্গে।
প্র: ‘মম’ ছবিতে দেবকীর চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলুন...
উ: দেবকী একজন শক্ত মনের মহিলা। সন্তানের খুশির জন্য সে যে-কোনও বাধার পাহাড় পেরোতে পারে। বাচ্চার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সে কোনও কিছুরই পরোয়া করে না। মা ও টিনএজ মেয়ের সম্পর্কের আধারে তৈরি হয়েছে ছবিটা। জার্নিটা খুব ইমোশনাল।
প্র: এই ছবিতে আপনি নবাগতা পাকিস্তানি অভিনেত্রী সজল আলির সঙ্গে অভিনয় করেছেন। আবার অক্ষয় খন্না, নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন প্রজন্মের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উ: অভিনয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাটা খুব একটা দামি নয়। আর ভাল অভিনয়ের জন্য বয়সটা কোনও মাপকাঠি নয়। এই ছবিতে আমার মেয়ের চরিত্রে যে শিশুশিল্পী অভিনয় করেছে, তার বয়স ৬ বছর। বুঝতেই পারছেন, প্রজন্মের কথা যদি বলেন, তা হলে সেটা শুরু হচ্ছে ৬ বছর থেকে। আর অভিনেত্রী হিসেবে আমার সব সময় মনে হয়, সকলের থেকেই শেখার আছে। প্রত্যেকের কাছে আমি কিছু না কিছু শিখেছি। আর সকলের সঙ্গে কাজ করেই খুব ভাল লেগেছে।
আরও পড়ুন: সৌরভকে কেক খাওয়ালেন শ্রীদেবী
প্র: ‘মম’ কি সামাজিক দিক দিয়ে একটি প্রাসঙ্গিক ছবি?
উ: এই ছবিটি সকলের জন্য। আজকের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই! আমি বলব, ছবিটির বিষয়বস্তু সর্বকালীন। শিশুদের চেয়েও টিনএজাররা এই ছবিটার সঙ্গে বেশি কানেক্ট করতে পারবে।
প্র: বলিউড অভিনেত্রীরা একটা সময়ের পরে কেরিয়ার ছেড়ে দেন। অভিনেতারা কিন্তু কাজ চালিয়ে যান। কখনও মনে হয়েছে, কর্মরতা মহিলার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মাতৃত্বের বিরোধ আছে?
উ: কেরিয়ার সামলে সন্তান প্রতিপালন করা খুব শক্ত কাজ। প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে। তবু যে মহিলারা সন্তান সামলে কাজ চালিয়ে চান, আমি সব সময় তাঁদের কুর্নিশ জানাই। মহিলারা চাইলে কী না করতে পারেন। (হাসি) কিন্তু কখনও এমন পরিস্থিতি আসে, যখন নিজের স্বপ্নকে পিছনে ফেলে পরিবারকে সময় দিতে হয়। যাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ সদস্যরা থাকেন, তাঁরা সন্তানের দায়িত্ব বড়দের হাতে দিয়ে কেরিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পান। কিন্তু যাঁদের কাছে সেই বিকল্প থাকে না, তাঁরা কিন্তু নিরূপায়। তাঁদের পথে অনেক বাধা। তবু অনেকেই সেই বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যান।
প্র: বলিউ়ডে চিরকালই নায়ক-নায়িকার মধ্যে পারিশ্রমিকের বৈষম্য ছিল। এখনও আছে। ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সিনিয়র হিসেবে কি মনে হয়, বলিউড অভিনেত্রীদের প্রতি ন্যায় বিচার করে?
উ: এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীরা যদি এই নিয়ে কথা বলেন, আমি তাঁদের সঙ্গে আছি। (হাসি)
প্র: খুশি আর জাহ্নবীর মধ্যে কে বেশি আপনার মতো?
উ: জাহ্নবী আমার মতো। খুশি ওঁর বাবার মতো।
প্র: জাহ্নবী আপনার কোন কোন ভাল গুণ পেয়েছেন?
উ: জাহ্নবী খুব সরল, সংবেদনশীল আর আবেগপ্রবণ।
প্র: আর খারাপ গুণ?
উ: ঠিক খারাপ নয়। তবে আমার মনে হয়, ও একটু বেশি সরল, সাদাসিধে। আমি চাই ও আরও একটু স্মার্ট হোক। স্মার্ট বলতে আমি স্ট্রিট স্মার্ট হওয়ার কথা বলছি।
দেখুন মম-এর ট্রেলর
প্র: জন্মসূত্রে আপনি তো দক্ষিণ ভারতীয়। পঞ্জাবি রান্না করতে পারেন?
উ: দক্ষিণ ভারতীয় কোনও রান্না আমি জানি না। পঞ্জাবি রান্না করা তো অনেক দূর! (হাসি)
প্র: তার মানে আপনার হাতের কোনও বিশেষ রান্না নেই যা আপনার মেয়েদের পছন্দ...
উ: সত্যি কথা বলতে, আমার বাচ্চারা রান্না করে, আমি খাই। (হাসি) জাহ্নবী খুব ভাল রাঁধে। ও ভাল কেক, পেস্ট্রি আর কুকিজ বানাতে পারে। (হাসি)
প্র: টুইটারে আপনি লিখেছেন জাহ্নবীর ডেবিউ নিয়ে আপনার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। জাহ্নবীর জন্য অন্য কোনও প্রফেশন ভেবেছিলেন?
উ: একদম না। সন্তানের কাঁধে আমার স্বপ্ন চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে কোনও দিনই ছিলাম না। আজ জাহ্নবী অভিনেত্রী হতে চায়। আমি ওর পাশে আছি। যদি ও ডাক্তার হতে চাইত, তখনও পাশে থাকতাম। এটা ওর স্বপ্ন, আমার নয়। তবে বলিউডে টিকে থাকা শক্ত। পরিশ্রম করতে হয়। অভিভাবক হিসেবে এক বার মনে হয়েছিল, আমার সন্তান কেন ওই কষ্ট করবে। কিন্তু তার মানে এ-ও নয় যে, জাহ্নবীর বিয়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য। মা হিসেবে আমিও চাই আমার সন্তানরা স্বনির্ভর হোক। এমন কাজ করুক
যাতে আনন্দ খুঁজে পাবে। আমার মা যে ভাবে আমার পাশে ছিলেন, আমিও
একই ভাবে আমার মেয়েদের পাশে থাকতে চাই।
প্র: ইন্ডাস্ট্রির কোন দিকটা সম্পর্কে জাহ্নবীকে সতর্ক করে দেবেন?
উ: আমি চাইব, সাফল্য ও ব্যর্থতা দু’টোই যেন সমান ভাবে গ্রহণ করতে শেখে জাহ্নবী।
প্র: এই প্রজন্মের অভিনেত্রীদের ফ্যাশন আইকন আপনি। আপনার ফ্যাশন আইকন কে ছিলেন?
উ: (একটু ভেবে) গায়ত্রী দেবী। অসম্ভব এলিগেন্ট মহিলা।
প্র: শেষ ছবি কী দেখেছেন?
উ: হিন্দি মিডিয়াম। বেশ ভাল লেগেছে।
প্র: কোনও আক্ষেপ আছে?
উ: আমি অদৃষ্টে বিশ্বাস করি। আর নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। (হাসি)