মেয়েরা মেয়েদের কোথায় নামাচ্ছে

‘পিঙ্ক’য়ে অভিনয় করে তাঁর ভয় হয়েছিল নারী স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচার আরও বাড়বে না তো? নতুন বাংলা ছবির মুক্তির আগে অকপট মমতা শঙ্কর। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ভিজিটিং কার্ড রাখেন রান্নাঘরের তাকে। মোবাইলে নম্বর সেভ করেন ভাল-খারাপ লিখে। বরকে ডাকেন দাদা বলে। আনন্দplus-য়ের ফোটো শ্যুটের জন্য তাঁর কাজের টেবিলে লিপস্টিক, মেক আপ ছড়িয়ে বসলেও, শুধু মাথায় গোলাপ লাগিয়ে বললেন, ‘‘আমার মেক আপ-য়ের দরকার নেই। তবে ছবি তোলার সময় প্লিজ ডান দিকটা নেবেন।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

ভিজিটিং কার্ড রাখেন রান্নাঘরের তাকে। মোবাইলে নম্বর সেভ করেন ভাল-খারাপ লিখে। বরকে ডাকেন দাদা বলে। আনন্দplus-য়ের ফোটো শ্যুটের জন্য তাঁর কাজের টেবিলে লিপস্টিক, মেক আপ ছড়িয়ে বসলেও, শুধু মাথায় গোলাপ লাগিয়ে বললেন, ‘‘আমার মেক আপ-য়ের দরকার নেই। তবে ছবি তোলার সময় প্লিজ ডান দিকটা নেবেন।’’

Advertisement

এখনও তা হলে ডান দিক-বাঁ দিক প্রোফাইল নিয়ে খুঁতখুঁতানিটা আছে।

Advertisement

(লম্বা চুল সামনে এনে) আমি খুব খুঁতখুঁতে। ওই প্রোফাইলের বাতিকটা নিয়ে সবাইকে জ্বালিয়েছি। আজও মনে করি কোনও ছবিতে ভাল করে অভিনয় করতে পারিনি। আমি ওভাররেটেড। আমার বাড়িটাই অন্য রকম ছিল। বাবাকে দেখার জন্য লোকে ভিড় করত। আমি ভাবতাম সবার বাবাকে দেখার জন্যই লোকের ভিড় হয়।

অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ‘পিঙ্ক’য়ে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে শট-য়ে এই খুঁতখুঁতানি ছিল?

(চোখ কপালে তুলে) এটা একটা অন্য রকমের অভি়জ্ঞতা। যদিও ছবিটা দেখার পরে আমাকে সবাই বলেছে চরিত্রটা আরেকটু বড় হওয়া উচিত ছিল।

কিন্তু সে তো পরিচালকের ব্যাপার। অমিতাভের সঙ্গে কাজ করেছি, এটাই আমার পাওয়া। উনি আমাকে চিনতেন অনেক দিন। অমিতাভ যখন কলকাতায় থাকতেন তখন নিউ আলিপুরে বন্ধুদের আড্ডায় দেখা হতো। তার পর অনেক দিন দেখা নেই। তাতে কী! এ বার দিল্লিতে আমার ছোট ছেলেকে দেখেই বললেন, ওর চোখ দুটো তোমার বাবার মতো হয়েছে। এত ভদ্র যে, ছোট ছেলের সঙ্গে আলাপ করার জন্য নিজে উঠে দাঁড়ালেন। ভাবা যায়! এক দিন ‘পিঙ্ক’য়ের সেটে ওর সঙ্গে শট দেওয়ার পর আমি চুপি চুপি সুজিত আর টোনিকে বলেছি আমার শটটা ভাল হয়নি। আরেক বার নেবে প্লিজ। উনি সেটা শুনতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় বললেন, ‘‘খুব ভাল হয়েছে, দারুণ হয়েছে। ফাটাফাটি হয়েছে,’’ ফ্লোরে খুব সহজ করে নিতে পারেন কো-অ্যাক্টরকে।

যতই অমিতাভ-অমিতাভ করুন ‘পিঙ্ক’য়ে এত ছোট চরিত্র নিয়ে আপনার ভক্তরা কিন্তু হতাশ।

টোনিকে আমি ভালবাসি তাই ‘না’ করতে পারিনি। তবে ছবিটা শেষ করার পর টোনিকে বলেছিলাম এই ছবির ফল হিতে বিপরীত হবে না তো?

মানে?

আজকাল রাস্তাঘাটে দেখি মেয়েরা বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরোলেও খোলামেলা পোশাক পরে বেরোয়। অনেক সময় তাকানো যায় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাবা-মায়েরা এটা অ্যালাউ করছেন কী করে? আরেকটা বিষয়ও দেখেছি, মেয়েরা সোসাইটি নর্মসকে নস্যাৎ করার জন্য সিগারেট খায়। এই প্রিটেন্ড করা ব্যাপারটার কিন্তু কোনও মানে হয় না। মেয়েরা সুপিরিয়র এটা বোঝানোর জন্য দেখিয়ে দেখিয়ে সিগারেট না খেয়ে অন্য কিছুও করতে পারে।

মেয়ে বলে সিগারেট খাবে না? ছোট পোশাক পরবে না? কী বলছেন!

আমি জানি আমি যা বলছি সেটা শোনার পর লোকে তেড়ে আসবে। বিদেশে কেউ ছোট পোশাক পরলে, সিগারেট খেলে আমরা ফিরেও তাকাই না। কিন্তু সব জায়গার কালচার এক নয়। গ্রামেও তো অনেক মেয়েরা বিড়ি খায়। সিগারেট যদি অভ্যাসের মধ্যে পড়ে, খাক। কিন্তু বেশ করছি সিগারেট খাচ্ছি, এই মনোভাবটায় আমার আপত্তি আছে। সিরিয়ালে কাজের সময় দেখতাম বাচ্চা ছেলেমেয়েরা সব সিগারেট খাচ্ছে। ওদের তো আর বারণ করতে পারতাম না। উঠে চলে আসতাম। পরে ওরা সেটা খেয়াল করে। আমার সামনে আর কোনও দিন খায়নি।

আমার মা বলতেন ছেলেদের সঙ্গে মেশো, আড্ডা দাও কিন্তু নিজের একটা ব্যক্তিত্বের গণ্ডি তৈরি করো যাতে সেটা পেরিয়ে তোমার অনিচ্ছায় কেউ না চলে আসে। শ্রদ্ধার জায়গাটা থাকে। আমার তো মনে হয় ধর্ষণের জন্য অনেক সময় মেয়েরাই দায়ী। মেয়েরা মেয়েদের কোথায় নামাচ্ছে? এটা প্রোগ্রেসি‌ভ মাইন্ডের পরিচয়? আজকাল সবাই ফেসবুকে পাউট করে ছবি দেয়। এটাই নাকি যুগের সঙ্গে তাল মেলানো! এতে করে কী হয়! আমার এ রকম ছবি থাকলে বাবা আমায় অ্যালাউ করত না। আমি নিজেকে এত সহজলভ্য করব কেন? আমার মনে হয়েছিল ‘পিঙ্ক’ এত ভাল একটা ছবি কিন্তু লোকে দেখে কেবল ‘স্বাধীনতা’ বলতে যা ইচ্ছে তাই করা, এটা না বোঝে!

তাপসী পান্নু, কীর্তি কুলহারি এদের সঙ্গে কাজ করে...

(থামিয়ে দিয়ে) এত প্রাণবন্ত ওরা। আমার তো মনে হয় কীর্তি কুলহারির বেস্ট অ্যাকট্রেস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া উচিত। আসলে কী জানেন স্মার্টনেসটা খোলামেলা পোশাক পরে হয় না।

আপনি তো ‘মৃগয়া’য় আদিবাসী মেয়ের চরিত্রটা করার সময় গায়ে শুধু গামছা রেখেছিলেন।

(খুব উত্তেজিত) শুনুন, সিনেমায় গ্রাম্য চরিত্র করতে গেলে মেয়েরা ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরলেও সেফটিপিন দিয়ে লুকিয়ে অন্তর্বাস পরে। যাতে বাইরে থেকে দেখা না যায়। আমি সেই সময় গামছা জড়িয়ে নিয়েছিলাম। কারণ মৃণাল সেন বলেছিলেন কোনও সেফটিপিন ব্যবহার করা যাবে না। গায়ে শুধু গামছা আর নীচে লুঙ্গি, সেটা পরেই আমি জল তুলেছি, কাঠের ঝাঁকা মাথায় নিয়ে হেঁটেছি। আর সেটা করতে আমার কোনও অস্বস্তি হয়নি। আমার বাড়ির লোকও সাপোর্ট করেছিল। কারণ আদিবাসী মেয়ের চরিত্রটা সেটাই ডিমান্ড করে। ওরা ও রকম পোশাকই পরে। সেটাকে সম্মান জানানোর জন্যই আমার ও রকম পোশাক পরা। মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা রোদে পুড়ে কালো হয়েছিলাম — পোশাকের মতোই যখন দরকার হয়েছে সিনেমায় অশ্লীল শব্দও বলেছি। গৌতম ঘোষের ‘দখল’ ছবিটার কথা ভাবুন তো। ও রকমই একটা চরিত্র ছিল। তবে এখনকার বাংলা ছবি ‘সাবালক’ হচ্ছে বা ‘বড়’ হচ্ছে বলে জোর করে যারা যৌনতা নিয়ে আসে সেটা মেনে নিতে পারি না। আমার খুব হাসি পায়। আরেকটু বলি?

‘মৃগয়া’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী ও মমতা শঙ্কর

বলুন না...

আসলে কী জানেন, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক অনেক আগেই বাংলা ছবিকে ‘বড়’ করে দিয়ে গেছেন। তাঁরা যে রকম সাবজেক্ট নিয়ে ছবি করেছেন সেগুলো যে সাহসিকতা দেখিয়েছে তাতেই বাংলা ছবির বিশাল প্রান্তর খুলে গিয়েছে। বক্স অফিসের কথা ভেবে ছবি করেননি। আর এখন? বাংলা ছবি হামাগুড়ি দেয়। আজকের পরিচালকরা মানুষকে উস্কে দিয়ে ব্যবসার জন্য সেক্স আর ভায়োলেন্সকে চামচে করে খাওয়াচ্ছে। কী আর বলব‍! আমি এখন যা বলব সব উল্টো শুনতে লাগবে।

সে কী! কী বলছেন? তা হলে ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’য়ের যে এত সাফল্য?

শিবু-নন্দিতার (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়) ছবিও খুব ভাল লাগে। তবে ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’য়ের চেয়ে ‘ইচ্ছে’ বেশি ভাল লেগেছিল। মনে আছে ‘ইচ্ছে’ দেখে আমি আর ঋতুপর্ণ (ঋতুপর্ণ ঘোষ) টানা দু’ ঘণ্টা ছবিটা নিয়ে ফোনে কথা বলেছিলাম। ভাল কাজ নিশ্চয়ই হচ্ছে।

আপনি তো সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’য়ে কাজ করলেন। তা হলে?

(থামিয়ে) দেখুন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শব্দ’, ‘খাদ’ আমার খুব প্রিয় ছবি। সৃজিতের ‘জাতিস্মর’, এমনকী ‘রাজকাহিনী’ খুব ভাল লেগেছে আমার। কিন্তু বাংলা ছবি নিয়ে কেউ যদি খুব পাকামো করে নিজেকে মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটক ভাবেন সেটা সহ্য হয় না।

কারা পাকামো করে? নামটা বলুন না।

আমি নাম বলব না।

এত কথা বললেন আর নাম বলবেন না?

না, সবাই জানে। তবে অনেকেই বলেন মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায় এখন ফসিল হয়ে গেছেন। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি।

আপনাকেও তো বাংলা ছবিতে আজকাল আর দেখা যায় না।

শুনুন, আমার অ্যাম্বিশন নেই। মিশন আছে। সেই মিশনে আমি ছাত্রছাত্রী তৈরি করতে চাই।

আপনি বেশ রেগে আছেন!

প্রয়োজনে রাগতে হয়। ‘আগন্তুক’য়ে একটা সংলাপ ছিল না উৎপল দত্তের গলায় — ‘‘কেউ মাতব্বরি করছে দেখলে সহ্য করতে পারি না।’’ আমারও এখন সেই হাল। একটা সময় ছিল বাঙালি আর নারী বললে নিজের গর্ব হতো। এখন লজ্জা করে। বাঙালি বলে এখন আর কিছু নেই। আর মেয়েরাও স্বাধীনতার নামে যা করছে মেনে নিতে পারি না।

দেওয়ালে দেখছি মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে আপনার ছবি। সঙ্গে শশী কপূর, শাবানা আজমি। এটা কোথায়?

এটা মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ছবি। আমি আর মিঠুন ‘মৃগয়া’র জন্য গিয়েছিলাম। আর শশীজির মতো তো লোক হয় না।

মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে? এক সময় তো আপনারা দারুণ বন্ধু ছিলেন।

ও তো অসুস্থ। ফোনে ওর বোনেদের কাছ থেকে খবর পাই।

সে কী, উনি এত অসুস্থ। আপনি ওঁর খোঁজ নেন না?

ওর বোনেদের কাছে তো খবর পাই। আলাদা করে ফোন করার কী আছে? এত কাজের মধ্যে সময় হয়ে ওঠে না।

বেশ কিছু দিন আগে চ্যানেলের গেম শো-য়ে মিঠুন আর আপনি একসঙ্গে এসেছিলেন।

হ্যাঁ। ওটা বেশ কিছু দিন আগে। ফ্লোরেই যা পিছনে লাগছিল ও আমার। জানেন, মিঠুনের মুখেই জানতে পারি সত্য সাঁইবাবার কথা। ও সত্য সাঁইবাবাকে নিয়ে দু’টো ভজন লিখেছিল। সেটা আমায় পড়ে শুনিয়েছিল। ওই আমাকে ওর এক আত্মীয়র বাড়িতে সত্য সাঁইবাবার ভজন শোনাতে নিয়ে যায়। তার পর থেকে তো জীবনটাই বদলে গেল। সত্য সাঁইবাবার আশীর্বাদে আমার জীবনে এত ভাল লাগা। তৃপ্তি। সত্য সাঁইবাবাকে যত ভরসা করি তত পাই।

সিনেমায় কম কাজ করেছেন। কিন্তু সিরিয়ালে তো এক সময় প্রচুর কাজ করেছেন। ‘তিথির অতিথি’, ‘খেলা’। আজও অনেকে আপনাকে ‘জন্মভূমি’র পদ্মাবতীই ভাবে।

হ্যাঁ, সিরিয়াল যা পরিচিতি দিয়েছে ভাবা যায় না। সিরিয়ালের জন্য গ্রামেগঞ্জে এত মানুষ আজও আমায় চেনেন।

কিন্তু সেই সিরিয়ালেও তো আপনি এখন নেই।

আমি পুরোপুরি ডান্স অ্যাকাডেমিতে মন দিয়েছি। আর খুব বেছে, চরিত্র পছন্দ হলে কাজ করি। ভাল চরিত্র পেলে সিনেমা বা সিরিয়াল দু’টোই করব।

‘অন্তর্লীন’ ছবির দৃশ্য

সেই কারণেই কি ‘অন্তর্লীন’ করলেন?

হ্যাঁ। পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য যখন গল্পটা নিয়ে এলেন, ও রকম একটা থ্রিলার শুনে খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু ওই চরিত্রের জন্য বেশ কয়েকটা নাম সাজেস্ট করি। কারণ আটানব্বই বছর বয়সের মা-কে একা ফেলে রেখে কলকাতার বাইরে শ্যুট করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ও বলেছিল, আমাকে বাদ দিয়ে ছবিটা হবে না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেই দিনটার কথা যে দিন মানিক কাকা (সত্যজিৎ রায়) বলেছিল ‘‘তুই না করলে ‘আগন্তুক’ ছবিটা করব না।’’ খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি। অরিন্দমকে হ্যাঁ বলে দিই। এই ছবিতে আমার ছেলে রাতুল মিউজিক করছে, সে জন্য ছবিটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
খুব বুদ্ধিমান ছেলে অরিন্দম। প্রথম কাজ করছে বোঝাই যায়নি। ‘আবহমান’য়ের পর এ রকম একটা চরিত্র পেলাম। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে।

আপনাদের তো কসৌলি-তে শ্যুটিং হয়েছে।

খুব ভাল ইউনিট ছিল। খরাজ, সম্পূর্ণা ভাল কাজ করেছে। আরও কিছু চরিত্র যারা দিল্লির নাট্যজগৎ থেকে এসেছে, তারাও দারুণ কাজ করেছে। যেহেতু থ্রিলার ছবি, চরিত্রটা পুরো বলছি না। এ রকম চরিত্র বাংলা ছবিতে আগে কোনও দিন করিনি। ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে ২৫ নভেম্বর।

অনেকেই বলেন আপনার স্বামীর মতো লয়াল স্বামী পাওয়া যায় না। যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়লেন বউ-য়ের ডান্স অ্যাকাডেমির জন্য।

হ্যাঁ। ওই যে বললাম ঈশ্বরের আশীর্বাদ।

কিন্তু স্বামীকে বাপিদা বলেন কেন?

(প্রচণ্ড হাসি) ও তো আমার বন্ধুর দাদা ছিল। তাই দাদা বলতাম। সেই অভ্যাসটা এখনও আছে। আর যদি ভি়ড়ের মধ্যে ওকে হ্যাগো বা শুনছ বলে ডাকি, দেখেছি সব স্বামী সাড়া দেয়। শুধু আমার স্বামী দেয় না। অগত্যা...

লোকে বলে উদয় শঙ্করের লেগ্যাসি মমতা শঙ্করই একমাত্র বহন করছেন। তনুশ্রী শঙ্কর নয়। এটা কি সত্যি?

দেখুন, আমরা ‘উদয়ন’য়ে যে ধারা মেনে নাচ শেখাই সেটা মা-র থেকেই পেয়েছি। বাবার ধারাটাকেই রেখেছিলেন মা। আমিও সেটাই মেনটেন করছি। আমার বৌদি তনুশ্রী(শঙ্কর)-য়ের ধারাটা সম্পূর্ণ আলাদা। বাবার নাচের স্টাইল একটা দর্শন। আমি যত গভীরে যাচ্ছি তত জীবনকে নতুন করে চিনছি। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলতেন এ দেশের চার ব্যক্তিত্ব। রাজনীতির গাঁধী, সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ, ধর্মে বিবেকানন্দ আর সংস্কৃিততে উদয়শঙ্কর।

মমতা শঙ্করের নামে ‘উদয়ন কলাকেন্দ্র’য় এত ছাত্র-ছাত্রী ঠিকই। কিন্তু অনেকে বলেন আপনি নিজে তো শেখান না...

আমরা কিন্তু নাচের ক্লাস নিই না। আসলে প্রত্যেক দিন ওয়ার্কশপ করি। বাচ্চাদের যেমন আমরা একটা প্রপস, অ্যালফাবেট দিয়ে দিই। ওরা নাচের ফর্মে এক্সপ্রেস করে। এ ভাবে নিজেরা ভাবতে শেখে। রিয়্যালিটি শো-য়ের নামে এখন যা নয় তাই হচ্ছে। ওখানে রিয়েল কিছু থাকে না। আমাদের এখানে প্রত্যেকটা ক্লাস হল আসল রিয়্যালিটি শো। উদয় শঙ্করের মেয়ে হিসেবে নয়, একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমার মনে হয়, এই ডান্স ফর্মটা একদিন সারা বিশ্বকে রুল করবে। আমার আটানব্বই বছরের মা-য়ের (অমলা শঙ্কর) কথাতেই বলি, উদয়শঙ্করকে বাঙালি আজও চেনেনি। আসলে বাঙালির বাঙালিকে খোঁজার, চেনার ইচ্ছেটাই মরে গেছে।

আপনি কী ভাবে থাকতে চান?

আমার বা আমার ভাইয়ের জন্য বাবা-মা বাড়ি, গাড়ি, জমি কিছুই রেখে যায়নি। যেটা দিয়ে গেছে সেটা মূল্যবোধ। ওটাই আমাদের পুঁজি। সেই পুঁজি নিয়েই এই যুদ্ধ, হানাহানির সময়ে অন্তহীন চলার পথে নাচ আর অভিনয় দিয়ে পূর্ণ মানুষ তৈরির ব্রত নিয়েছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement