অমর্ত্য রায় ( বাঁ দিকে )। আরিয়ান ভৌমিক ( ডান দিকে )।
বছর পাঁচেকের অপেক্ষার অবসান। মুক্তি পাচ্ছে ‘ময়দান’। অজয় দেবগন অভিনীত এই ছবিতে টলিপাড়ার কয়েক জন অভিনেতা রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অন্যতম রুদ্রনীল ঘোষ। এই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শোনালেন অমর্ত্য রায় ও আরিয়ান ভৌমিক।
গৌরচন্দ্রিকা
এর আগে ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘২২ ইয়ার্ডস’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমর্ত্য। অন্য দিকে, ফুটবলের প্রেক্ষাপটে তৈরি বাংলা ছবিতে আগে অভিনয় করেছেন আরিয়ান। তবে এই ছবির প্রস্তুতির জন্য নিজেদের যে নিংড়ে দিতে হয়েছে, সে কথাও জানালেন তাঁরা। ২০১৯ সালে অডিশনের পর নির্বাচন। শুরু হয় ‘ময়দান’-এর প্রস্তুতি।
প্রস্তুতি পর্ব
অমর্ত্য বা আরিয়ান, কেউই পেশাদার ফুটবলার নন। কিন্তু জানালেন, ছবির পরিচালক অমিত শর্মা ফুটবল নিয়ে কোনও খুঁত রাখতে চাননি। তাই শুরু থেকেই আদা-জল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়তে হয়েছে। আরিয়ান বললেন, ‘‘আমাদের টিমে একমাত্র আমিই ফুটবলার নই। বাকিরা সবাই আগে একটু-আধটু ফুটবল খেলেছে। তাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জটা সব থেকে বেশি ছিল।’’ কলকাতায় প্র্যাকটিসের পাশাপাশি মুম্বইয়ে নিয়মিত ফুটবলের ওয়ার্কশপের মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছে অভিনেতাদের। অমর্ত্যের কথায়, ‘‘ট্রেলারে সবটা দেখানো হয়নি। ছবিতে যে ভাবে খেলাটাকে তুলে ধরা হয়েছে, দেখলে দর্শক রোমাঞ্চিত হতে বাধ্য।’’
চুনী বনাম নেভিল
ছবিতে ফুটবলার চুনী গোস্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমর্ত্য। অন্য দিকে, নেভিল ডি’সুজ়ার চরিত্রে আরিয়ান। দুই চরিত্রের ভার যে অনেকটাই বেশি, সে কথা শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁরা। সেই মতো দীনেশ নায়ারের অধীনে প্রশিক্ষণ। অমর্ত্য বললেন, ‘‘আমি যে চুনী গোস্বামীর চরিত্রে, শুরুতে বিশ্বাস করতে পারিনি। তার পর ঘোর কাটতেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।’’ আরিয়ানও বিষয়টা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘নেভিল ডি’সুজ়া দেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এ রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করে আমি সম্মানিত।’’ পর্দায় চুনী গোস্বামী হয়ে ওঠার জন্য অমর্ত্য নিজের মতো করে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘আমরা জানি, চুনী স্যর দারুণ ড্রিব্ল করতেন। ওঁর কথা মাথায় রেখে আমি আলাদা করে ওঁর কিছু বৈগ্রহিক স্টাইল রপ্ত করেছিলাম।’’ আরিয়ান যেমন নিয়মিত ফুটবল অভ্যাসের পাশাপাশি নেভিল প্রসঙ্গে ইন্টারনেটেও পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচুর ফুটবল ট্রায়াল ছিল। তখন আমি সিরিয়ালে অভিনয় করছি। তাই এখানে কী রকম ফুটবল প্র্যাকটিস করছি, সেই ভিডিয়ো পর্যন্ত ওদের পাঠাতে হয়েছিল।’’
পথে হল দেরি
অতিমারি, মুম্বইয়ের সেট ভেঙে যাওয়া কিংবা ভিএফএক্স— বিভিন্ন কারণে ‘ময়দান’-এর মুক্তি পিছিয়েছে। কিন্তু, সময়ের সঙ্গে ইউনিট একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করেন অমর্ত্য ও আরিয়ান। অমর্ত্য বললেন, ‘‘ফুটবল টিমের সদস্যেরা তো নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। ট্রেলার প্রকাশের দিনেও মুম্বইয়ে ওদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। প্রত্যেকেই খুব খুশি।’’ অন্য দিকে, আরিয়ান বললেন, ‘‘আমি ছবির শুরুর দিকের ম্যাচে রয়েছি। আমাদের দলের সদস্যদের সঙ্গে খুব ভাল বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। ছবিটা শেষ হওয়ার পর রীতিমতো মনখারাপ হয়েছিল।’’ ছবিতে অমর্ত্য-আরিয়ান একসঙ্গে শুট করেননি। কিন্তু তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
‘রহিম’ অজয় যখন অনুপ্রেরণা
ছবিতে ভারতীয় ফুটবল কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অজয় দেবগন। তিনিই এই ছবির ভরকেন্দ্র। লখনউতে সেটে অজয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা অমর্ত্যের। বললেন, ‘‘এত বড় তারকাকে দেখব, আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। কিন্তু মাঠে দেখে ওঁকে আমার তারকা বলে মনেই হয়নি।’’ কলকাতায় ছবির শুটিংয়েই পায়ে চোট পেয়েছিলেন অজয়। অমর্ত্য বললেন, ‘‘ওই চোট নিয়েও উনি যে ভাবে মাঠে শট দিলেন, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ওই অবস্থাতেও আমাকে একদম কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন।’’ তার পর? অমর্ত্য বললেন, ‘‘আমি ওঁকে বলি যে, কী ভাবে করলেন! আমার দিকে তাকিয়ে সেই পরিচিত ভঙ্গিতে হেসেছিলেন অজয় স্যর।’’
আরিয়ানের মতে, অজয়ের মতো বড় তারকার মাথা প্রচন্ড ঠান্ডা। বললেন, ‘‘একটা কঠিন শট বার বার টেক করা হচ্ছিল। বিভিন্ন কারণে ইউনিটের প্রায় সকলেই ধৈর্যচ্যুত। কিন্তু অজয় স্যরকে দেখেছিলাম ঠান্ডা মাথায় শট দিয়ে যাচ্ছেন।’’ অজয় নিজেই ছবির তরুণ অভিনেতাদের অনুপ্রেরণার কারণ হয়ে উঠেছিলেন বলে মনে করেন আরিয়ান। প্রথম দিনেই অজয়ের সঙ্গে আরিয়ানের শট। বললেন, ‘‘ইউনিটের প্রত্যেকেই উত্তেজিত। হঠাৎ দেখলাম, চুপচাপ এসে বসে পড়েছেন। সত্যি বলছি, একদৃষ্টিতে ওঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।’’ আরিয়ানের সঙ্গে একটা শটের টেক অজয়ের পছন্দ না হওয়ায় তিনি আরিয়ানকে বলেছিলেন, ‘‘দুঃখিত, আরও একটা টেক করব।’’ আরিয়ান বললেন, ‘‘আমি হেসে ফেলেছিলাম। ওঁর মাপের অভিনেতা নাকি আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করছেন!’’ ফ্লোরে বড় অভিনেতার ব্যবহার এবং অভিনয়দক্ষতা যে নতুনদের মধ্যে ছবির ধ্রুবপদ বেঁধে দেয়, তা নিয়ে একমত বাংলার দুই তরুণ অভিনেতা।