তাঁকে বিয়ে করে ঘরকন্না করবেন বলে কেরিয়ারের মধ্যগগনে অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান কাজল। নব্বইয়ের দশক থেকে বলিউডের প্রথম সারিতে থাকা অজয় দেবগণের মধ্যেই জীবনসঙ্গী হওয়ার গুণ খুঁজে পেয়েছিলেন তনুজা-কন্যা। ইন্ডাস্ট্রিতে পাওয়ার কাপলদের মধ্যে অন্যতম এই জুটির দাম্পত্যেও এসেছে যথেষ্ট টানাপড়েন।
অজয় যখন প্রথম অভিনয়ে এসেছিলেন, অনেকেই বলেছিলেন তিনি বেশি দিন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে পারবেন না। কারণ তাঁর সমসাময়িকদের তুলনায় তিনি পিছিয়ে ছিলেন নায়কোচিত চেহারার দিক দিয়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব দিক দিয়ে নিজেকে পরিণত করে তোলেন তিনি।
অভিনয় এবং চেহারা, দু’দিকেই শুরুর অজয়ের সঙ্গে বর্তমান নায়কের আকাশপাতাল পার্থক্য। তবে কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকেই অজয়ের সঙ্গী হয়েছে বিতর্ক। একাধিক নায়িকার সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে শোনা গিয়েছে প্রেমের গুঞ্জন।
ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার পর অজয়ের সঙ্গে রবিনা টন্ডনের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তাঁদের সম্পর্ক ছিল ক্ষণস্থায়ী এবং শেষ হয়েছিল চরম তিক্ততায়। ‘সুহাগ’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ের সুবাদে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অজয়-করিশ্মার। তার পরেই নাকি অজয়ের জীবনে ‘প্রাক্তন’ হয়ে যান রবিনা।
বিচ্ছেদের পরে এক সাক্ষাৎকারে রবিনা জানিয়েছিলেন, অজয়ের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি নাকি আত্মঘাতীও হতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, অজয় নাকি তাঁকে প্রেমপত্রও লিখেছিলেন। পরে এই সাক্ষাৎকার ঘিরে ক্ষোভ উগরে দেন অজয়। রবিনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
অজয় বলেন, তাঁর বোনের বান্ধবী ছিলেন রবিনা। সেই সূত্রেই আলাপ। তা ছাড়া দেবগণ ও টন্ডন পরিবারের মধ্যে হৃদ্যতা ছিল বলেও তাঁর দাবি। কিন্তু প্রেম এবং প্রেমপত্র, সবই রবিনার মনগড়া কল্পনা বলে দাবি অজয়ের। আত্মহত্যার দাবিও রবিনা প্রচারের আলোয় থাকবেন বলে করেছেন, অভিযোগ অভিনেতার।
অজয়-করিশ্মা জুটি ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে নব্বইয়ের দশকের অন্যতম চর্চিত বিষয়। সে সময় করিশ্মা ছিলেন বলিউডের একচ্ছত্র নায়িকা। অজয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি অভিনয় করেছিলেন বেশ কিছু সুপারহিট ছবিতে। শোনা যায়, তাঁদের প্রেম শুধু সিনেমার পর্দাতেই থেমে ছিল না। বরং, তা পল্লবিত হয়েছিল বাস্তবেও।
তবে প্রেম থাকুক, বা না থাকুক, অজয়-করিশ্মা সম্পর্কও শেষ হয়েছিল তিক্ততায়। কারণ করিশ্মাকে ছেড়ে অজয়ের মন মজেছিল কাজলে। যদিও অজয় বা করিশ্মা, দু’জনের কেউ তাঁদের প্রেমের কথা স্বীকার করেননি।
করিশ্মা তো এক সাক্ষাৎকারে বলেই ছিলেন, অজয়ের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বের মনোভাব ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি জানেন না অজয় তাঁর সম্বন্ধে কী ভাবেন। অজয় কোনও দিন তাঁকে বিশেষ অনুভূতি নিয়ে কিছু বলেননি বলেই দাবি করেন করিশ্মা। তবে তাঁদের প্রেম নিয়ে গুঞ্জনের জেরে তাঁকে যে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সে কথাও জানাতে ভোলেননি কপূর-কন্যা।
কোথাও কোথাও তো এমনও দাবি করা হয়েছিল, তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে করিশ্মার বক্তব্য ছিল, অত কম বয়সে তিনি কেরিয়ার ছাড়া বিয়ের কথা ভাবতেই পারেন না। তবে, তিনি মুখে যা-ই বলুন না কেন, শোনা যায়, অজয়ের হৃদয়ে কাজলের রাজপাট তিনি মেনে নিতে পারেননি।
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহল বলে, মনীষা কৈরালা এবং তব্বুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল অজয়ের। কিন্তু মনীষা এবং অজয়ের মাঝেও শেষ অবধি জায়গা করে নেয় তিক্ততা। এতটাই চরমে পৌঁছয় সেই তিক্ততা, অজয় বলেছিলেন তিনি মনীষা এবং রবিনার সঙ্গে অভিনয়ও করতে চান না।
কাজলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পরেই অবশ্য অজয়ের জীবনে গুঞ্জনস্রোত বন্ধ হয়। তবে কাজলের সঙ্গে অজয়ের অন্তরঙ্গ হতে সময় লেগেছে অনেকটাই। পরে অজয় নিজেই বলেছেন প্রথম আলাপে কাজলকে তাঁর উদ্ধত এবং বাচাল তরুণী বলে মনে হয়েছিল।
কাজলেরও প্রথম আলাপে অজয়কে আহামরি কিছু মনে হয়নি। কিন্তু অন্যরকম অনুভূতি শুরু হয়ে ‘হালচাল’ ছবির শুটিংয়ে। কাজল নিজেই জানিয়েছেন, সে সময় তিনি অন্য কারও সঙ্গে ডেট করছিলেন। সেই সংক্রান্ত কথাও হত অজয়ের সঙ্গে। কিন্তু ক্রমশ বুঝতে পারলেন, তাঁর হৃদয়ে জায়গা সাধারণ বন্ধু থেকে ‘বিশেষ’ হয়ে উঠেছে।
দু’জনে কেউ কাউকে সে ভাবে প্রোপোজ করেননি। বিয়ে নিয়ে বিশেষ কথাও হত না। কিন্তু কোথাও যেন মনে হয়েছিল, তাঁদের সম্পর্কের পরিণতি বিয়ে-ই। দীর্ঘ প্রেমপর্বের পরে অজয়-কাজল বিয়ে করেন ১৯৯৯ সালে। নিজের সাফল্যের পিছনে কাজলের অবদানকে কুর্নিশ করেন অজয়।
কিন্তু অজয় ও কাজলের সম্পর্কেও অশান্তির মেঘ ছায়া ফেলেছিল। অশান্তির সূত্রপাত ‘ওয়ন্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই’ ছবি ঘিরে। এই ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অজয়ের। গুঞ্জন, দু’জনের অন্তরঙ্গতা নাকি পেশাদারিত্বের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল ব্যক্তিগত পরিসরেও।
এই ঘনিষ্ঠতা মোটেও ভাল ভাবে নেননি কাজল। তিনি নাকি হুমকি দিয়েছিলেন, কঙ্গনার সঙ্গে অজয়ের ঘনিষ্ঠতা বেশি দূর গড়ালে তিনি ছেলে যুগ এবং মেয়ে নাইসাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। স্ত্রীর হুমকির কাছে নাকি নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন অজয়। এর পর অজয়-কঙ্গনার ঘনিষ্ঠতা বেশি দূর গড়ায়নি।
অজয় এবং কাজল দু’জনেই সম্পর্কে খোলা জায়গা থাকায় বিশ্বাসী। ফলে নিজেদের বন্ধুদের চাপিয়ে দেননি অন্যদের উপরে। কাজলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাহরুখ খানের সঙ্গে যেমন অজয়ের কোনও বন্ধুত্ব নেই। তবে তাঁরা দু’জনে দু’জনের শত্রুও নন। এ কথা নিজেই জানিয়েছেন কাজল।
শাহরুখ-কাজলের অনস্ক্রিন রোমান্সের মতো অফস্ক্রিন বন্ধুত্বও বলিউডে বহুচর্চিত বিষয়। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাঁদের দাম্পত্যে কখনও মনোমালিন্য এনেছে কি না, সে বিষয়ে অজয় বা কাজল কোনও দিন কিছু বলেননি।