সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মহত্যার পর থেকে স্বজনপোষণের পাশাপাশি বলিউডে সাফল্য পাওয়া বা ব্যর্থ হওয়া নিয়ে চর্চাটা উঠে আসছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক করে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন সুশান্ত। তার পর ‘রাবতা’, ‘শোন চিড়িয়া’-র মতো ছবিগুলি প্রত্যাশিত সাড়া ফেলতে পারেনি। ‘ছিছোরে’ কিছুটা হলেও সাফল্য পেয়েছিল। তবুও সুশান্তকে নিয়ে সেই উন্মাদনা কিছুটা হলেও থিতিয়ে গিয়েছিল।
সুশান্তের মতো বলিউডে এ রকম একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা কেরিয়ারের শুরুর দিকে সাফল্যের শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু ক্রমেই সেই সাফল্য তাঁদের সঙ্গ ছাড়ে। আস্তে আস্তে লাইমলাইট থেকেও সরে যেতে থাকেন তাঁরা।
এই তালিকায় শুরুতেই আসবে বিবেক ওবেরয়ের নাম। বলিউডে আবির্ভাবেই সাড়া জাগিয়েছিল তিনি। ‘কোম্পানি’ ও ‘সাথিয়া’ ছবির পর সবাই ভেবেছিলেন বলিউড পেয়ে গেল এক নতুন রত্ন।
কিন্তু তার পর থেকেই বলিউডে একাধিক ব্যক্তিগত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে থাকেন তিনি। আস্তে আস্তে তার স্টারডমও ফিকে হতে থাকে। যত তাড়াতাড়ি তিনি উঠে এসেছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তার থেকেও দ্রুত হারিয়ে যান তিনি।
অভয় দেওল। ইমতিয়াজ আলির ছবি ‘সোচ না থা’ দিয়ে বলিউডে আগমন ঘটে তাঁর। ‘দেব ডি’-র মতো ছবিতে মুখ্যচরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
শুরুর দিকে তাঁর অভিনয় নিয়ে চর্চা হত বলিউডি দুনিয়ায়। কিন্তু তার পর একাধিক ছবিতে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেলেও, তাঁকে নিয়ে সেই মাতামাতি আর নেই। সময়ের সঙ্গে অভয়ের গ্ল্যামার যেন কিছুটা মিইয়ে গিয়েছে। কেরিয়ার নিয়ে নিজের হতাশার কথাও একাধিক বার বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
২০০০ সাল। দিয়া মির্জা তখন সদিয মিস এশিয়া প্যাসিফিক খেতাব পেতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। হইচই পড়ে যায় তাঁকে নিয়ে। সে সময় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, লারা দত্তাদের সঙ্গে তুলনা হত তাঁর।
‘রহেনা হ্যায় তেরে দিল মে’ ছবি দিয়ে বলিউডে আগমন ঘটে তাঁর। এর পর একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সঞ্জয় দত্তের বায়োপিকে স্ত্রীয় মান্যতার ভূমিকাতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু তবুও সেই নাম-ডাক এখন আর নেই দিয়ার।
ববি দেওল। ‘বরসাত’ ছবিতে অভিনয় রাতারাতি তাঁকে স্টার বানিয়ে দেয়। এর পর অনেক ছবিতেই বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু ববিকে নিয়ে উন্মাদনা অনেক দিন আগেই শেষ হয়েছে।
স্টারজম হারানোর জেরে হতাশা যে তাঁকে গ্রাস করেছিল, এ কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। সেই হতাশা কাটাতে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন ববি।
‘মস্ত’ ছবিতে প্রথম দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই ছবি হিট হতেই আফতাব শিবদাসানির নাম নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। বলিউডে পা রেখেই বেশ কয়েকটি সিনে অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন তিনি।
কিন্তু তাঁর পরই ফিকে হতে থাকেন তিনি। এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজা হওয়ার পর যদি গুরুত্ব না থাকে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমারও মনে হত, বলিউড দুনিয়ায় আমিই বোধহয় সব থেকে অপ্রয়োজনীয়।’’ পুণের নাইট ক্লাবে ড্রাগ নিতে গিয়ে ধরাও পড়েছিলেন তিনি।
ইমরান খান। আমির খানের ভাগ্নে হিসাবে বলিউডি দুনিয়ায় বেশ অল্প সময়ের তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে। শিশু শিল্পী হিসাবেও বলিউডে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘জানে তু... ইয়া জানে না’ ছবি দিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করে। আরও কয়েকটি ছবিতেও দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু ইমরান খানকে নিয়ে আলোচনা ক্রমেই কমে আসে সিনেমা জগতে।
পরভিন ববি। সত্তরের দশকে বলিউড কাঁপিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর ফ্যাশন সে সময়ের ট্রেন্ড ঠিক করত।
‘মজবুর’, ‘দিওয়ার’-এর মতো হিট ছবির নায়িকা তিনি। কিন্তু এ রকম গ্ল্যামারাস অভিনেত্রীর জীবনেও বাসা বেঁধেছিল একাকিত্ব। শেষ জীবনে তাঁর মাদকাসক্তির কথাও জানাজানি হয়ে যায়। তাঁর আত্মহত্যার কারণ নিয়ে এ জন্য হইচই হয়েছিল বিস্তর।
ফারদিন খান চিত্র পরিচালক ফিরোজ খানের ছেলে ফারদিন খান। ‘প্রেম আগান’ ছবি দিয়ে বলিউডের আঙিনায় পা রাখেন তিনি। ওই ছবির জন্যই পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
তার পর বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু আগমনের শুরুতেই তাঁকে নিয়ে যেমন উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা কিছুদিনের মধ্যেই থিতিয়ে যায়। হতাশা তাঁকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। মুম্বইয়ে মাদক সমেত এক বার ধরাও পড়েছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে একের পর এক ছবিতে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। বহু ছবিতে অভিনয় করে খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিলেন। তিনি জুহি চাওলা।
কিন্তু বিয়ের পরই কেমন যেন হারিয়ে যান তিনি। এ ব্যাপারে এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগে মনে হত পৃথিবী যেন আমাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সূর্য যেন শুধু আমার জন্যই উদয় হয়েছে। এখন সব বদলে গিয়েছে।’’