বিনীত
মেডিক্যালের ছাত্র, খেলাধুলোতেও দক্ষ। তবু চেয়েছিলেন অভিনেতা হতে। টানা আঠেরো বছর হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রাগল করেছেন। তার পরে শিকে ছিঁড়েছে অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ‘মুক্কাবাজ়’ ছবির দৌলতে। বড় পর্দার পাশাপাশি শাহরুখ খানের প্রযোজনায় দু’টি ওয়েব সিরিজ়ও করে ফেলেছেন বিনীত কুমার সিংহ। তাঁর সাম্প্রতিক রিলিজ় ‘বেতাল’ প্রশংসিত না হলেও, ভিন্ন ধারার কাজের জন্য নজর কেড়েছেন অভিনেতা।
‘মুক্কাবাজ়’ ছবির একাধিক গল্পকারের মধ্যে ছিলেন বিনীত এবং তাঁর বোন মুক্তি। অভিনেতা বলছিলেন, ‘‘আমি ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘বম্বে টকিজ়’, ‘আগলি’ ছবিগুলি করার পরে প্রশংসা পেয়েছিলাম। কিন্তু যে ধরনের মুখ্য চরিত্রে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম, সেটা পাচ্ছিলাম না। আমার জেদ সাংঘাতিক। করব মনে করলে করেই ফেলি। তাই নিজেই ‘মুক্কাবাজ়’-এর গল্প লিখলাম।’’ ওই ছবি রিলিজ়ের পরে প্রায় ছ’মাস ধরে শুধু স্ক্রিপ্টই শুনেছেন তিনি।
তার পরে বড় পর্দায় ‘সন্ড কী আঁখ’-এ তাঁকে দেখা গিয়েছে। সুমন ঘোষের ‘আধার’-এ তিনি গ্রাম্য চরিত্রে। বড় পর্দায় গ্রামের মেহনতি মানুষ আর ডিজিটালে অ্যাকশন চরিত্রে... এই ইমেজ কি সচেতন ভাবেই গড়ে তুলেছেন? বিনীতের কথায়, ‘‘আমার কেরিয়ার সবে শুরু হয়েছে। গ্রামের চরিত্রের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ‘গোল্ড’-এর মতো ছবিও করেছি। সেখানে চরিত্রটি বড় শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের। যেমন চরিত্র-চিত্রনাট্য পছন্দ হয়, তেমন করি।’’
চরিত্রের ধাঁচে নিজেকে পুরোপুরি গড়ে তুলতে বিনীত পরিশ্রম করেন। ‘‘মুম্বইয়ে এত দিন ধরে রয়েছি। আমার সঙ্গে অনেকেই এসেছিলেন অভিনেতা হতে। তাঁরা ফিরে গিয়েছেন বা পেশা পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু এই ক’বছরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা আমার ব্যাঙ্ক। আমি যেখানে যা দেখেছি, সেটা যে কোনও ধরনের চরিত্র বুঝতে আমাকে সাহায্য করে।’’
‘আধার’-এর শুটিংয়ে পরিচালক সুমন ঘোষের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে উঠেছে। ‘‘সুমনদা আমার বড় দাদা, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধুও। শিক্ষক মানুষ, তাই ভাল বোঝাতে পারেন। আবার ইম্প্রোভাইজ় করার স্বাধীনতাও দিয়েছিলেন।’’ তবে চরিত্রের সঙ্গে আপস করেন না বিনীত। ‘‘ছবিতে চরিত্রটি তো বাঙালির নয়। সুমনদার সঙ্গে দেখা করতে সেটে ওঁর অনেক বাঙালি বন্ধুই আসতেন। কিন্তু আমি বাংলা বলতাম না,’’ হাসতে হাসতে বললেন অভিনেতা।
‘বেতাল’-এ বিক্রম সিরোহির চরিত্রটির জন্যও তিনি প্রশংসিত। ‘‘ইউনিফর্ম পরিহিত কোনও চরিত্র হলেই স্টিরিয়োটাইপ করে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু বিক্রম যতটা শক্তিশালী, ততটাই ভঙ্গুর,’’ বলছিলেন বিনীত। সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট পেয়েছেন খোদ প্রযোজক শাহরুখ খানের কাছ থেকেই। ‘‘তখন ‘বেতাল’-এর শুটিং চলছিল। আর ‘বার্ড অব ব্লাড’ রিলিজ় করেনি। শাহরুখ স্যর প্রথমেই বললেন, ‘বার্ড...’-এ আমার কাজ অসাধারণ লেগেছে ওঁর। উনি এত বড় তারকা, তবু কি বিনয়ী! ওঁর সঙ্গে সব ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়। এডিট রুমে বসে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও শোনালেন,’’ নস্ট্যালজিক বিনীত।
‘আধার’ ছাড়াও তাঁর হাতে রয়েছে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল’ ছবিটি। আঠেরো বছর পরে তাঁর কেরিয়ার শুরু হলেও ময়দানে ভিড় কম নেই। ভিকি কৌশল, রাজকুমার রাও, বরুণ ধওয়নের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই? ‘‘সকলেই বন্ধু। কাজ ভাল লাগলে আমি ফোন করে ওদের বলিও। এত বছর যখন স্ট্রাগল করছিলাম, কে এগিয়ে গেল ভাবতে গেলে ভেঙে পড়তাম। আমার লড়াই ভিতরে, নিজের সঙ্গে। বাইরের কেউই আমাকে বিচলিত করে না,’’ সাফ জবাব তাঁর।
লকডাউনে বোনের সঙ্গে বসে লেখালিখি করছেন বিনীত। ‘মানি হাইস্ট’, ‘ফাউদা’র নতুন সিজ়ন, ‘দ্য স্পাই’, ‘কন্টাজিয়ন’ও দেখেছেন। ‘‘বলিউডে রোল মডেল নেই। তবে ইরফান (খান) ভাইয়ের জার্নি আমার জীবনে টর্চের মতো। অনেক কঠিন সময় পার করিয়ে দেবে ওই আলোটুকু,’’ আশাবাদী বিনীত।