বিদীপ্তা চক্রবর্তী ও সুদীপ্তা চক্রবর্তী। ছবি-সংগৃহীত।
এ বছর সকাল থেকেই দিদি শুটিংয়ে রয়েছে। এখন আর সেই ভাবে উদ্যাপন হয় না। আর ছোটবেলায় আমাদের আর্থিক অবস্থা যা ছিল, তাতে বড় করে জন্মদিন পালন করার প্রশ্নই উঠত না। বাড়িতেই ঘরোয়া ভাবে আমরা জন্মদিন কাটাতাম।
মনে আছে, ওই দিনটা বাড়িতেই ভালমন্দ পদ রান্না হত। তাই কারও এক জনের জন্মদিন হলে বাকিরাও খুব উত্তেজিত থাকত। কিন্তু কোনও দিনই লোকজনকে নেমন্তন্ন করে কেক কেটে আমাদের জন্মদিন পালন হত না।
আমাদের প্রত্যেকের জন্মদিনে মা পায়েস রান্না করতেন। এটা আজও বাদ যায় না। এমনকি আমাদের ও আমাদের মেয়েদের জন্মদিনেও মা পায়েস তৈরি করেন। খাবার রান্না করেও পাঠান। এ বছরও মা দিদিকে পায়েস রান্না করে পাঠিয়েছেন।
ছোটবেলায় আমরা পরিবারের মধ্যে নিজেরাই এই দিনটা একসঙ্গে কাটাতাম। নতুন পোশাক পরে জন্মদিন পালনের কথাও মনে পড়ে না। আমরা তিন বোনই হয়তো বড় হওয়ার পর জন্মদিনে নতুন জামা পরেছি। আসলে বাবা অফিসে বা নাটকে ব্যস্ত থাকতেন। তাই বাড়িতেই খুব অনাড়ম্বরে কাটত আমাদের তিন বোনের জন্মদিন। দুপুরে প্রদীপ জ্বালিয়ে খাবার বাড়তেন মা। ভাতের চার পাশে সাজানো থাকত পাঁচ রকমের ভাজা, ডাল, মাছ, মাংস, দই। একদম বাঙালি রীতি মেনেই আমাদের জন্মদিন পালন হত।
আর এখন সবাই আমরা এত ব্যস্ত যে, জন্মদিন পালন করা হয় না সেই ভাবে। গত কাল রাতে হয়তো ওরা নিজেদের মধ্যে পার্টি করেছে। কিন্তু সকাল থেকেই আবার দিদির শুটিং। আর ব্যস্ততা এখন এমন জায়গায় যে, সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে জন্মদিন পড়লে তখনই যেটুকু উদ্যাপন করা যায়। আর আমার জীবনে তো গত তিন বছর ধরে ‘উইকেন্ড’ বলে কিছুই নেই। শনি-রবিবার আমার ক্লাস থাকে।
জন্মদিনের সকালে দিদির সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা হল। আমি দিদির থেকে স্বভাবতই বয়সে ছোট। কিন্তু আমিই ওর স্থানীয় অভিভাবক। সকালে ফোন করে ওকে চারটে উপদেশ দিলাম। শরীরচর্চা করার, মন ভাল রাখার ও আরও কাজ করার কথা বললাম। বড়রা যেমন জ্ঞান দেন, তেমনই ওকে বলি। ও শোনেও চুপ করে। আমার জন্মদিনেও ও ফোন করে ভাল থাকার কথা, আরও উন্নতি করার কথা বলে। ও সব সময় বলে, ‘‘আমার কিছু হবে না। আমার বোনের হবে, কারণ ও পারে। ও নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে জানে।’’ এ সব দিদি বলতেই থাকে।
ফেসবুকে আজ একটি ছবি শেয়ার করেছি। আমাদের সম্পর্ক কেমন, ওই ছবিটাই বলে দেয়। আমরা সারা দিন এত হাসাহাসি করি। আমার দিদি খুব ফাজিল আর মজায় থাকতে পছন্দ করে। ও জীবনে সেই ভাবে কোনও স্ট্রেস নিতেই পছন্দ করে না। ও ভাগ্যবতী যে, ও স্ট্রেস না নিয়ে থাকতে পারে। আমি তো সারা দিন চিন্তা করতে থাকি। ও তেমন চাপ নেয় না।