Rituparna Sengupta

Rituparna on Rabindra Jayanti: জীবনের খারাপ সময়ে আশা আর ভালবাসা ছাড়তে নেই, শিখিয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান

বাবা মৃত্যুশয্যায়। আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। মৃদুস্বরে বাবা আমাকে গাইতে বললেন, ‘‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে’’।

Advertisement

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ১৩:৪৭
Share:

সেই দিনটা মনে পড়ে। বাবা মৃত্যুশয্যায়। আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। মৃদুস্বরে বাবা আমাকে গাইতে বললেন, "মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে"। সেই মুহূর্ত আজ ভাবলে আশ্চর্য লাগে যে, রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে অস্তিত্বের কোন গভীরে বাস করেন! শুনেছি শেষ বারের মতো শান্তিনিকেতনের আশ্রম ছাড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ আশ্রমবাসীর কাছে ওই গানই শুনতে চেয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের মহর্ষি। আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের সাহিত্য। আমাদের কল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের ভাষা।

Advertisement

আমাদের জীবনে যখনই অন্ধকার নেমে আসে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর চেতনায় আমাদের অন্তরের আঁধার দূর করেন। জ্বেলে দেন প্রদীপ। আমার জীবনে, আমাদের সবার জীবনে ছোটবেলা থেকেই গানে কবিতায় নৃত্যনাট্যে বন্ধু হিসেবে, গুরুদেব হিসেবে তিনি সঙ্গে থেকেছেন। বাঙালি বলেই আমরা এই সৌভাগ্যের অধিকারী।

এই যে একটা গান 'পুরানো সেই দিনের কথা…'। এ যেন মানবজীবনের সংগীত! জীবনে বেঁচে থাকতে থাকতে যখনই আমরা কোনও বাঁকে এসে দাঁড়াই, তখনই যেন গানটা এসে আমাদের ফেলে-আসা জীবনের ভালবাসাকে, সৌন্দর্যকে আমাদের মনের মধ্যে এনে দেয়। এবং পরবর্তী পথে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। জীবন যে কত বড় সম্পদ, জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই যে আমাদের আশা ছাড়তে নেই, ভালবাসা ছাড়তে নেই, পুনর্মিলনের অপেক্ষা ছাড়তে নেই, সে কথাই যেন বলে এই গান।

Advertisement

আমি ভাগ্যবান যে রবীন্দ্রনাথের 'পূজারিণী', 'মায়ার খেলা', 'শাপমোচন', 'চিত্রাঙ্গদা'র মতো সৃষ্টিকে উপস্থিত করেছি অনেক মানুষের সামনে। চেষ্টা করেছি তাঁর অনুভূতিকে নৃত্যে ফুটিয়ে তুলতে। আবার আমার বেশ কিছু ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের অনুপম উপস্থিতি। আমার প্রিয় ছবি তরুণ মজুমদারের 'আলো' (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি), সেখানে রবীন্দ্রনাথের গান ছবিটাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। 'দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে' বা 'শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে' তৈরি করেছে অসামান্য সমস্ত মুহূর্ত। 'ভালোবাসার বাড়ি' ছবিতেও রবীন্দ্রসংগীতের অপূর্ব ব্যবহার! তরুণ মজুমদার যেটা খুব ভাল পারেন। আমার যেটা বলার, এই কাজগুলোর মধ্যে যখন আমি অংশ নিয়েছি, তখন আরও ভালভাবে অনুভব করেছি রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্তি। তাঁর অতলস্পর্শী ভাবনা থেকে উঠে আসা চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি আমি কত ক্ষুদ্র।

রবীন্দ্রনাথ সেই প্রাণপুরুষ, যিনি আমাদের সামনে আছেন বলেই আমরা নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারি, সংশোধন করতে পারি। রবীন্দ্র-সাগরে ডুব দিয়ে নিজেকে খুঁজে পাব আমি? আমার মতো তুচ্ছ মানুষও তাঁকে খুঁজে বেড়াই, নিজের জীবন দিয়ে খুঁজে বেড়াই। এই অদ্ভুত খেলায় মেতে থাকতে পারি যাঁর সঙ্গে আজ তাঁর জন্মদিন। আমার প্রণাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement