অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে কোনওদিন ছিল না। ব্যস্ত ছিলেন হস্তশিল্পের ব্যবসা নিয়ে। হঠাৎই এল মডেলিংয়ের সুযোগ। সেখান থেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কিন্তু বলিউডের আকাশ থেকে হঠাৎই বিদায় নিলেন দীপ্তি ভাটনগর।
আদতে উত্তরপ্রদেশের মেয়ে দীপ্তির জন্ম মেরঠে। ১৯৬৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে তাঁর স্কুলজীবন কেটেছে দিল্লিতে। উচ্চশিক্ষার সময় আবার মেরঠে চলে যান। ভর্তি হন মেরঠ বিশ্ববিদ্যালয় বা আজকের চৌধুরী চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় তিনি মুম্বই যান। উদ্দেশ্য, মেরঠে তাঁর যে হস্তশিল্পের কারখানা আছে, তার বিজ্ঞাপনের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা। কিন্তু ভাবলেন এক, হল আর এক। বিজ্ঞাপন সংস্থায় গিয়ে দীপ্তি নিজেই মডেলিংয়ের অফার পেয়ে গেলেন।
শাড়ির মডেল হয়ে দেখা গেল দীপ্তিকে। দ্রুত জনপ্রিয়তা পেলেন মডেলিংয়ের জগতে। এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, ছেড়ে দিলেন হস্তশিল্পের কারখানার দায়িত্ব। পেশাদার মডেল দীপ্তির কাজ ছড়িয়ে পড়ল বিদেশেও।
ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে দেরি হল না। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পেল দীপ্তির প্রথম ছবি ‘রামশাস্ত্র’। সঞ্জয় গুপ্তর পরিচালনায় এই ছবিতে তিনি স্ক্রিনশেয়ার করেছিলেন জ্যাকি শ্রফ এবং মনীষা কৈরালার সঙ্গে।
পরের বছরই তিনি অভিনয় করেন তেলুগু ছবি ‘পেল্লি সন্দাদি’। শ্রীকান্তের বিপরীতে দীপ্তির এই ছবি ছিল সুপারহিট। ছবিতে তাঁর চরিত্র ‘স্বপ্না’ খুবই জনপ্রিয় হয়। এর পর দক্ষিণী ছবির ইন্ডাস্ট্রি এবং বলিউডে সমানতালে অভিনয় করেছেন দীপ্তি।
দীপ্তির ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবি হল ‘কালিয়া’, ‘হিটলার’, ‘হম সে বড়কর কৌন’, ‘দুলহন বনু মেঁ তেরি’, ‘সুলতান’, ‘হম তুম পে মরতে হ্যায়ঁ’, ‘মন’, ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ এবং ‘রোক সাকো তো রোক লো’।
দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দীপ্তি অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে বক্স অফিসে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘পেল্লি সন্দাদি’, ‘অটো ড্রাইভার’, ‘সুলতান’ এবং ‘কোন্ডাভীতি সিংহাসনম’।
ছোট পর্দাতেও দীপ্তি ছিলেন জনপ্রিয় মুখ। ১৯৯৮ সালে টেলিভিশনে ‘ইয়ে হ্যায় রাজ’ সিরিয়ালে প্রথম কাজ করেছিলেন তিনি। নামভূমিকায় রুবি ভাটিয়ার জায়গায় তিনি এসেছিলেন।
জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বেশিদিন অভিনয় করেননি দীপ্তি। পরিচালক রণদীপ আর্যকে বিয়ে করে ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানান নায়িকা।
বিয়ের পরে দীপ্তি এখন থাকেন উত্তরাখণ্ডে। স্বামী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানেই তাঁর সংসার।
নায়িকাজীবনে খোলামেলা পোশাকে সাহসী ছিলেন দীপ্তি। কিন্তু তিনি নিজের ভাবমূর্তি আমূল পাল্টে ফেলেছিলেন ২০০১ সালে তাঁর ছোটপর্দার শো সঞ্চালনার সময়ে।
সে সময় ‘যাত্রা’ শো সঞ্চালনা করতেন দীপ্তি। আধ্যাত্মিক এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত শো ছিল দর্শকদের পছন্দতালিকার শীর্ষে। দেশের বিখ্যাত ধর্মীয় স্থানগুলি সফর করে শো সঞ্চালনা করতেন তিনি।
এই শো সঞ্চালনার সময়ে নিজের মেক আপ আমূল পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি। শাড়ি পরে, মাথায় ঘোমটা টেনে এই শো হোস্ট করতেন দীপ্তি।
অভিনয়ের পাশাপাশি দীপ্তির প্রধান শখ ভ্রমণ। এখন ইউটিউবে ভ্রমণ সংক্রান্ত তাঁর চ্যানেল খুবই জনপ্রিয়।