অপরাজিতা আঢ্য।
জীবন থেকে নুন বাদ দিয়ে চিনিতে মন দিয়েছেন তিনি। তবুও মুখে চিনি তোলা বারণ। কড়া ডায়েট। নিজেকে জিমে বেঁধেছেন ২০২১-এর লড়াইয়ে নামবেন বলে। এ বছর ফারহান আখতারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। শিবপ্রসাদ আর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি করতে পারেননি তিনি। অপরাজিতা আঢ্য প্রথম মুখ খুললেন আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে।
প্রশ্ন: লকডাউনে ১১০ দিন বাড়ি থেকে বেরোননি। বছর শেষে মিষ্টিমুখ করে কি ফিরছেন অপরাজিতা?
বিষয়টা তেমন নয়। ২০১৯-’২০তে আমার দশটা ছবি বাতিল হয়েছে। যেমন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লাভ স্টোরি’, রাজদীপের ছবি। শিবুর ‘ফাটাফাটি’। কিন্তু এক একটা ছবি এক এক কারণে আপাতত বন্ধ। পরিস্থিতি তো দেখছেন। ২০ মার্চ ‘চিনি’ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ১৭ মার্চ থেকে লকডাউন।
প্রশ্ন: ২০১৫ থেকে ’১৮, যে অপরাজিতা বছরে দশটা ছবি করতেন তিনি এই দশটা ছবি বাতিলকে কী ভাবে নিলেন?
আমি অভিনেতা। অভিনয় কিন্তু রোজ করতে হয়। থেমে থাকা যায় না। নয়তো আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। ২০১৯-এ আমি কোনও অভিনয় করিনি। শুধু সঞ্চালনার কাজ করেছি। দেখলাম জীবন মানুষকে সব অভ্যেস করায়। আমি হাঁফিয়ে লাফিয়ে মাথা ঠুকেও কিচ্ছু করতে পারব না। যখন যা হওয়ার হবে। আমার কাজ স্থির থেকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা।
প্রশ্ন: আপনি তো আপনার গুরুদেবকে মানেন…
লকডাউনে কোভিড বুঝিয়েছে, ঈশ্বর আছে। আমার গুরুদেব আছেন। সাঁইবাবা আছেন। জীবনের ওঠাপড়া থাকবেই। কিন্তু গায়ে হয়তো থান ইট লাগার কথা, সেটা নুড়ি হয়ে লাগবে যদি আপনার উপর ঈশ্বর আর গুরুর কৃপা থাকে।
প্রশ্ন: অবশেষে কবে বেরোলেন?
শিবু জোর করে বার করল। প্রথম দিন ফ্লোরে যেতে হাত কাঁপছিল। ‘রান্নাবান্না’ শুরু হল। তার পর মৈনাক বলল ‘চিনি’ করব।
প্রশ্ন: ‘চিনি’-র শেষ দিনের শ্যুটেই আপনার করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছিল?
হ্যাঁ।
প্রশ্ন: এই তেতো লকডাউনে ‘চিনি’ কেমন করে এল?
দু’-দু’বার ছবিটা শুরু হতে হতেও হয়নি। তার একটা কারণ লকডাউন। আমি তো ছবিটার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। লকডাউনে যে অভিনয় করব ভাবতেই পারিনি। এক দিন মৈনাকের ফোন রাত ১২টায়। বলল, ‘গল্প চেঞ্জ করব’। সবিস্তার আলোচনা হল। তার পরে ও যে গল্পটা শোনায় তাতে আমার মনে হয় এই ছবিটা লোকে এক বার ছেড়ে চার বার দেখবে।
এই তেতো বছরে ‘চিনি’-র স্বাদ পেলেন অপরাজিতা
প্রশ্ন: কেন?
ছবির চিত্রনাট্য তৈরির সময় বদলাতে বদলাতে গিয়েছে। মৈনাক আর অঞ্জন দত্তর সঙ্গে কাজ করার তো এটাই সুবিধে। প্রচুর স্বাধীনতা পাওয়া যায়। ‘চিনি’-তে একটা সংলাপ আছে, ‘বিয়ে করছিস দেখবি আমার জিনসের মতোই ফাটবে’, এটা কিন্তু পরে যোগ হয়েছে। মৈনাক জানে আমি কী করতে পারি। শিবুও যেমন জানে আমি কী করতে পারি। লীনাদি যেমন জানে আমি কত দূর নিজেকে দিয়ে দিতে পারি। লীনাদি আমার সম্পর্কে যা জানে আমার মা-ও বোধহয় তা জানে না। মৈনাকের সঙ্গে পারস্পরিক আদানপ্রদানের সম্পর্ক ‘চিনি’ তৈরির সময় ছাপ ফেলেছে।
প্রশ্ন: ‘চিনি’-তে কেমন মা আপনি?
একটা সময় সংসারে খুব সাফার করেছে চিনির মা। পরে নিজের উপর ঘৃণা তৈরি হয়েছে যে সে নিজের মতো বাঁচতে পারেনি। প্রতিবাদ করতে পারেনি। এ বার তার মেয়ে যখন নিজের মতো জীবন বেছে নেয় তখন সে ভিতর থেকে সমর্থন করে। মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে সে যেতে দেয়। অথচ নিজে যখন একার জীবনে আসে তখন সেই জীবন সামলাতে পারে না। অনেক বলে দিলাম… আর না!
প্রশ্ন: মধুমিতাকে কেমন লাগল?
মিষ্টি মেয়ে। নিজেকে বিশাল স্টার ভাবে না। খুব নরমসরম। এক বার ভুল হলে পাঁচ বার করে। শেখার খুব আগ্রহ। ‘চিনি’ ওকে এগিয়ে দেবে। শ্যুটের সময় কত বার বলেছে, ‘অপাদি, দেখ ঠিক হল, প্লিজ বল…।’
আরও পড়ুন: কানের দুল হারিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হলেন জুহি চাওলা
প্রশ্ন: এই ছবিতে নাকি নুনের কাজ করেছে পিঙ্কি?
দারুণ কাজ করেছে ও। মনে রাখার মতো। বলছি তো, এমন মানুষ জানি ‘বেলাশেষে’ ১২২ বার দেখেছে। ‘প্রাক্তন’ ৫২ বার দেখেছে। এই ছবিও লোকে বহু বার দেখবে।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে অপরাজিতাকে আর দেখা যাচ্ছে না কেন?
কী বলছেন! আমি আপনাকে স্ক্রিন শট দিতে পারি। ফারহান আখতারের হাউজ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল, করিনি। বিজ্ঞাপনের কাজ পেয়েছি পাঁচটা। মুম্বই যাইনি ভয়ে। আমার বন্ধুরা তো মুম্বইয়ে চলে যেতে বলে আমায়।
‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এর একটি দৃশ্যে প্রসেনজিতের সঙ্গে অপরাজিতা।
প্রশ্ন: যান না কেন?
গেলে আর লোকে এত খোঁজ নেবে না জানেন। মুম্বই গেলে লোকে আর কাজের জন্য বলবে না।
প্রশ্ন: আফসোস হচ্ছে না? এত কাজ ফিরিয়ে দিলেন?
না। কী লাভ? আগে তো শরীর। এখানে সৃজিতের নতুন ছবিতে কাজ করার কথা, ছেড়ে দিলাম। সৃজিত বলল, এখনও সময় আছে। পরে হবে। রাজদীপকে না করলাম। শিবুর ‘ফাটাফাটি’ ছবির শ্যুট করার কথা ছিল নভেম্বরে। ও তো ‘রান্নাবান্না’-য় আমার শ্যুট করা দেখেই বুঝেছে আমি ছবি করার লোড নিতে পারব না। কোভিডের পরে অ্যান্টিবডি তৈরি না হলে তো আমার ফের করোনা হতে পারে! আর মুম্বইতে কেউ কারও রেয়াৎ করে না।
প্রশ্ন: মানে?
যেমন, শ্যুটের সময় শরীর খারাপ বলে দেরি করে এলাম, এ সব চলবে না।
প্রশ্ন: আপনি নাকি স্টার হওয়ার পর শ্যুটে বড্ড দেরি করে আসেন?
হ্যাঁ। আমার দেরি হয় আসতে। কিন্তু এটা তো প্রথম থেকেই অভ্যাস। তখন তো কেউ চিনতোও না আমায়। জীবনে দ্বিতীয় দিন শ্যুট করতে যখন ঢুকি তখন ‘তৃষ্ণা’-র শ্যুটিং করছিলাম। ১৯৯৬ সাল। মনে আছে, আমি দশটায় না ঢুকে আড়াইটেয় গিয়েছিলাম। তখন ম্যানেজার কান ধরে ওঠবোস করিয়েছিলেন। আর কিসের স্টার? গাইতে গাইতে গায়েন একটা সময় সবাই হয়। ২৪ বছর ধরে অভিনয় করে করে একটা জায়গা আমার তৈরি হয়েছে। সেটা তো হবেই। এটুকুও না হলে আমার কান মুলে দেওয়া উচিত (মিষ্টি হাসি)।