অপরাজিতা আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।
কথা ছিল, পুজোর আগে শুটিংই করবেন না। কথা ছিল, কুকারি শো আর নয়! গেম শো? চলতে পারে। কথা ছিল, আপাতত ঘোরতর সংসারী হয়ে কাটাবেন। অপরাজিতা আঢ্যর সব প্ল্যান চৌপাট প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ফোনে! কী কাণ্ড ঘটালেন দু’জনে?
কী কাণ্ড! ৩ অগস্ট থেকে স্টার জলসার রান্নার ‘ঠাম্মি’ তনিমা সেনের জায়গায় ‘মাম্মি’ অপরাজিতা আঢ্য?
অপরাজিতা: (হো হো করে হেসে) টিজার দেখে চেনা-অচেনা সব্বাই এ কথা বলছেন।
এই বদলটা কেন? আপনার তো গেম শো করার কথা ছিল?
অপরাজিতা: আরে, আমার তো প্ল্যানই অন্য ছিল! শুনেছি, তনিমাদির পারিবারিক সমস্যা আছে। তাই ওঁকে নেপথ্যে রেখেই শো চালাব আমি।
আপনার পরিকল্পনায় কী ছিল?
অপরাজিতা: এই বছরটা কাজ না করার প্ল্যান ছিল। অন্তত পুজোর আগে তো নয়ই। হিসেব অনুযায়ী, গত ১৪ মার্চ লাস্ট কাজ করেছি। ১৭ থেকে লকডাউন শুরু। আমিও কাজ গুটিয়ে বাড়িতে। মাঝে হাই ব্লাড প্রেসারের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। করোনা ভয় তো ছিলই। আমার অনেক চেনাজানা, বন্ধুবান্ধব এই সংক্রমণে ভুগছেন বা ভুগে উঠেছেন। বাড়িতেও ৮৬ বছরের প্রবীণ থেকে ১০ মাসের বাচ্চা রয়েছে। ফলে, ঝুঁকি নেওয়ার সাহসটাও পাইনি। তা ছাড়া, জি বাংলার দু’বছরের কুকারি শোয়ের পর আবার একটা কুকারি শো করার ইচ্ছেও ছিল না। বরং, অন্য চ্যানেলে গেম শো করার কথা ছিল। অতিমারিতে সেটা যখন আটকে গেল, ঠিক করলাম টানা কোনও শো বা শুটিং এখন থাক। বদলে বিজ্ঞাপনের শুটিং করব। তেমনটাই করছিলামও।
হঠাৎ পরিকল্পনায় বদল?
অপরাজিতা: (হেসে ফেলে) সৌজন্যে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ফোন। কেন করবি না! আমরা কি বেঁচে নেই? শিবের যদি বোঝানোটা শুনতেন! এ দিকে শিবকে আমি ‘না’ বলতে পারি না। শেষে বুদ্ধি চাইলাম কর্তার কাছে। তিনি বললেন, অতিমারি এখনই যাওয়ার নয়। টিকাও এখনই আবিষ্কার হওয়ার নয়। আমরা ঘরে বসে কাজ করতে পারি। তোমাদের তো একটা না একটা সময় কাজে নামতেই হবে। আর যত বসে থাকবে ততই মরচে ধরবে কাজে। শরীর বসে যাবে। রেগুলার প্র্যাকটিসে থাকলে তুমিও অভ্যস্ত থাকবে। এ সব শুনেটুনে মনে হল, কাজটা করব। তার পরেই টিজার, পর্ব শুটিং শুরু।
৩ অগস্ট থেকে স্টার জলসার কুকারি শোতে অপরাজিতা আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।
কেমন লাগল নিউ নর্মাল পরিবেশ?
অপরাজিতা: স্টুডিয়ো গিয়ে দেখলাম, সব বদলে গিয়েছে। অনেক নতুন নিয়ম চালু হয়েছে সংক্রমণ ঠেকাতে। কিন্তু উইন্ডোজের ছেলেপুলেরা দেখলাম এক রকমই আছে! সেই উষ্ণতা, প্যাম্পার করা। এই ক্ষেত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটা কথা মনে পড়ছে...
বলুন না...
অপরাজিতা: সৌমিত্রবাবুর থেকে শোনা, ‘আমরা আর্টিস্টরা এমন গ্রহের জীব যাঁদের থেকে সেরা কিছু পেতে গেলে প্যাম্পার করতে হয়, প্রশ্রয় দিতে হয়। যত্ন করে লালন করতে হয়। আমি কিছুতেই সোমিত্র চট্টোপাধ্যায় হতে পারতাম না যদি না সত্যজিৎ রায় আমাকে প্যাম্পার করতেন।’ এটা একদম খাঁটি কথা। আর শিব, নন্দিতাদি গোটা উইন্ডোজ প্রোডাকশন সমস্ত অভিনেতাকে প্রচণ্ড ভাবে প্যাম্পার করেন। ফলে, সেটে পা রাখতেই ওঁরা যখন ‘অপাদি এসো’ বলে হইহই করে উঠল, আমার সব অস্বস্তি নিমেষে উধাও। আবার সেই ২৪ বছর ধরে ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশন শব্দগুলো ফেস করতে থাকা অপরাজিতা আঢ্য। অনেক দিন পরে টানা দাঁড়িয়ে শুট। পায়ের, কোমরের ব্যথাও দেখলাম ওঁদের উষ্ণতায় ভুলে গিয়েছি!
শিবপ্রসাদের ফোন ছাড়াও উইন্ডোজের কুকারি শো আর জি বাংলার ‘রান্নাঘর’-এর কোন পার্থক্য আপনাকে রাজি করিয়েছে?
অপরাজিতা: আগের কুকারি শো একদম ফিকশন ছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা আসতেন। রান্না করতেন। আমি শো হোস্ট করতাম। শিবের কুকারি শো পুরোটাই নন ফিকশন। গোপাল আমার ছেলে, খেতে পেলে আর কিচ্ছু চায় না। সে এত মোটা হয়ে যাচ্ছে যে আমি ভীষণ চিন্তিত। ওকে নাচের ক্লাসে ভর্তিরও ইচ্ছে রয়েছে। অতিমারির কারণে আমি এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম। শাশুড়ি মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বাবার বাড়িতে। এ রকম একটা নেপথ্য কাহিনি নিয়ে ঘরোয়া রান্নাবান্না। যেটা রেসিপির পাশাপাশি গল্প বলে।
যাক, তা হলে টাইপড হয়ে যাওয়ার ভয় কাটল?
অপরাজিতা: (আবার হাসি) একদম! আবার কুকারি শো মানেই টাইপড হওয়ার চান্স থাকে। আমারও তাই অনিচ্ছা ছিল। কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, ‘হ্যাঁ’ বলে ভুল করিনি। পরিচালক জিনিয়া সেনও সারা ক্ষণ এই ফ্লেভারটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন শোয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: বড় পর্দায় একসঙ্গে প্রথম অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা
আগে এই শোয়ের কোনও এপিসোড দেখেছিলেন?
অপরাজিতা: হ্যাঁ, একটা এপিসোড দেখেছিলাম। ওই পর্বে তনিমা সেন ‘বীরপুরুষ’ আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলেন তাঁর নাতিকে। তখনই বেশ অন্য রকম লেগেছিল ব্যাপারটা। যদিও শোয়ের প্রায় প্রথম দিকের পর্ব সেটা। এখন প্রযোজক সংস্থা শো’টিকে আরও গুছিয়ে নিয়েছে। উইন্ডোজ নিজে যেমন সম্পর্ক ধরে রাখতে জানে তেমনই খুব সুন্দর করে সব জায়গায় সম্পর্কের গল্প বলে। এটা ওদের ইউএসপি।
প্রথম দিন কী শুট করলেন?
অপরাজিতা: আড়াই খানা এপিসোড আর প্রোমো। পরের দিন আবারও শুটিং। এখনও পর্যন্ত মোট সাতটা এপিসোড শুট হয়েছে।
‘মাম্মি’ অপরাজিতা আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।
সাতে সাত দেবেন কোন এপিসোডকে?
অপরাজিতা: আমার ইনট্রোডাকশন এপিসোড। ওই পর্বে আমার সঙ্গে নীলিশা বসাক ছিলেন। খুব প্যাথেটিক ওঁর লাইফ। গানের বদলে এখন রাস্তায় ড্রাই ফুড বিক্রি করছেন। ভীষণ আন্তরিক, মিষ্টি মেয়ে। (একটু থেমে) আরও একটি এপিসোড আছে। গাঁধী ভবনের পাপড়ি সরকার এসেছিলেন বিশেষ পর্ব ১৫ অগস্ট শুট করতে। ১৯৪৭-এর এই দিনে ভারত যখন স্বাধীন হয় গাঁধীজি তখন কলকাতার গাঁধী ভবনে। এক মাস ছিলেন বাপুজি কলকাতায়। সে সময় কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কী বলেছিলেন, জানাবেন পাপড়ি। গাঁধীজির পছন্দের ডিশ মালাই প্যাঁড়া আমি বানিয়েছি। পাপড়ি রান্না করেছেন পূর্ববঙ্গের স্পেশাল ডিশ বেগুন খাসি। এটাও মনে রাখার মতোই এপিসোড।
অনস্ক্রিন ছেলে ‘গোপাল’ রক্তিম সামন্তের সঙ্গে বন্ডিং তৈরি হয়েছে?
অপরাজিতা: ওকে তো চিনি! অনেক কাজ করেছি। খুব মিষ্টি আর বাধ্য ছেলে। কখনও ‘না’ বলে না। কাজ করব না এই ঘ্যানঘ্যানানি নেই। ওর পরিবারের সঙ্গেও আমার যথেষ্ট হৃদ্যতা।
আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, সুশান্তের দেহরক্ষী বদল: রিয়ার বিরুদ্ধে আর যা যা মারাত্মক অভিযোগ এফআইআর-এ
এ তো গেল ছোট পর্দার গল্প। বড় পর্দায় কী করছেন?
অপরাজিতা: অনেকগুলো ছবিতে কাজের কথা হয়েছিল। মানসী সিংহের ছবির ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে বন্ধ। মৈনাক ভৌমিকের ‘চিনি’ শুট হওয়ার কথা ছিল ২০ মার্চ থেকে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের একটি ছবিতে কাজ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বিদেশে শুট হবে বলে আপাতত বন্ধ। এর মধ্যে একমাত্র ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ছবির শুট শেষ। ডাবিং বাকি।
বিয়ের ২৩ বছর, অভিনয়ের ২৪। খুব শিগগিরি দুটো সিলভার জুবিলির পথে অপরাজিতা। খানাপিনা কি রান্নার শোতেই হবে?
অপরাজিতা: (প্রচণ্ড হেসে) অভিনয়ে আসার এক বছরের মধ্যে বিয়ে। তাই একটা ২৩, আর একটা ২৪। হ্যাঁ, সেলিব্রেশন তো হবেই। সব আবার স্বাভাবিক হোক। জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে।