জনসমক্ষে তো বটেই বাড়ির পুরুষ সদস্যদের সামনে আসার জন্যও আজও ঘোমটার প্রচলন রয়েছে তাঁর পরিবারে। সেই রক্ষণশীলতা কাটিয়ে বেরিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। রিয়্যালিটি শোয়ে স্বল্পবসনা হয়ে নাচতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
তার জন্য কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি মোহেনাকে। কিন্তু সে সবের পরোয়া না করে টিভি সিরিয়ালে চুটিয়ে অভিনয়ও করেন তিনি। আবার সময় বুঝে সব ছেড়ে সংসারী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হননি। তার জন্যও কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু মোহেনা এ রকমই। কখনও সাহসিনী, কখনও আবার সনাতনী।
মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার রাজ পরিবারে জন্ম মোহেনার। মহারাজা মার্তণ্ড সিংহের নাতনি তিনি। বাব মহারাজা পুষ্পরাজ সিংহ। রাজপরিবারের রক্ষণশীল আদব কায়দাতেই বেড়ে ওঠা তাঁর। তার মধ্যেও নাচকে অসম্ভব ভালবেসে ফেলেন তিনি।
পরিবারের কারও সমর্থন পাবেন না জেনে প্রথমে নাচের প্রতি নিজের আকর্ষণের কথা লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পরে মায়ের কাছে মনের কথা খুলে বলেন। এর পর ২০১১-’১২ সালে সেইসময় টেলিভিশনের সবচেয়ে বড় রিয়্যালিটি শো ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’-এ অংশ নেবেন বলে মনস্থির করে ফেলেন।
মেয়ে টেলিভিশনের পর্দায় নাচবে, আর তাকে দেখে দর্শক হাততালি দেবেন, ব্যাপারটা প্রথমে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি মহারাজা পুষ্পরাজ। কিন্তু মেয়ের জেদের সামনে নিজের আপত্তি তুলে নিতে বাধ্য হন তিনি। এমনকি, পরবর্তী কালে ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’-এর মঞ্চে মেয়ের সমর্থনেও এগিয়ে আসতে দেখা যায় তাঁকে।
‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’-ই মোহেনাকে ঘরে ঘরে পরিচিতি দেয়। নাচের প্রতি তাঁর ভালবাসা, সাহসী মনোভাব কোরিয়োগ্রাফার রেমো ডি’সুজার প্রিয়পাত্রী করে তোলে তাঁকে।
রিয়্যালিটি শো জিততে না পারলেও, এখান থেকেই রেমোর নাচের দলে শামিল হয়ে যান মোহেনা। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-র মোত ছবিতে রেমোকে অ্যাসিস্টও করেন তিনি। সেই সূত্রেই ২০১৫ সালে ‘দিল দোস্তি ডান্স’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান মোহেনা।
এর পাশাপাশি সেইসময় তারকাদের নিয়ে তৈরি রিয়্যালিটি শো ‘ঝলক দিখলা জা’-তেও কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন মোহেনা। সেখান থেকেই জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগটি পান তিনি। টেলিভিশনের অন্যতম সফল ও দীর্ঘমেয়াদি সিরিয়াল ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কহেলাতা হ্যায়’-তে কীর্তির চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান মোহেনা।
কীর্তির চরিত্রটিই রাতারাতি ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে মোহেনাকে। তার জন্য ২০১৯ সালে ইন্ডিয়ান টেলি অ্যাওয়ার্ডও পান তিনি। এ ছাড়াও ‘প্যায়ার তুনে ক্যায়া কিয়া,’ ‘টুইস্ট ওয়ালা লক্ষ’, ‘সিলসিলা প্যায়ার কা’, ‘নয়া আকবর বীরবল’-এর মতো সিরিয়ালে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া হ্যায়’-এ শুটিং চলাকালীন সহঅভিনেতা ঋষি দেবের সঙ্গে নাম জড়ায় মোহেনার। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই, সবটাই অনুরাগীদের কল্পনা বলে উড়িয়ে দেন মোহেনা ও ঋষি।
এর মধ্যেই মোহেনা যখন কেরিয়ারের মধ্যগগনে, সেইসময় তাঁর বিয়ের খবর সামনে আসে। শুরুতে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, রেওয়ায় যে অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে, সে খবর সামনে আসতে শুরু করে। দু’জনের বাগদানের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
তাঁর বিয়ে নিয়ে যখন চারিদিকে গুঞ্জন, সেইসময়ই দুম করে ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া হ্যায়’ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন মোহেনা। বাড়ির চাপেই তিনি এই পদক্ষেপ করছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় সেইসময়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে দেন মোহেনা।
শেষমেশ ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হরিদ্বারে সুয়েশ রওয়াতের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন মোহেনা। সুয়েশ উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য। বিজেপির নেতা তিনি। তাঁর বাবা গুরু সতপাল মহারাজও বিজেপির সদস্য। দেখাশোনা করে মোহেনা ও সুয়েশের বিয়ে স্থির হয়ে বলে জানা যায়।
কিন্তু বিয়ের পোশাক নিয়েও সেইসময় কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি মোহেনাকে। রাজপুত সংস্কৃতি মেনে ঘোমটা টেনে, মাথা নীচু করে তাঁর বিয়ের মণ্ডপে এগিয়ে যাওয়ার ছবি সামনে আসতেই তা নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেন নেটাগরিকরা। কিন্তু মোহেনার সাফ জবাব, জীবনটা তাঁর, কী ভাবে চলবেন, কী করবেন সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যাপার।
আপাতত অভিনয়ে ফেরার কোনও ইচ্ছেও নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন মোহেনা। ২০১৭-’১৯ পর্যন্ত একটি ইউটিউব চ্যানেলের অংশ ছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে ইউটিউবে ‘মোহেনা ভ্লগস’ নামের একটি চ্যানেল চালান তিনি।