অনন্যা সেন। ছবি: সংগৃহীত।
‘জেনারেশন জ়েড’ বা ‘জেন জ়ি’, নতুন প্রজন্ম। এঁদের নিয়ে চারপাশে নানা কথা হয়। তার ঠিক আগের প্রজন্মটাকে বলে ‘মিলেনিয়াল’। আমার জন্ম এই দুই প্রজন্মের মাঝামাঝি সময়ে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, আমি ‘জ়িনেলিয়াল’। দুই প্রজন্মেরই বেশ কিছু গুণ রয়েছে আমার মধ্যে। তবে জেন জ়ি দ্বারা যেন একটু বেশি প্রভাবিত। যেমন বলতে পারি, আমি ভীষণ রকম ‘ডেলুলু’। জেন জ়ি মহলে ভীষণ জনপ্রিয় একটা শব্দবন্ধ। আমার জীবনের সঙ্গে ভীষণ মানানসই। পুজো হোক কিংবা অন্য সময় আমার বাড়ির লোকেরাই বলে আমি নাকি একেবারে ‘ডেলুলু’ (মানে নিজেদের কল্পনার ঘোরে থাকে যাঁরা)। আসলে পুজোর সময় এত ভিড়ে আমার বেরোতে ভাল লাগে না। অথচ তারই মধ্যে ‘ফোমো’ (ফিয়ার অফ মিসিং আউট) হয়, আমি হয়তো কোনও কিছু থেকে বাদ পড়ে গেলাম।
আগে বাড়ির পুজোতেই কাটত চারটে দিন। ধীরে ধীরে বাড়ির পুজো বন্ধ হল, রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়তে শুরু করল। তাই এখন বাড়ির পুজো ছেড়ে কটা দিন বন্ধুবান্ধবের বাড়িতেই পার্টি করে কাটে। শুধু যে পার্টি করি, আড্ডা দিই, তা নয়। রাতের দিকে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতেও বেরোই। যতই কুঁড়ে, ‘ল্যাদখোর’ হই না কেন, আমি আসলে পুজোর জন্য একটা পরিকল্পনা আগেভাগেই করে রাখি কবে, কার সঙ্গে বেরোবো। অষ্টমীতে ভোগ খাওয়াটাও অবশ্যম্ভাবী। আগে তুতো ভাইবোনদের সঙ্গে পুজোটা কাটত। ওরা এখন অনেকেই শহরের বাইরে থাকে। ফলে, সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে বন্ধুরা। একটা পরিবর্তন এসেছে ঠিক, তবে এই বদলটাও মন্দ না।
একটা বিষয়ে অবশ্য আমি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা। পুজোর সময় অনেকেই দেখি সিনেমা দেখতে যায়। আমি এ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমী। পুজোর চারটে দিন সিনেমা নয়, বরং পুজো নিয়েই মেতে থাকি। কারণ সিনেমার জন্য সারা বছর রয়েছে। পুজোর চারটে দিন তো আর পাওয়া যায় না। আজ পর্যন্ত পুজোয় কোনও সিনেমা দেখতে যাইনি আমি।
পুজোর সময় আর একটা ভাল লাগার বিষয় হল ‘ক্রাশ’। পুজোর সময়টায় অনেককে হঠাৎ ভাল লেগে যায়। পাড়ার দাদারা ধুনুচি নাচত কিশোরীবেলায়। সেটা বেশ ভাল লাগত। কিন্তু, পুজোর পর সেই ভাল লাগা শেষ হয়ে যায়।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জীবনে প্রেম নিয়ে একটা মস্ত ঝকমারি রয়েছে। তাঁরা কখনও ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ (দু’টি মানুষ প্রেমে রয়েছে তবে প্রতিশ্রুতিতে নেই) পড়ে যান। কখনও কখনও ‘ব্রেডক্রাম্বিং’য়ের (যখন দু’জনেই একে অপরের প্রতি উৎসাহী কিন্তু সম্পর্কের বেড়াজালে জড়াতে চান না) মধ্যেও ঢুকে পড়েন। তাই সে ক্ষেত্রে অনলাইন ডেটিং মন্দ নয়। এই সময়টা ঠাকুর দেখার পাশাপাশি ডেটিং-টাও করে ফেলা যায় মনের মতো করে। যদিও আমি অনলাইন ডেটিং-এ বিশ্বাসী। তবে, আজ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তার বাইরে বেশি এগোতে পারিনি। পুজোর প্রেমের কিন্তু একটা শর্ত আছে। ভাল লাগা দু’তরফেই থাকবে, প্রতিশ্রুতি থাকলে ভাল, না থাকলে আরও ভাল।