সৌমিলী বিশ্বাসের সঙ্গে অরণ্য রায়চৌধুরী।
সকাল থেকে তার মন খারাপ। সময়মতো সেটে যদিও এসেছে সে। অভিনয় করেছে ‘লোকনাথ’-এর বাড়ি ফেরার দৃশ্যে। ‘‘ভারত হেরে গেল। কি বাজে লাগছে! যদিও এর ফলে পাকিস্তান বেরিয়ে গেল। এইটাই যা সুবিধের।’’ বড়দের ভাষায় বলে উঠল ছোট্ট লোকনাথ ওরফে অরণ্য রায়চৌধুরী। সামনেই ন’বছরের জন্মদিন আসছে তার। নয় শুধু সংখ্যাতেই। বুদ্ধি, কথা বলার ঢং, এমনকি, কোন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে হয়, তার সব কিছুই ধারাবাহিকের জগতে এসে অনায়াসে রপ্ত করে নিয়েছে সে।
মন খারাপ আরণ্যর মা অর্পিতা রায়চৌধুরীরও। কৃষ্ণনগরের বেথুয়াডহরি থেকে টালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন ছেলের কাজের জন্য। ‘‘অনেক পরিশ্রম করতে হয় ওকে। ঠান্ডার সময় জলে ডুবে থাকতে হয়। কাঠফাটা রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে শুট করতে হয়। রাত জাগতে হয়। তবু এই শিশু অভিনেতারা পারিশ্রমিক পাচ্ছে না,’’ ক্ষোভ লোকনাথের মায়ের গলায়। আর্টিস্ট ফোরাম আঠারোর উর্ধ্বে কলাকুশলী, টেকনিশিয়ানদের পাওনা প্রযোজকের কাছ থেকে আদায় করেছে। কিন্তু ছোট অভিনেতাদের নিয়ে তো আইন অনুযায়ী আর্টিস্ট ফোরাম কিছু বলতে পারে না।
তা হলে কি বাচ্চাদের শ্রম বৃথা?
‘‘আর্টিস্ট ফোরাম সরাসরি এ নিয়ে বলতে না পারলেও অনেক চেষ্টা করছে। আমার সঙ্গে চ্যানেল আছে, এটাই সবচেয়ে বড় ভরসা। কিন্তু ওই প্রযোজকের কাছ থেকে এই কাজ বাবদ আমরা অনেক টাকা পাই। পরশুও ওনাকে মেসেজ করেছি। উনি ‘দেব দিচ্ছি’ করে যাচ্ছেন! এ ভাবে হয় বলুন তো? সবাই টাকা পেল। আর বাচ্চারা পাবে না? বেণীরও অনেক টাকা বাকি। ওই প্রযোজক শিশু অভিনেতাদের টাকা দিচ্ছেন না।’’ ক্ষোভ অরণ্যর মায়ের গলায়। মাঝে মাঝে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে তাঁর।
আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের কার্বন কপি এই তারকারা
এই ধারাবাহিকের আর এক চরিত্র ‘বেণী’র বাবা তপন রায় বললেন, ‘‘শুধু লোকনাথ, বেণী-ই নয়, গোপাল, শিব, গৌরীর মতো শিশু অভিনেতারাও তাদের ন্যায্য টাকা পায়নি। অভিনেতা শোভন বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে একটু চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।’’
এক সময় শোনা গিয়েছিল, টিআরপি-র প্রথম সারির ধারাবাহিক ‘জয় বাবা লোকনাথ’ বন্ধ হয়ে যাবে। কলাকুশলী থেকে টেকনিশিয়ানের নায্য পারিশ্রমিক দিচ্ছেন না প্রযোজক। আর্টিস্ট ফোরাম আর চ্যানেলের উদ্যোগে অভিনেতা, কলাকুশলীদের টাকা দেওয়া হলেও এই ধারাবাহিকে শিশুশিল্পীদের কেউ এখনও টাকা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে!
এই ধারাবাহিকের প্রযোজক রানা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পর পর দু’দিন ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। মেসেজ করা হলেও তিনি সেই মেসেজের উত্তর দেননি।
অভিনয় করতে ভালবাসে ছোট্ট অরণ্য।
সেট থেকে সরাসরি কথা হল লোকনাথের সঙ্গে, ‘‘এই কাজটা খুব ভাল লাগে আমার। আমি অভিনয় করতে ভালবাসি। তাই করি। শুটিংয়ের ফাঁকে আমি কিন্তু স্কুলের পড়াও করি। আমি জানি, আমায় দুটোই করতে হবে।’’ আবার সেই অনেক বড়দের মতো দায়িত্বের কথা বলল ছোট্ট অরণ্য।
শুটিং ফ্লোরটাই তার কাছে আস্ত একটা পরিবার। কখনও অভিনেত্রী সৌমিলী বিশ্বাসের মোবাইলে ভিডিও গেম, কখনও বেণীর সঙ্গে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে স্টুডিয়োপাড়ায় সময় কাটায় অরণ্য।
আরও পড়ুন: লন্ডনের পার্টিতে সুহানার হট-ড্রেসের ছবি ভাইরাল
পরিচালক থেকে টেকনিশিয়ান, সকলেই একবাক্যে তার চিপ্সের আবদার মেটায়! এক বার শুনেই সংলাপ বলে দেয় সে। তার অভিনয়ের জন্য সেটে সময় নষ্ট হয় না। এত প্রখর স্মৃতি তার। লোকনাথের মায়ের ভূমিকায় রয়েছেন সৌমিলি বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গেও জমজমাট বন্ধুত্ব অরণ্য-র।
আর সারা রাত শুট হলে?
‘‘আমি একদম ঘুমোই না। তখন ভাত খাই না, রুটি খাই। মেকআপ ভ্যানে যাই না যাতে ঘুমিয়ে পড়ি। থেকে থেকেই চোখে ওয়াটার স্প্রে করি। এটা আমার কাজ। ঠিক করে তো করতে হবে।’’ সাফ কথা বলে অরণ্য।
কাজের প্রতি ডেডিকেশন থাকলেও সবাই ফ্লোরের বাইরে লোকনাথ ভেবে তাকে প্রণাম করুক, সেটা একেবারেই মানতে চায় না অরণ্য। ‘‘কেউ লোকনাথ ভাবলে একদম পছন্দ হয় না। তখন তো আমার উইগ থাকে না। ইচ্ছে করেই বলি, আমি লোকনাথের অভিনয় করি না।’’ দুষ্টু সুরে বলল অরণ্য। খাওয়ার প্রতি কোনও ভালবাসা নেই তার, কিন্তু টিনটিনকে খুব পছন্দ। শুটিংয়ের চাপে সিনেমা দেখার সময় হয় না। কিন্তু মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে একটু একটু করে ছবি দেখে অরণ্য। ‘‘অ্যাডভেঞ্চার জোজো দেখার খুব শখ। একটা-দু’টো দৃশ্য করে দেখে। বেচারা শুটিংয়ের চাপে পুরোটা শেষ করতে পারেনি এখনও,’’ বললেন অরণ্য-র মা অর্পিতা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।