বাংলাদেশে এখনও ঋষভের আত্মীয়রা থাকেন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সোমবার থেকে ঘুম উড়েছে। বাবা ঘন ঘন ঘর-বার করছেন। মায়ের চোখ ভেজা। বাবার দিকের সকলে ও পার বাংলায় থাকেন। কেমন আছেন তাঁরা? কিছু হল না তো...? এই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছি। সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়িতে ফোন আসছে। আমরাও করছি। ও পার বাংলায় বাড়ির লোকজন থাকার কারণে আমাদের প্রায় নিত্য যাতায়াত। বাবা দেশে যেতে পারছেন না বলে দুশ্চিন্তার কারণে আমরা কেউ খাওয়াদাওয়া করতে পারছি না।
আমার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে। গ্রামে সবুজের মাঝখানে যৌথ পরিবার। পড়শিদের নিয়ে বাংলাদেশের আর পাঁচজন যেমন থাকেন, তেমনই আমার কাকা, জ্যাঠা, তুতো ভাইবোনেরা থাকেন। আমাদের বাড়িতে কালীমন্দির রয়েছে। প্রতি বছর কালীপুজোয় সেখানে যাই। এমন শান্ত পরিবেশ নাকি উত্তাল এখন! বাড়ি কেউ আক্রমণ না করলেও নাকি চারপাশের অবস্থা দেখে আতঙ্কিত সবাই। আতঙ্কের আরও একটা কারণ আছে। আমার কাকা আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। ২০১২-য় তিনি প্রকাশ্যে খুন হন। সেই ভয়, যন্ত্রণা আবার আমাদের পরিবারকে গ্রাস করছে। ভাই ফোন করে জানিয়েছে, কাকিমা, বোনকে নাকি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দিয়েছে। এ পার বাংলায় এই কথাগুলি শুনতে শুনতে ছটফট করা ছাড়া উপায় কী?
গত রাতে ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা হচ্ছিল। আফসোস, বিরক্তি, হতাশা, ক্ষোভ— সব একাকার ওর গলায়। কোনও মতে কান্না গিলে ভাই বলছে, “শহরে আগুন জ্বলছে। গ্রামের পরিবেশ তুলনায় শান্ত এখনও। কিন্তু বিগড়ে যেতে কত ক্ষণ?” তার পরেই প্রশ্ন করেছে, “দাদা, ছাত্র আন্দোলন এ ভাবে বদলে গেল কেন?” আমার ভাইও ছাত্র। ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। জানাচ্ছে, সে সব নাকি মিটে যাওয়ার রাস্তাতেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ, দ্বিতীয় দফার আন্দোলনে নতুন করে উত্তাল পদ্মাপার। শেখ হাসিনা সরকারের পতন। অবাধ লুটতরাজে সরকারি সম্পত্তির পাশাপাশি বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবন। এই আন্দোলন কোনও ভাবেই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন নয়, তার সীমা পেরিয়ে গিয়েছে এই বিক্ষোভ।
আবার আশ্বাসের ছবিও রয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির রাত জেগে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। জানেন, আমাদের বাড়ির কালীপুজোতে নানা কাজে মুসলিম ভাইয়েরা অংশ নেন। বিশেষ করে রান্না, খাবারের দায়িত্ব ওঁদের উপরে দেওয়া হত। কিন্তু, বিভিন্ন বিভেদের দোহাই দিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। ভারতের মতো ওই দেশটাও তো আমার!
(লেখক টলিউডের অভিনেতা। মতামত নিজস্ব।)