তিনি বলিউডে বহিরাগত। নেননি অভিনয়শিক্ষণের প্রথাগত পাঠও। কিন্তু প্রতি ছবিতেই নিজেকে উজাড় করে দিতেন। অনুরাগীদের আক্ষেপ, রণদীপ হুডা বলিউড থেকে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক কম পেয়েছেন।
রোহতকের এক জাঠ পরিবারে রণদীপের জন্ম ১৯৭৬ সালের ২০ অগস্ট। তাঁর বাবা রণবীর হুডা চিকিৎসক এবং মা আশাদেবী একজন সমাজসেবী। চিকিৎসক হিসেবে রণবীরের কর্মজীবন কেটেছে বিভিন্ন দেশে। বেশিরভাগ সময় তিনি থাকতেন মধ্যপ্রাচ্যে।
দিদি অঞ্জলি এবং ভাই সন্দীপের সঙ্গে রণদীপের শৈশব কেটেছে তাঁর দিদার কাছে। বর্তমানে অঞ্জলিও একজন চিকিৎসক। কর্মরত আমেরিকায়। সন্দীপ একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি থাকেন সিঙ্গাপুরে।
ছোটবেলায় রণদীপ পড়তেন হরিয়ানার মতিলাল নেহরু স্কুল অব স্পোর্টসে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি সমানতালে চলত সাঁতার এবং ঘোড়সওয়ারি। জাতীয় স্তরে এই দু’টি স্পোর্টসে পদকও জয় করেছেন তিনি।
তাঁর বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল তিনি বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। পরবর্তীতে তাঁকে ভর্তি করা হয় দিল্লি পাবলিক স্কুলে। নতুন স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর সমস্যা হয়েছিল। স্বীকার করেছেন রণদীপ।
স্কুলপাঠের পরে রণদীপ পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তিনি বিজনেস ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর করেন। কিন্তু পাঠক্রমের প্রথম বছরেই তিনি অকৃতকার্য হন। ভয়ে সে কথা জানাতে পারেননি বাড়িতে।
বিদেশে নিজের খরচ চালানোর জন্য রেস্তোরাঁকর্মী, গাড়ির ক্লিনার, ওয়েটার এবং দু’ বছরের জন্য ট্যাক্সিচালকের কাজও করেছেন। বিকেল ৫ টা থেকে ভোর ৫ টা অবধি তিনি ট্যাক্সি চালাতেন।
২০০০ সালে ভারতে ফিরে আসেন রণদীপ। কাজ করেন এয়ারলাইন সংস্থায়। দিল্লিতে শখের থিয়েটারে অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও শুরু করেন তিনি। ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান মীরা নায়ারের কাছ থেকে।
২০০১ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘মনসুন ওয়েডিং’। ছবিটি প্রশংসিত হলেও রণদীপ হুডাকে পরবর্তী সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ৪ বছর।
তত দিনে দিল্লি থেকে মুম্বই চলে আসেন রণদীপ। ঘুরে ঘুরে কাজ জোগাড় করতেন তিনি। তবে মুম্বইয়ে প্রথম রাত তিনি কাটিয়েছিলেন থানায়। রগচটা বলে পরিচিত রণদীপ নাকি এক রিকশাচালককে কথা কাটাকাটির সময় থাপ্পড় মেরেছিলেন।
তাঁকে ছেড়ে দেননি সেই রিকশাচালকও। সোজা গিয়ে অভিযোগ জানান থানায়। ঘটনার জেরে রণদীপ রাত কাটিয়েছিলেন কারাগারে।
মুম্বইয়ে কয়েক বছর কাটানোর পরে রামগোপাল বর্মার সঙ্গে আলাপ হয় রণদীপের। তাঁকে রামগোপাল অপেক্ষা করতে বলেন। কোনও ছবিতে অভিনয়ে রাজি হতে নিষেধ করেন রামগোপাল। পরিবর্তে তিনি তাঁর প্রতি মাসের খরচ দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেইমতো মুম্বইয়ে প্রথম চার বছর ঘরবন্দি ছিলেন রণদীপ। তাঁকে প্রতি মাসে খরচবাবদ ৩৫ হাজার টাকা দিতেন রামগোপাল বর্মা। ২০০৫-এ তাঁকে নিয়ে ‘ডি’ ছবি তৈরি করেন রামগোপাল।
বক্স অফিসে ছবিটি না চললেও রণদীপের অভিনয় প্রশংসিত হয়। এর পর আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু একটাও বক্স অফিসে সফল হয়নি।
কেরিয়ার নিজের পায়ে না দাঁড়ালেও রণদীপের ব্যক্তিগত জীবন সে সময় মসৃণ ছিল। সুস্মিতা সেনের সঙ্গে তখন তাঁর সম্পর্ক ক্রমে গভীর হয়। দু’জনে ‘কর্মা অউর হোলি’ ছবিতে অভিনয় করেন।
শোনা যায়, তাঁরা লিভ ইনও করতে। কিন্তু রণদীপ পরে লিভ ইনের কথা অস্বীকার করেন। তিন বছর পরে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে রণদীপ বলেছিলেন, সুস্মিতার সঙ্গে ব্রেক আপ তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। কারণ সম্পর্কে থাকার সময় তিনি শুধু সুস্মিতার চাহিদা পূরণ করতেন। নিজের জন্য সময় পেতেন না।
২০১০ সালে ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই’ ছবির হাত ধরে কেরিয়ারে ঘুরে দাঁড়ান রণদীপ। এর পর ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’, ‘জন্নত টু’, ‘ককটেল’, ‘হিরোইন’, ‘মার্ডার থ্রি’, ‘বম্বে টকিজ’, ‘হাইওয়ে’, ‘কিক’, ‘সরবজিৎ’, ‘সুলতান’, ‘লভ আজ কাল’-সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
একটি ছবিতে নীতু চন্দ্রর সঙ্গে অভিনয় করেন। ক্রমে তাঁদের আলাপ ঘনিষ্ঠ হয়। সখ্যতা গড়ে ওঠে দুই পরিবারের মধ্যেও। কিন্ত পরে তাঁদের সম্পর্কও ভেঙে যায়।
কোনও সূত্র বলে, নীতুর বিয়ের প্রস্তাবে সে সময় রণদীপ রাজি ছিলেন না। আবার অন্য সূত্রের দাবি, ছবিতে রণদীপের অতিরিক্ত খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় মানতে পারেননি নীতু। এরপর অদিতি রাও হায়দরির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় রণদীপের। কিন্তু এই প্রেমও ছিল স্বল্পস্থায়ী।
কেরিয়ারেও কাঙ্খিত সাফল্য অধরা থেকে গিয়েছিল তাঁর জীবনে। ‘হাইওয়ে’ এবং ‘সরবজিৎ’-এর মতো ছবিতে প্রচারের সব আলো কেড়ে নেন রণদীপের সঙ্গে থাকা নায়িকারা।
একের পর এক ছবিতে তিনি ভাল অভিনয় করেছেন। কিন্তু প্রশংসা পেয়েছেন অন্য তারকারা। ২০১৭ সালে রণদীপ একটি ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তিনি শিখ ধর্মাবলম্বীর বেশে ছিলেন। সেটা ছিল একটি ছবির প্রস্তুতি। রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় দু’ বছর পরে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সেই প্রস্তুতির সময়টুকুই কাল হল। একই বিষয়ে তড়িঘড়ি ছবি বানিয়ে ফেললেন কর্ণ জোহর। অক্ষয় কুমারকে নামভূমিকায় রেথে ছবির নাম হল ‘কেশরী’। ফলে রাজকমার সন্তোষীর ছবিটি শেষ অবধি আর হলই না।
কেরিয়ারের টানাপড়েন বাধ সাধেনি রণদীপের ব্যক্তিগত তীবনে। তিনি নিজের শখপূরণের ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করেননি। দক্ষ ঘোড়সওয়ার রণদীপের ঘোড়ার সংগ্রহ ঈর্ষণীয়।
প্রত্যাশিত স্টারডম থেকে দূরে থাকা রণদীপ স্বল্প ছবিতে অভিনয় করেই মন জয় করে নিতে চান দর্শকদের।