ব্যোমকেশ বক্সীর দৃশ্য
এত বছর ধরে নানা ধরনের ছবি করলেও, লোকে আজও আমাকে ব্যোমকেশ বক্সী হিসেবেই সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে। দূরদর্শন যত বার টেলিকাস্ট করেছে টেলি সিরিজ়টা, তত বারই টিআরপি উঠেছে চড়চড়িয়ে। এর জন্য যে মানুষটির কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব, তিনি বাসু চট্টোপাধ্যায়। ‘যুগান্তর’-এ মাইকেল মধুসূদন দত্তের চরিত্রে কাজ করার পর তার পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাসু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। সঙ্গে ছিলেন পরিচালক সুব্রত সেনও। ওঁরাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। উনি তখন ব্যোমকেশের জন্য এমন কাউকে খুঁজছিলেন, যার মধ্যে ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ ব্যাপারটাও থাকবে, পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ত ভাবও। মিনিট দশেক কথা বলার পরেই আমাকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ওঁর। মনে আছে, সেই প্রথম ধুতি পরতে শিখেছিলাম আমি! সব ক’টি পর্বের প্ল্যানিংই আগে থেকে করে রেখেছিলেন উনি। টেলিভিশনের জন্য হলেও পুরো ফিল্মের মতোই শুট করেছিলাম আমরা।
সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত শুটিং চলত, বেশির ভাগই ইনডোর। তবে এখনকার মতো ১২-১৪ ঘণ্টা করে শুট করতে হত না আমাদের, সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৬-৬.৩০টা পর্যন্ত। কখনও কখনও রাতের শিডিউলও থাকত। আসলে ‘ওয়র্কোহলিক’ বলতে যা বোঝায়, তা-ই ছিলেন বাসু চট্টোপাধ্যায়। আর সেন্স অব টাইমিং, সেন্স অব হিউমর— দুই-ই প্রবল। ইনটেন্স দৃশ্যের মধ্যেও অদ্ভুত ভাবে হাস্যরস মিশিয়ে দিতে পারতেন! শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি করা সহজ-সরল, আদ্যন্ত ‘বাঙালি’ একজন ডিটেকটিভকে কী করে সারা ভারতের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে হয়, তা বোধহয় সবচেয়ে ভাল জানতেন এই মানুষটাই।
অনুলিখন: সায়নী ঘটক