ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
প্রথম ছবি ‘জানে তু ইয়া জানে না’-র (২০০৮) অমিতের চরিত্রেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। সেই ছবির এক দশক হতে চলল! তবু এখনও তিনি বুঝতে পারেন না, দর্শকের অমিতকে কেন এত ভাল লেগেছিল। তার পর ‘ধোবি ঘাট’, ‘দম মারো দম’, ‘আরক্ষণ’, ‘এক থা দিওয়ানা’, ‘ইশাক’ পরপর অনেক ছবি করলেন। কেরিয়ারের পথ দীর্ঘ হতে না হতেই অতীতের মাদকের নেশা জাঁকিয়ে বসল তাঁকে। হারিয়ে গেলেন ছবির জগৎ থেকে। রাজ ব ব্বর ও স্মিতা পাতিলের সেই পুত্র প্রতীক এ বার বাংলা ছবিতে। বিপরীতে পাওলি। সৌরভ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘অরণি তখন’ ছবিতে ‘বাংলা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট’ করেছেন প্রতীক। যদিও এখনও তিনি বাংলা বলতে পারেন না।
ছবিতে প্রতীক এক ধনী, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিকের ছেলের চরিত্রে। মাদকাসক্ত, মহিলা সংসর্গে ডুবে থাকে। প্রফেসর পাওলির প্রেমে পড়ে সে নিজেকে বদলাতে শুরু করে। তবে পাওলির জীবনে আছে অন্য কেউ। প্রফেসরের সঙ্গে তার প্রেমিকের মিলন করাতে তখন সে নিজের প্রেম ত্যাগ করে। হঠাৎ বাংলা ছবি কেন? ‘‘আমার বাবা-মা বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন। আর সৌরভদার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লেগেছিল। সঙ্গে ছবির গল্পটাও।’’ সহ-অভিনেত্রী পাওলি সম্বন্ধে কী বলবেন? ‘‘অসম্ভব পরিশ্রমী। ওঁর সঙ্গে কিছু ইমোশনাল দৃশ্য আছে। ছবির বাইরে যদিও খুব একটা মেলামেশার সুযোগ হয়নি।’’
কেরিয়ারের শুরুতে অভিনয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না প্রতীক। কী করছেন, কেন করছেন তা নিয়ে মনে জমেছিল প্রশ্ন। পর পর ছবি করতে করতে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেছিলেন। কিন্তু ২০১৩-র পরে মাদক, অবসাদের পাকচক্রে আটকা পড়ে যান। সেই প্রতীকই এখন নিজের অভিনয় নিয়ে এতটাই অবসেসিভ যে বললেন,‘‘শ্যুটিং সেটেই মরতে চাই।’’
প্রতীক কাজ করতে চান অনুরাগ কাশ্যপ, ইমতিয়াজ আলি, বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে। সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে পছন্দ রণবীর সিংহ, রণবীর কপূর, শাহিদ কপূরকে। প্রতীকের কথায়, ‘‘অভিনেতা রণবীর সিংহকে ভীষণ ভাল লাগে। তবে ওঁর নাটুকে রঙিন পার্সোনাটাকে নয়।’’ পছন্দের অভিনেত্রী বলতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলেন। তার পর প্রথমে বললেন দীপিকা, আর তার পরে প্রিয়ঙ্কার নাম।
কলকাতা কেমন লাগে? ‘‘ভীষণ ভাল। এই শহর পুরনো দিনের মায়া-জড়ানো। এখানকার মানুষ, পুলিশের পোশাক, চালচলন সব কিছুর মধ্যেই সেই নস্টালজিয়া।’’এর পরেও কি বাংলা ছবি করবেন? প্রতীকের কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশি কিছু বলব না। হাতে আছে বলিউডের প্রজেক্টও।’’
রাজ বব্বরের সঙ্গে প্রতীকের সম্পর্কের সমীকরণ খুব একটা মধুর নয় বলেই ঘনিষ্ঠ মহলে শোনা যায়। বাংলা ছবি করছেন শুনে বাবা কী বললেন? ‘‘বেটা খুশ রহো। সব কিছুতেই বাবা এটাই বলেন’’, কথাটায় একটু খেদ, একটু অভিমান মেশানো মনে হল! মায়ের ছবি দেখে কী মনে হয়? ‘‘এটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সেই অনুভূতি খুব গভীর এটুকু বলতে পারি।’’
জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন। মাকে যদি এই মুহূর্তে কিছু বলতে বলা হয়, কী বলতে চাইবেন? কণ্ঠস্বরটা বেশ খাদে নামিয়ে বললেন, ‘‘মা, তুমি কেন চলে গেলে? না গেলে তো আমার জীবনটা এমন হতো না। আমার বড় হওয়াটাও এমন হতো না।’’