কৌশিক রায়।
নতুন অধ্যায় শুরু করলেন অভিনেতা কৌশিক রায়। তাঁকে এই মুহূর্তে বাংলার সিংহভাগ দর্শক ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের সৌজন্য হিসেবে চেনেন। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিলেন তিনি। বিজেপির রাজ্য অফিসে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের পক্ষ থেকে পতাকা তুলে দেন কৌশিকের হাতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র খাঁ-সহ বিজেপির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বরা।
কৌশিক জানালেন, আগাগোড়াই রাজনীতিতে আসার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর মনে। বিভিন্ন দিক থেকে ডাকও পাচ্ছিলেন এই মুহূর্তে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অভিনেতা। কিন্তু এতদিন মনস্থির করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এ বার মানুষের এত ভালবাসার বিনিময়ে তাঁদের জন্য কাজ করার ইচ্ছেকে সম্বল করেই রাজনীতির আঙিনায় পা রাখলেন কৌশিক। মানুষের পাশে থাকতে তাই বিজেপিকে বেছে নিলেন অভিনেতা।
কৌশিক বলেন, “আমি একদম ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু পেশাগত ভাবে রাজনীতি করতে গেলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে আমি খুব প্রাদেশিক। নিজের জেলা, শহরের জন্য কাজ করতে চাই। যেহেতু আমি একজন অভিনেতা, মানুষের প্রত্যাশা আমার কাছে অনেক বেশি। তাই তাঁদের জন্য কাজ করতে হলে, মঙ্গলসাধনা করতে হলে আমাকে বিজেপির সঙ্গে থাকতে হবে। কারণ এটি একটি জাতীয় পার্টি এবং কোনও একজন ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল নয়।”
দিলীপ ঘোষের হাত থেকে দলের পতাকা নিচ্ছেন কৌশিক রায়।
মানুষের জন্য কাজ করার ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কৌশিক তাকিয়ে রয়েছেন দলের দিকে। অভিনেতা যে একজন ভাল নেতাও হতে পারেন, এই দলে থেকেই তা প্রমাণ করে দিতে চাইছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের টলিউডের একাংশের সঙ্গে তাঁর দলের প্রকাশ্য বিতণ্ডাও তাই বিশেষ ভাবাচ্ছে না তাঁকে। তিনি মনে করেন ‘ব্যক্তি’ কৌশিক এবং ‘রাজনৈতিক’ কৌশিকের মধ্যে পার্থক্য করে নিতে পারবেন তাঁর শিল্পী বন্ধুরা। রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হলেই বন্ধুত্ব ভেঙে যায় বলে মনে করেন না অভিনেতা।
দিন কয়েক আগে বিজেপির সদস্য তরুণজ্যোতি তেওয়ারি প্রকাশ্যে ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দিয়েছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তকে। দেবলীনার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলাকালীনই অভিনেতাদের মুখে রং মেখে ‘বাঁদর নাচ’-এর কথা বলেন তিনি । সেই প্রসঙ্গে কৌশিকের বক্তব্য, “মুখে রং তো শুধু অভিনেতারা মাখেন না। ফুটবলার, সাহিত্যিক, নেতা সকলেই টেলিভিশনে আসার আগে মেক আপ করেন। এই বিষয়ে আমি আলাদা করে কোনও কথা বলব না। সব বিষয়ে সব সময় কথা বলতে নেই, রাজনীতিতে এসে সবার আগে এটাই শিখেছি।”
নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চান কৌশিক। তাই এই মুহূর্তে শুধু কাজেমনোনিবেশ করবেন অভিনেতা। ভোটে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করেন তিনি। বললেন, “অভিনয়ের পাশাপাশি দলকে সময় দেব। যে ভাবে কাজ করতে বলা হবে করব।” পাশাপাশি সকলের উদ্দেশে তাঁর বার্তা“আমার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে যদি কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হন, তা হলে আমি তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
কৌশিক জানালেন, দলে তাঁর অবস্থান নিয়ে বর্তমানে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। সুতরাং পরবর্তী সময় তাঁর কী কাজ হবে, সে বিষয়ে এখনও কোন ও স্পষ্ট ধারণা নেই অভিনেতার। তবে ‘নেতা’দের নিয়ে মানুষের মনে যে চিরাচরিত ছবি রয়েছে, তা ধুয়েমুছে নতুন দিক দেখাতে চাইছেন তিনি। আপাতত তাই শিক্ষানবিশের মতো কাজ শেখার আগ্রহে ফুটছেন তরুণ অভিনেতা।