ভরত দেববর্মা, মুনমুন সেন পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সোমবার ‘পথের পাঁচালী’র ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্ত মারা গেলেন। একই আবাসনের বাসিন্দা। ফলে, সকালে খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। রাত কাটতে না কাটতেই ফের মৃত্যুসংবাদ। এ বার বন্ধু মুনমুন সেনের স্বামী ভরত দেববর্মার প্রয়াণের খবর। কী বলব বুঝতে পারছি না।
অনেক দিন ধরেই ভুগছিল ভরত, খবর পেয়েছিলাম। ওর সঙ্গে শেষ দেখা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ের রিসেপশনে। বাড়িতে ছাদপার্টির আয়োজন করেছিল পরমব্রত। সেখানে সপরিবার এসেছিল ভরত। তখনই দেখেছিলাম, সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে হাঁপাচ্ছিল। যে কারণে খুব বেশি হইচই করতে দেখা যায়নি ওকে।
ভরতকে নিয়ে বলতে বসে খুব মজার একটা কথা মনে পড়ছে। ‘অমরকণ্টক’ ছবিতে আমি আর মুনমুন অভিনয় করছি। একটি দৃশ্যে আমায় সাপে কামড়াবে। অজ্ঞান হয়ে যাব। মুন পায়ে মুখ দিয়ে বিষাক্ত রক্ত বের করে দেবে। কলকাতার হর্টি কালচারে শুটিং হচ্ছে। সুচিত্রা সেনের মেয়ে বাস্তবে প্রচণ্ড দুষ্টু। সেটে কী করল? পায়ে সত্যিকারের কামড় দিয়ে দাঁত বসিয়ে দিল! একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড। দৃশ্যের খাতিরে টুঁ শব্দ করতে পারছি না। শুটিং শেষ হতেই মুনের পিঠে দিলাম এক ঘা বসিয়ে। সব দেখে ভরত শান্ত গলায় রসিকতা জুড়ল, “ইঞ্জেকশন নিয়েছ?” হেসে ফেলে বললাম, ‘‘না না।’’ ভরত আরও শান্ত গলায় বলল, “তোমার কিন্তু ইঞ্জেকশন নেওয়া উচিত। জানো না, মুনমুন খুবই বিষাক্ত!” ওর রসিকতায় সেটের সবাই হেসে সারা।
ভরতের কথা এটুকুই। খুব পরিমিত, মিতভাষী, স্থিতধী এক রাজপুরুষ। ঠোঁটে সব সময় হালকা হাসি। আজীবন নেপথ্যে থেকে স্ত্রী, দুই মেয়ের শক্তি হয়ে রয়ে গেল। রাজপরিবারের ছেলেরা সাধারণত প্রচণ্ড সংস্কারী হন। ভরত উদারচেতা। তাই স্ত্রীকে অনায়াসে বিশ্বাস করে বিনোদন দুনিয়ায় কাজের অনুমতি দিয়েছিল। কত গুঞ্জন মুনকে নিয়ে। কোনও দিন টুঁ শব্দ করেনি! দেববর্মা পরিবারের নয়, আজীবন সেন পরিবারের পরিচয়ে জীবন কাটিয়ে গেল। কখনও সুচিত্রা সেনের জামাই, মুনমুন সেনের স্বামী, রাইমা সেনের বাবা। কোনও হীনম্মন্যতা ছিল না, আক্ষেপও ছিল না ভরতের। কেবল বড় মেয়ে রাইমার বিয়েটা দেখে যেতে চেয়েছিল। খুব শখ ছিল, মেয়ে সংসারী হবে।