বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
সকাল সকাল খবরটা পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের আলাপ। বলা যায়, তাঁকে দেখেই আমার রাজনীতিতে আসা। আজ অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতি মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে।
সততা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং রাজ্য ও দেশ নিয়ে যাঁর একটা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে, এ রকম রাজনৈতিক কর্মী খুবই কম। বুদ্ধবাবু সে রকমই এক জন। এখন তো চারপাশে ‘দেখনদারি’র রাজনীতি! বাড়ি, গাড়ি, অর্থ! বিপরীতে সারা জীবন সাধারণ এবং মানবমুখী জীবনযাপন করেছেন বুদ্ধবাবু। শিল্প এবং কৃষি— রাজ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে এই দু’টি বিষয়ের উপর তিনি সব সময় জোর দিয়েছিলেন। বাম আমলে তখন শুধু এসএসসি-র মাধ্যমে চাকরির সমস্যা দূর করা সম্ভব হচ্ছিল না। দূরদর্শী মানুষটি শিল্পের উপর জোর দিয়েছিলেন। কারণ তিনি চাইতেন পশ্চিমবঙ্গ যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়ে যায়! রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যেন এখানেই কাজ করে, বাবা-মায়ের কাছে থাকতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই প্রয়াস বাস্তবায়িত হয়নি।
বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। বহু অনুষ্ঠান বা দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কিন্তু তিনি খুব বড় মাপের মানুষ মনে হত না, নিজেই সেই পরিমণ্ডল ভেঙে বেরিয়ে আসতেন। অত্যন্ত সহজ ভাবে মিশতেন।
সত্যি বলতে, নাটক এবং সিনেমা সম্পর্কে তাঁর আধুনিক চিন্তাভাবনা আমাকে অনুপ্রাণিত করত। এক দিকে যেমন আগ্রহ, তেমনই কী কী সমস্যা তা জানতে চাইতেন এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন। একসময়ে কলকাতা শহরে খুব বেশি নাট্যমঞ্চ ছিল না। তাঁর আমলেই কিন্তু একের পর এক মঞ্চ তৈরি হয়েছে। বুদ্ধবাবু খুব ধূমপান করতেন। একান্ত অবসরে আমি সামনে থাকলে অনেক সময়ে সিগারেটটা এগিয়ে দিতেন। আমাদের তখন বয়স কম। তখন লজ্জায় বলতাম যে ধূমপান করি না। এ রকম নানা ঘটনার সাক্ষী থেকেছি। আজ সেই স্মৃতিই বার বার মনের মধ্যে ফিরে ফিরে আসছে।
(লেখক অভিনেতা এবং সিপিএম কর্মী। মতামত ব্যক্তিগত)