আসছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’। —নিজস্ব চিত্র।
বড়দের কথা, বড়দের অন্দরমহল নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি ধারাবাহিক। ছোটদের কথা কেন কেউ ভাবে না?
সম্ভবত এই ভাবনা থেকেই আনলক পর্বে ছোটদের জন্য বড় উপহার নিয়ে আসছে জি বাংলা। ২৭ জুলাই থেকে ছোট পর্দায় প্রথম সম্প্রচারিত হতে চলেছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপকথা ‘ক্ষীরের পুতুল’। যেখানে রাজা স্যমন্তক আছেন তাঁর দুই রানিকে নিয়ে। আর আছে বানর কুমার, পক্ষীরাজ ঘোড়া, কথা বলা পাখি, আরও কত্তো কী!
গলার মুক্তোর মালার ওজন ১ কেজি
সদ্য শেষ হওয়া ‘নকশি কাঁথা’র কেন্দ্রীয় চরিত্র সুমন দে ওরফে যশোজিৎ ভোল বদলে রাজা স্যমন্তক। কমন ফ্যাক্টর একটাই। আগের ধারাবাহিকেরও তাঁকে নিয়ে দুই নারীর টানাপড়েন ছিল। এবারেও রাজার দুই রানি, দুয়ো আর সুয়ো। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর, ১০ বছর আগে, ২০১০-এ সাহারা ওয়ান চ্যানেলে হিন্দি পৌরাণিক ‘মাতা কি চৌকি’তে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় সুমনের কাছে নতুন নয়। ফলে, খুব বেশি চর্চা তাকে করতে হয়নি সম্ভবত।
আরও পড়ুন: দেশে প্রথম করোনার পরীক্ষামূলক টিকা নিলেন দিল্লির এই যুবক
এমন ধারণার কথা প্রকাশ্যে আসতেই সুমনের তীব্র প্রতিবাদ, ‘‘১০ বছরে অনেক কিছু ভুলে গেছি। এই ধরনের কোনও চরিত্রে অভিনয়ও করিনি। ফলে, শুরু থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।’’ যেমন? ‘‘রাজার মেজাজ আনতে ‘পদ্মাবত’, ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘যোধা আকবর’, ‘বাহুবলী’ দেখেছি। প্রথম এপিসোডেই যুদ্ধে যাব। ফলে, ছবির যুদ্ধের দৃশ্য খুঁটিয়ে দেখেছি। ঘোড়া চালানো আলাদা করে শিখিনি। নিজে নিজেই ব্যাপারটা করতে পেরেছি। তলোয়ার চালানো শিখতে হয়েছে। রাজা স্যমন্তক বাঁশি বাজাতে পারে। ফলে, ইউটিউবে পার্থ চন্দ্রমণির ভিডিয়ো দেখে কী ভাবে বাঁশি ধরলে মনে হবে সত্যিকারের বাজাচ্ছি, সেটাও অভ্যেস করতে হয়েছে। কত ভারী কস্টিউম রোজ গায়ে চাপাতে হচ্ছে। গলার মুক্তোর মালার ওজনই তো এক কেজি!’’
স্যমন্তকের দুয়োরানি ‘সুধা’ হিসেবে দেখা যাবে সুদীপ্তা রায়কে
যশোজিৎ, পেশায় চিকিৎসক থেকে কাট টু রাজামশায়। সুইচ অফ হতে সময় লেগেছে? ‘‘তা তো লেগেইছে। দেড় বছর আমি চরিত্রের স্টাইলে চুল কাটতাম। এবার একদম ছোট করে চুল ছেঁটে ফেলেছি, উইগ পরতে যাতে অসুবিধে না। হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি রূপকথার চরিত্রের সঙ্গে’’-- সোজাসুজি আত্মসমর্পণ সুমনের। গত তিন মাস ধরে নাকি একদম শাকাহারি সুমন!
এবার কি কচি অনুরাগীদের অভিনয় দিয়ে দলে টানার চেষ্টা করবেন ‘স্যমন্তক’? "একদম", জানালেন সুমন। বললেন, "বাচ্চাদের নিয়ে খুব বেশি কিছু তো হয় না। ফলে, স্পেশালি ওদের জন্য কিছু হলে ওরা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে দেখে। ভাল লাগলে রেসপন্স করে। রাস্তায়ঘাটে দেখে চিনতে পারলে ঘিরে ধরে, অটোগ্রাফ চায়। এটা আলাদা তৃপ্তি।" সুমন এবার সেই আনন্দে ডুবতে চাইছেন।
‘মেজাজটাই তো আসল রাজা’ অভিনয়ের ক্ষেত্রে, জানেন সুমন। তাই মন বশে রাখতে অভিনেতা কী করেছেন জানেন? গত তিন মাস ধরে টানা মেডিটেশন করেছেন। ‘‘বহু বছর পরে আবার গ্রাফিকে অভিনয় করব। ছোট্ট উদাহরণ দিই, অনেক সময় ক্রোমায় বেঞ্চে বসে দোলনায় চাপার ফিলিংস আনতে হবে। তার জন্য প্রচুর মনঃসংযোগ দরকার। শুধু চলনে-বলনে নয়, আগামী দিনগুলোয় মনেও যাতে রাজামশাই হয়ে উঠতে পারি, তার জন্য। অভিনয়ের জন্য আমার এই স্পেশ্যাল টাস্ক," মন্ত্রগুপ্তি শেষ পর্যন্ত ফাঁস করেই ফেললেন সুমন।
স্যমন্তকের দুয়োরানি ‘সুধা’ হিসেবে দেখা যাবে সুদীপ্তা রায়কে। শ্রীতমা রায়চৌধুরী রাজামশাইয়ের সুযোরানি ‘সাগরিকা’। সুধা ওরফে সুদীপ্তা ফার্স্ট ইয়ারেই বানর কুমার আর ক্ষীরের ছেলের মা। বন্ধুরা নিশ্চয় ভীষণ পেছনে লাগছে? শুনেই ঝরঝরিয়ে হাসি দুয়োরানির মুখে, “হ্যাঁ, পেছনে লাগছে। আবার কৌতূহলীও। কী করে কোনটা হচ্ছে বা হবে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আগেভাগেই জেনে নিচ্ছে।”
“সুয়োরানি আসলে জাদুকরী। ফলে, নানা ম্যাজিক দেখতে পাবে”
কেন আজকের বাচ্চারা 'ক্ষীরের পুতুল' দেখবে বলে মনে করছেন সুদীপ্তা? বড় রানির থেকে উত্তর এল, “সুয়োরানি আসলে জাদুকরী। ফলে, নানা ম্যাজিক দেখতে পাবে। আমার সঙ্গে থাকবেন ষষ্ঠী ঠাকরণ, বাঁদর কুমার এবং ক্ষীরের ছেলে। যার বিয়ে দেওয়া নেওয়া বিশাল কাণ্ড। এ সব মজার কারণেই বাচ্চারা 'ক্ষীরের পুতুল'-এর আকর্ষণ এড়াতে পারবে না”। গল্পে মুখপোড়া বাঁদরের বিশাল ভূমিকা আছে। সেটি দেখানো হবে গ্রাফিকে। এ ছাড়া থাকবে সত্যিকারের ঘোড়া, একদম প্রাথমিক পর্যায়ে গরু ইত্যাদি।
হ্যারি পটারের সঙ্গে পাল্লা দেবে ক্ষীরের পুতুল
প্রায় এক যুগ কেটে গেছে ছোটদের ধারাবাহিক তৈরি হতে। এর আগে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ পর্দায় এলেও জনপ্রিয় হয়নি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই দায়িত্ব কি গুরুভার লাগছে? ‘ক্ষীরের পুতুল’ নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে প্রশ্নটা না করে থাকা যায়নি পরিচালক অমিত দাসকে। খুব সহজ করে নিজের অবস্থান তক্ষুণি বুঝিয়ে দিলেন অমিত, ‘‘আমি এর আগে ‘সাত ভাই চম্পা’ করেছি। সেই সময়েও হয়েছিল, এবারও মনে হচ্ছে, ছোটবেলা যেন ভিড় করে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। তখন যেগুলো পড়ে, জেনে বিস্মিত হতাম, এখন সেগুলো বানাতে গিয়ে মজাও লাগছে। আবার ভীষণ সাবধানে বানাতে হচ্ছে। কারণ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, 'ক্ষীরের পুতুল'-এর সঙ্গে বাঙলির নস্ট্যালজিয়া, সেন্টিমেন্ট জড়িত।’’
‘মেজাজটাই তো আসল রাজা’ অভিনয়ের ক্ষেত্রে, জানেন সুমন
ঝুঁকি আরও একটা আছে। তথাকথিত ড্রইংরুম ড্রামা নয়। টিআরপি নিয়ে কি চিন্তা থেকেই যায়? এই যুক্তি কিন্তু মানতে নারাজ পরিচালক। বরং তাঁর পাল্টা যুক্তি, রূপকথার এখনও আলাদা আকর্ষণ আছে ছোট-বড় সব বয়সের কাছে। ফলে, এই ধরনের ধারাহিকের রেটিং খুব একটা পড়ে না। কথা বলা পশুপাখি, বাঁদর অনেকটাই গ্রাফিক, যুদ্ধের দৃশ্যে অভিনয়, বাচ্চারা ভীষণ পছন্দ করে। ফলে, টিআরপি নিয়ে চিন্তা নেই।
কিন্তু এখনকার বাচ্চারা তো রূপকথা বলতে হ্যারি পটার বোঝে। ‘ক্ষীরের পুতুল’ পারবে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে? অমিত কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, ‘‘এ কথা মাথায় যে আসেনি তা নয়। তাই খুব সূক্ষ্ম বদল আনা হয়েছে গল্পে। হ্যারি পটারের মতোই এখানকার বহু প্রাণী আকাশে উড়বে। স্পেশ্যাল এফেক্ট থাকবে। ফলে, বাচ্চাদের ভাল লাগবে। 'সাত ভাই চম্পা'-র সময় দেখেছি, গ্রামের বাচ্চাদের ভীষণ পছন্দ সমস্ত চরিত্র। এবার যেহেতু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা তাই আশা, গ্রামের পাশাপাশি শহরও আগ্রহী হবে।’’
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ, রয়েছেন কোয়রান্টিনে
লকডাউনে ছোটরা সারাক্ষণ অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত। কী মনে হচ্ছে, রাত আটটার স্লট তাদের জন্য ঠিক আছে? পরিচালকের যুক্তি, "ছোটদের একবার যদি ভাল লেগে যায়, আগে-পরে পড়াশোনা করে ঠিক সময় বের করে নেবে ‘ক্ষীরের পুতুল’-এর জন্য।"