ফেসবুক শানাচ্ছে বাংলা কলম

ই-দুনিয়ায় ভাষাচর্চা। কখনও মজাদার কোট্‌স, কখনও কাল্পনিক সংলাপ। হরদম জন্মাচ্ছে নিত্যনতুন গ্রুপ। লিখছেন সোমঋতা ভট্টাচার্য।কৃষ্ণ - আরে আমার কাছে দু’শো বাইশ স্লাইডের একটা দুর্দান্ত মোটিভেশনাল প্রেজেন্টেশন আছে। হাউ টু ওয়ার্ক হ্যাপিলি উইদাউট গেটিং টেন্সড অ্যাবাউট দি আউটকাম। জাস্ট চমৎকার। দাঁড়াও প্রোজেক্টর অন করি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০০:০৩
Share:

‘‘অর্জুন - নাহ। গা ম্যাজম্যাজ করছে ভাই। আজ যুদ্ধ থাক।

Advertisement

কৃষ্ণ - আরে আমার কাছে দু’শো বাইশ স্লাইডের একটা দুর্দান্ত মোটিভেশনাল প্রেজেন্টেশন আছে। হাউ টু ওয়ার্ক হ্যাপিলি উইদাউট গেটিং টেন্সড অ্যাবাউট দি আউটকাম। জাস্ট চমৎকার। দাঁড়াও প্রোজেক্টর অন করি।

অর্জুন - না ভাইটি। পাওয়ার পয়েন্ট বরং থাক। দাও। গাণ্ডীব ফাণ্ডীব যা আছে দাও।’’সৌজন্যে ‘বং পেন’।

Advertisement

তালিকায় শুধু তারা একা নয়। ‘দ্য বাথরুম থিঙ্কার’, ‘দ্য বং ডায়েরি’, ‘ঘ্যাঁঘাসুর চালিশা’, ‘শব্দবাজি’, ‘তাশু’, ‘বঙ্গবুলি’রাও রয়েছে স্বমহিমায়। এরা সকলেই এক-একটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেজ। ভাষা নিয়ে মজা করার, ছোট ছোট শব্দ বা বাক্যবন্ধ সাজিয়ে ফেসবুকে বং-দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার ট্রেন্ডে সামিল সকলে। অনবরত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ‘কোট’-এর কারসাজি। কোনও কোনওটা দেখলে মনে হয়, নিউ-এজ কোনও বিজ্ঞাপনী পাঞ্চলাইন।

ভাষা-অক্ষর-শব্দ নিয়ে খুব খানিকটা নাড়াচাড়া। তা সে বাংলা হোক বা ইংরেজি। কখনও এক লাইনে, কখনও দু’টো শব্দে, কখনও আবার কয়েক লাইনের কথোপকথনের মাধ্যমে। তবে কলমে নয়, কিবোর্ডে। মূল অস্ত্রটা যদিও ‘পান’, ‘হিউমার’, ‘স্যাটায়ার’। কখনও ক্ষুরধার ব্যঙ্গের চাবুক, কখনও নিছক অনাবিল মজা বা নেহাতই ইয়ার্কি। চারপাশে অনবরত যা যা ঘটছে, বা ঘটেছিল পুরাকালে- সেগুলোকে নতুন মোড়কে নিয়ে আসা ই-জনতার কাছে। তাদেরও বুদ্ধির গোড়াকে খানিক উস্কে দেওয়া।

‘বাঙালির প্রেম’ থেকে ‘বাঙালির পরীক্ষা’, মায় ‘বাঙালির হর্মোন’ পর্যন্ত এক লাইনে হাসির খোরাক দিচ্ছে ফেসবুকে। সৌজন্যে ‘ঘ্যাঁঘাসুর চালিশা’। কী রকম? ‘‘ভাই কপালে এত দই দিয়েছিস যে ইচ্ছে করছে দু’টো চিঁড়ে মেখে খেয়ে নিই!’’ ‘‘বাথরুমে গিয়ে দ্যাখ! পুরো মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কাগজের টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে!’’ ‘বাঙালির খিল্লি/খিল্লির বাঙালি’— নিজেদের পরিচয়ে ফেসবুকে সোজাসাপ্টা এটাই লিখেছে ‘ঘ্যাঁঘাসুর চালিশা’।

কখনও আবার শব্দের ম্যাজিক দেখিয়ে ভাষাটাকে আরও একটু ভালবাসানোর চেষ্টা। বা বলা ভাল, টুকটাক যে শব্দের ভুলগুলো হয়েই চলে আকছার, সেগুলোকে একটু চিনিয়ে দেওয়া। এমনটাই করছে ‘শব্দবাজি’। ‘‘দাদা, রবীন্দ্রসদন বাঁধবেন…’’/ ‘‘দড়ি এনেছেন?’’/ ‘‘অ্যাঁ, দড়ি কেন? … ওহ, ইয়ে মানে, থামাবেন একটু!’’ অথবা ‘‘কথাবাত্রা কিছু এগোলো নাকি?’’/ ‘‘বাত্রা? কে বাত্রা? ডঃ বাত্রা আর পূজা বাত্রার ভাই হয় নাকি?’’/ ‘‘… ইয়ে মানে কথাবার্তা’’।

এখন তো আর শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপে নয়। ফোনেও সারাদিন অনবরত আপডেট! স্ক্রিন থেকে চোখ সরানোরও জো নেই। নিন্দুকেরা বলে থাকেন, ফেসবুক-প্রজন্ম বড় অসামাজিক। কিন্তু এ খেয়াল কি তাঁরা রাখেন, মিনিটে-মিনিটে কত গভীরে ঢুকে বাংলা ভাষার খনি খুঁজে আনা চলছে হরদম! সুকুমার রায় থেকে বিভূতিভূষণ। কমলকুমার থেকে জীবনানন্দ। সকলের সৃষ্টি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। ‘কবিতার গাছ’-এ চলছে প্রিয় কবির কাব্যপাঠ। ‘রসেবশে’তে প্রিয় পঙক্তি, উদ্ধৃতি নিয়ে আড্ডা। বিষয়ের কোনও বাউন্ডারি নেই সত্যিই। এই যে সদ্য বিয়ে হয়ে গেল প্রীতি জিন্টার। কতশত প্রাণে ঘা দিয়ে গেল সেই খবর! ‘বং পেন’-এ (যেটা তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের ব্লগ) অমনি লেখা হল, ‘‘-অত মন দিয়ে কী লিখছিস? - চিঠি। - কাকে? - প্রীতিকে। - মুন্সী?- চিন্তা। - হেহ। ফ্যান লেটার। - নাহ। মন ভাঙার হিসেব। দড়াম করে বিয়ে করে ঠিক করেনি। চারটে কথা লিখতেই দতো প্রী-কে। - আদিখ্যেতা। - কেন? - গা জ্বলে যায়। - কেন? - এ চিঠি লিখে কী হবে? - অপটিমিজম। - গাধামো। - আমি তোর ইকনমি পাল্টাতে চেয়ে ভোট দেওয়াকে গাধামো বলেছি কখনও?’’

সময় পাল্টাচ্ছে দ্রুত। বলা-লেখা তো পাল্টাবেই। আরও ঝরঝরে হবে, হবে আরও স্মার্ট। তাই ভরসা থাকুক মাউসের ক্লিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement