কাছের মানুষদের কেউ কুরুচিকর মন্তব্য করলে কী ভাবে সবটা সামলান আবীর? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ‘ফাটাফাটি’ গল্পের মূল ফোকাসই নায়িকার উপর, তা-ও ছবিটা করতে রাজি হলেন?
আবীর: আমার মনে হয়েছিল গল্পটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি জানি একটা ছবি দেখেই যে সকলের দৃষ্টিভঙ্গি একদম পাল্টে যাবে, তা নয়। তা-ও কোনও কোনও গল্প বলার প্রয়োজন থাকে। সিনেমা, থিয়েটার, টেলিভিশন সব সময়ই বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে। কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি মানুষকে জ্ঞান দেওয়ার বদলে সুন্দর করে গল্পের মাধ্যমে বলা যায়, তা হলে সেটা আমার নিজের পছন্দ হয়। তা ছাড়া আমার চরিত্রটাও আমায় খুব নাড়া দিয়েছিল। নৈতিক আদর্শের জন্য সে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ায় না। বরং খুব স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়ায়, স্ত্রীকে ভালবাসে বলে। তাতে আমার চরিত্রটাকে অনেক বেশি রক্তমাংসের মনে হয়েছিল। ফলে রাজি হয়ে যাই।
প্রশ্ন: ‘বডিশেমিং’ বিষয়টা শুনলেই মেয়েদের কথা হয়তো আগে মাথায় আসে। কিন্তু পুরুষদেরও তো এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?
আবীর: একদমই। ছোটবেলায় আমরা বন্ধুদের মধ্যে কত জনকে ‘এই মোটা, এই টেকো’ বলে ডাকতাম। অথচ বুঝতেই পারতাম না, এতে তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব হতে পারে। আসলে এই বিষয়গুলো খুবই মনের গভীরে ঢুকে রয়েছে। অনেক আগে বলা হত, পুরুষমানুষ তো সোনার আংটির মতো, তার আবার সোজা-ব্যাঁকা কী! মানে, পুরুষ হলে কোনও খুঁত হতেই পারে না। তাই আমরা বুঝতামই না যে, এক জন পুরুষও সমপরিমাণ অপমান ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। তাই জন্যই আমাদের এই ধরনের গল্পগুলো বলার দায়িত্ব বেড়ে যায়।
কেন নারীকেন্দ্রিক ছবির নায়ক হতে রাজি হলেন আবীর? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: নায়কসুলভ চেহারা তৈরি করার চাপও তো কম থাকে না। সেই কারণেই কি একটা সময়ের পর আপনি জিমে গিয়ে নিজেকে গ্রুম করা শুরু করলেন?
আবীর: আমি শো-বিজনেসে রয়েছি। দর্শকের প্রতি আর আমার ছবির নির্মাতাদের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব রয়েছে। তারা তো শুধু পয়সা নয়, আমার পিছনে অনেকটা সময়ও বিনিয়োগ করছেন। এবং পাশাপাশি যে চরিত্রগুলো করছি, সেগুলোর জন্যেও মানানসই হয়ে উঠতে হবে। যদি এমন কোনও চরিত্র করি যে প্রচণ্ড আর্থিক অনটনের মধ্যে আছে এবং তার ঠিক করে দিন গুজরান হয় না, সে ক্ষেত্রেও আমায় সেই মতো চেহারা তৈরি করতে হবে। যদি বডিবিল্ডারের চরিত্র করি, তা হলে সে রকম চেহারা বানাতে হবে। তাই অভিনেতাদের জন্য এই বিষয়গুলোর মাপকাঠি অনেকটাই আলাদা। যদি কেউ আমাদের বলেন, ‘একে এটায় ভাল লাগছে না’, তা হলে সেটা কিন্তু মেনে নিতে হবে।
প্রশ্ন: সারা ক্ষণই তো সেই নজরদারির মধ্যেই থাকতে হয়। হাঁপিয়ে ওঠেন না?
আবীর: শুধু শারীরিক কেন, আমাদের সব বিষয়েই নজরদারি চলে। এখন তো আবার মতামতের যুগ। সকলেই নিজের মতামত ‘পেশ’ করে। তবে সময়ের সঙ্গে আমরাও আরও পরিণত হয়েছি। মেনে নিয়েছি, এই বিষয়গুলো থাকবে। সবই তো নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
প্রশ্ন: নিজেরটা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কাছের মানুষদের কেউ কুরুচিকর মন্তব্য করলে গায়ে লাগে না?
আবীর: আমি সদর্পে বলতে পারি, ‘ফাটাফাটি’ ছবির নায়কের ভূমিকায় আমি ছাড়া আর কে অভিনয় করবে? আমার বাড়ির ঘনিষ্ঠতম মানুষটিকে সারা ক্ষণ কটাক্ষের শিকার হতে হয় এবং হচ্ছে। রোজ দেখি। আমি তাই গোটা জার্নিটাই জানি। কতটা কঠিন পথ, কতটা নজরদারির মধ্যে সারা ক্ষণ থাকতে হয়, কতটা অপমান সহ্য করতে হয়, সবটাই আমার দেখা। এখনই যদি আপনার সামনে যে কোনও সমাজমাধ্যমে ছবির নীচে মন্তব্যগুলো পড়ি, তা হলেও কয়েকটা দেখতে পাব। আমি এটুকুই বলব, যাঁরা করছেন, তাঁদের শুধু সুস্থতা কামনা করতে পারি। যদিও জানি, হবে না (হাসি)। আমি ছবির ড্রাফ্ট শুনেই অরিত্রকে (মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) বলেছিলাম, ছবিটা আমি করবই। কারণ নিত্য দিন আমি এই নিয়েই বাঁচি।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ‘উইন্ডোজ়’-এর সঙ্গে আপনার পরের ছবি ‘রক্তবীজ’। শিবপ্রসাদ (মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) আপনাকে অ্যাকশন হিরো হিসাবে দেখে মুগ্ধ..।
আবীর: (হাসি..) হ্যাঁ, আনন্দবাজার অনলাইনে শিবুদা এই নিয়ে লিখেছিল। সেখানে আমার অ্যাকশন দৃশ্য নিয়ে এত খুঁটিনাটি দেওয়া ছিল যে, মা পড়ে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। তার পর আমার শাশুড়িও আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘এতটা করার কী দরকার ছিল!’’ আসলে চরিত্রটার এটা প্রয়োজন ছিল। ছোটবেলার অমিতাভ বচ্চনকে দেখে হিরো ওয়ারশিপ করা শুরু। তাই এমন একটা চরিত্র করতে পেরে বেশ মজাই লেগেছে।
প্রশ্ন: এখন সকলেই পুজোর স্লটের জন্য কাড়াকাড়ি করেন। আপনার পুজো তো এ বার জমজমাট?
আবীর: পুজোয় ‘রক্তবীজ’ মুক্তি পাবে। এই ছবির পরিকল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছিল। আগে থেকে জানা থাকলে পুজোর পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। তবে শুধু পুজো কেন, আমি অন্য যে কোনও সময় চেষ্টা করব, যেন এক দিনে আমার একটা করেই ছবি মুক্তি পায়। নিজের কাজের উপর ওইটুকু নিয়ন্ত্রণ এখন রাখতে পারি।
প্রশ্ন: আপনার এই মুহূর্তে আর কোনও ব্যোমকেশের ছবি আসছে না। অথচ আরও অনেকের ব্যোমকেশ ছবির ঘোষণা হয়েছে। সেই বিষয়ে আপনার কী মত?
আবীর: সকলের নিজের মতো করে চেষ্টা করার স্বাধীনতা রয়েছে। এবং তাঁরা করবেনই। ২০১৮ সালেই বলেছিলাম, আমি আর ব্যোমকেশ করতে চাই না। অন্যান্য চরিত্র করতে চাই। ২০২২ সালে ফের ব্যোমকেশ করার অন্যতম কারণ ছিল, সে সময় সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছিল, এমন কিছু কাজ করতে হবে যাতে দর্শক হলে ফেরেন। আমরা জানতাম, অন্য ছবির তুলনায় দর্শক টানার ক্ষমতা ব্যোমকেশের অনেক বেশি। তাই ‘হত্যামঞ্চ’ করি। না হলে আমি আরও কিছুটা বিরতি নিয়ে এই চরিত্রে ফিরতে চেয়েছিলাম। আমার সাতটা ব্যোমকেশ করা হয়ে গিয়েছে। আরও অনেকে করছেন। এত ঘন ঘন আরও ব্যোমকেশ করা আমার অন্তত কোনও প্রয়োজন মনে হচ্ছে না। ব্যোমকেশ আমায় যতটা পরিচিতি, জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতি দিয়েছে, আমার মনে হয় আমারও ব্যোমকেশ চরিত্রটার প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে আমি এই চরিত্রে আর অভিনয় করার তাগিদ অনুভব করছি না।