অভিষেক বচ্চন আসবেন আমার বাড়িতে!
হঠাৎ একদিন মা ফোন করে বললেন, আমাদের বাড়িতে সিনেমার শ্যুটিং হবে। আমি তো প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আনন্দ, প্রস্তুতির উদ্বেগ! ঠিক করে উঠতে পারছি না আমরা...
এর কয়েক দিন পরেই একটা ফোন আসে আমার কাছে। আমাদের বাড়িতে হিন্দি ছবির একটি অংশ শ্যুট করা হবে। প্রথমে আমার ঘোর আপত্তি ছিল। মা বৃদ্ধ। এত লোকজন এসে বাড়িতে হইচই করলে তাঁর অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু অভিষেক বচ্চন, মানে অমিতাভ বচ্চনের ছেলে, মানে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের স্বামী... ভাবতে ভাবতেই আমি রাজি!
কথা মতো শ্যুট শুরু।
অভিষেক খুন করে মৃতদেহ জঙ্গলে নিয়ে যাচ্ছেন…
এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। গত মার্চ মাসের ১১, ১২ এবং ১৩ তারিখে আমাদের বাড়িতে ওঁরা শ্যুট করেছিলেন। আমার চেনা কমিন্ট পার্ক তখন অনেকটা অন্য রকম। বাড়ির সামনে পাড়ার লোকেরা ভিড় জমিয়েছেন। সব সামলে তার মধ্যেই শুরু হল শ্যুটিং। বব বিশ্বাস, অর্থাৎ অভিষেক বচ্চন এক চরিত্রকে খুন করবে। শুধু তাই নয়। তাঁর মৃতদেহ টেনে জঙ্গলেও নিয়ে যাবে। আমরা ভেবেছিলাম, অভিষেক হয়তো সেই অভিনেতাকেই সত্যি টানতে টানতে জঙ্গল অবধি নিয়ে যাবেন। কিন্তু কোথায়! সে রকমটা মোটেই হল না। দেখলাম অভিষেক একটা ডামির সঙ্গে দৃশ্যটি শ্যুট করলেন। অথচ মুখের অভিব্যক্তি কিন্তু নিখুঁত। মনে হচ্ছে সত্যিই কোনও মানুষকে খুন করে নিয়ে যাচ্ছেন! আগে ভাবতাম এ রকম কোনও দৃশ্যে অভিনেতাকেই বোধ হয় এ ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই প্রথম জেনেছিলাম ডামি ব্যবহারের কথা। অবাক হয়েছিলাম। বাড়িতে এসেছিলেন কাঞ্চন মল্লিকও। তিনিও অভিনয় করছেন।
অভিষেক বচ্চন এবং কাঞ্চন মল্লিককে দেখা যাবে এক ফ্রেমে
যা শুনেছিলাম সবটা মিলে গেল!
ভোর ৬টা থেকে সন্ধে ৭টা অবধি আমাদের বাড়িতে শ্যুট হওয়ার কথা ছিল। তবে তিন দিনের মধ্যে দু’দিনই ওঁরা গভীর রাতে কাজ করেছিলেন। কাজের সময় বাড়ির কারও সে দিকে যাওয়া নিষেধ ছিল। মিডিয়া ঢুঁ অবধি মারতে পারেনি। তবে একই ফ্লোরে শ্যুটিং হওয়ায় কিছুটা দেখতে পেতাম বটে। অভিষেক, পরিচালক, দু’জনেই কাজের সময় খুব অল্প কথার মানুষ এবং ফোকাসড। আগেও শুনেছি, অভিষেক খুব মন দিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে কাজ করেন। কথাটা মিলে যেতে দেখলাম। অবলীলায় পরিচালকের মনের মতো শট দিয়ে একদম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্যাক আপ করে ফেলতেন তিনি। কখনওই কোনও সমস্যা বা কাজ নিয়ে মনোমালিন্যের আঁচ পাইনি।
তখন আমরা অভিষেক বচ্চনের প্রতিবেশী!
আমার বাড়িতে শ্যুটিংয়ের সময় বেশ কিছু বদল আনা হয়। যেমন বাড়ির বাইরেটা নতুন করে রং করান পরিচালক। ঘরের ভিতরটা যদিও খুব বেশি পরিবর্তন করেননি। ওঁদের একটু পুরনো লুক দরকার ছিল বোধহয়। তাই আমাদের কিছু আসবাব সরিয়ে ওঁরা নিজেদের পছন্দসই ওয়াল হ্যাঙ্গিং এবং আরও অন্যান্য আসবাব ব্যবহার করেছিলেন। আমাদের কলপাড়টা উঁচু করার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন তাঁরা। যা বুঝলাম, আমাদের বাড়িটাকে দেখানো হবে ছবির অন্য এক চরিত্রের বাড়ি হিসাবে। আর ঠিক তার পাশেই অভিষেকের বাড়ি হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিম সেট। মানে তখন আমরা অভিষেক বচ্চনের প্রতিবেশী!
এত লোকের মাঝে কথা বাকি থেকে গেল…
নিজের বাড়িতে অভিষেক বচ্চন শ্যুট করলেন ঠিকই। কিন্তু কখনও কথা বলা হয়ে উঠল না। কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতেন ওঁরা, মনে হতো কথা বলতে গেলে যদি ব্যাঘাত ঘটে! তখনও করোনা মহামারি আমাদের এখানে এতটা প্রকট নয়। মনে হয়েছিল একদিন যদি নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো যায়। কিন্তু সেটাও হয়ে উঠল না। নিজেদের খাবার তাঁরা নিজেরাই নিয়ে আসতেন। তবে অভিষেককে বব বিশ্বাস লুকে দেখে শিউরে উঠেছিলাম। আমাদের বাড়িতে যখন আসতেন তখন অভিষেক আর কোথায়! পাক্কা বব বিশ্বাস! হাসতে হাসতে খুন করে ফেলা এক মানুষ! মাঝে অবশ্য ব্রেকের সময় মেক আপের লোক এসে তাঁর সাজপোশাক ঠিক করে দিতেন। শুধু মন দিয়ে অভিনয় করাই নয়, শ্যুটিংও অনেক সময় খুব মন দিয়ে দেখতেন তিনি।
দুই বব বিশ্বাসের তুলনা করাটা ঠিক নয়…
অভিষেককে অভিনেতা হিসাবে আমার বরাবরই ভাল লাগে। এ বার প্রথম মানুষ অভিষেককেও এত কাছ থেকে দেখলাম। কথা নাই বা বললাম। তবে এত বড় মাপের মানুষটা যে একেবারেই অমায়িক তা তাঁর আশেপাশে থাকলে বুঝে নিতে একটুও অসুবিধা হয় না।
আরও পড়ুন: প্রোপোজ করেন অন্তর্মুখী ‘কিরীটী’ই, প্রেমের রসায়ন দুর্বোধ্য রেখেই রোমান্টিক দাম্পত্যে ইন্দ্রনীল-বরখা
বব বিশ্বাস আমার বাড়ি এসেছিল!
এখন এই সব অভিজ্ঞতার কথা আত্মীয়, বন্ধু বান্ধবদের কাছে গল্প করি। ওঁরাও খুব আনন্দ পান। অনেকেই বলেন, আগে জানালে এসে দেখে যেতেন। একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে তখন। আমার কাছে এটা সত্যিই খুব বড় পাওনা। তাঁরা আমার বাড়িকে নিজেদের ছবির জন্য বেছে নিয়েছেন। এত গুণী মানুষরা সেখানে কাজ করেছেন।
মাঝখানে এতগুলো দিন কেটে যাওয়ার পরেও ভাবতে অবাক লাগে, যে বব বিশ্বাসকে দেখার জন্য সবাই এখন অপেক্ষা করে বসে, সেই বব বিশ্বাস আমার বাড়ি এসেছিল।
আরও পড়ুন: চার বছর নিজেদের বিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন অর্চনা-পরমীত