অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। ছবি: অতনু মণ্ডল।
ছবি তৈরি করেন সময় নিয়ে। বিশ্বাস করেন, ভাল ছবি ঠিক তাঁর দর্শক খুঁজে নেয়। ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগিতা নয়, বরং পরস্পরের বন্ধুত্বে বিশ্বাসী পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। সম্প্রতি, এক সকালে দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত ক্লাবে সময় দিয়েছিলেন তিনি। তত ক্ষণে মর্নিং ওয়াক সেরে ফেলেছেন। ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিতে দিতে শুধুই ‘কড়ক সিংহ’ নয়, শোনালেন এক কঠিন জীবনবোধের আখ্যান। পরিবার, বন্ধু, নিজের শিকড়, বাংলা ছবি এবং অবশ্যই ভালবাসায় মোড়া নিজের সফরকে ফিরে দেখলেন পরিচালক।
প্রশ্ন: এই বার কলকাতায় আসার নেপথ্যে বিশেষ কোনও কারণ?
অনিরুদ্ধ: আমার শরীরে একটা সমস্যা আছে। সেটাকে আমি বলি ‘ক্যালকাটা ডেফিসিয়েন্সি’। তাই ভিটামিনের অভাব হলেই ৭ দিনের জন্য কলকাতায় চলে আসতে হয়। আমি চাইলে অনেক মিটিংই মুম্বইয়ে বসে অনলাইনে সারতে পারি। কিন্তু ইচ্ছে করেই কলকাতায় রাখি। এখানে বন্ধুবান্ধব রয়েছে। ফলে আদানপ্রদানটা চলতেই থাকে।
প্রশ্ন: যেমন?
অনিরুদ্ধ: এই ক্লাবে একটা গাছ আছে। আমি বলি বোধি ট্রি। ওই গাছটার নীচে বসলে সত্যিই মাথা খোলে। শুধু এটাই যে, আমাকে এসে কেউ পায়েস দেন না (হাসি)। আমার প্রচুর ছবির চিত্রনাট্য এবং মিটিং ওই গাছটার নীচে বসে করেছি। কখনও একটু বসে সকলে মিলে আড্ডা দিলাম। মনটা ভাল হয়ে যায়। আসলে আমি শিকড়কে ভুলিনি। জীবনে অনেক দৌড়েছি। এখন দৌড়টা ভাল লাগে না। স্থিতি ভাল লাগে।
প্রশ্ন: এই উপলব্ধি কি বয়সজনিত কারণে?
অনিরুদ্ধ: একদম নয়। আমি এখনও যথেষ্ট সক্ষম। আমার প্রচণ্ড এনার্জি। ভোর ৪টেতে পার্টি শেষ করে এক ঘণ্টা পর থেকেই শুটিং শুরু করতে পারি। আমার বাড়িতে সুইমিং পুল আছে। কিন্তু আমার এখন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে মন টানে। এখন শুধুই কাজ আর দৌড়টা ভাল লাগে না। একটাই জীবন। অজানাকে জানার ইচ্ছেটা এখন বেশি করে পেয়ে বসেছে।
সেল্সম্যানের চাকরি থেকে ছবির পরিচালক, কেরিয়ারের এই আমূল পরিবর্তনকে কী ভাবে দেখেন অনিরুদ্ধ? ছবি: অতনু মণ্ডল।
প্রশ্ন: আপনার এখন বয়স কত?
অনিরুদ্ধ: ৫৮ বছর। কেন বলুন তো?
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনও আপনি তরুণ তুর্কি!
অনিরুদ্ধ: (হেসে) আমি এ রকমই। আমেরিকা থেকে আমার মেয়ে আমাকে ফোন করে বকাবকি করে, যে আমার নাকি ম্যাচিওরিটি কম। এখনও ভাল স্কচ খেতে ভাল লাগে। ভাল জীবনযাপন করতে পছন্দ করি। আমি বেঁচে গিয়েছি আমার বন্ধুদের জন্য।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার ছেলেবেলা তো এতটা সহজ ছিল না।
অনিরুদ্ধ: একটা পয়সাও ছিল না। অল্প টাকা বাঁচাতে বাসের পিছনে হাঁটতাম। আর বেশি বাঁচাতে হলে ট্যাক্সির পিছনে। একটা সময়ে আত্মীয়স্বজনদের জামাকাপড়ে দিন কেটেছে। কিন্তু আমাকে তাঁরা কোনও দিন তোল্লাই দেননি। শক্ত জমিতে থেকেও হড়কে যায় মানুষ। আমি নিজে দেখেছি। আমার মা সব সময় বলতেন জীবনে যাতে ভারসাম্য না হারাই। তাই আমি আজও আমার শিকড়কে ভুলিনি।
প্রশ্ন: পারিবারিক ব্যবসা। সেল্সম্যানের চাকরি। তার পর পরিচালক। কেরিয়ারের এই আমূল পরিবর্তনকে কী ভাবে দেখেন?
অনিরুদ্ধ: পরিবর্তন হয়নি, কারণ মানুষটা একই আছে। তবে একটা দীর্ঘ সফর রয়েছে। পারিবারিক ব্যবসা ছিল কনস্ট্রাকশনের। আশির দশকে দেওঘর-ভাগলপুর জাতীয় সড়কে শ্রমিকদের সঙ্গে রাস্তায় তাঁবুতে থাকতাম। তাঁদের সঙ্গে তাড়ি খেয়েছি, খাবার খেয়েছি। বারাউনি, মোকামা অঞ্চলে গুন্ডা, বন্দুক— এ সব ছিল আমার নিত্যসঙ্গী। অসংরক্ষিত ট্রেনের সাধারণ কামরায় সফর করতাম। আর মিথ্যে বলে ফার্স্ট ক্লাসে চলে আসতাম। সেই দিনগুলো আমি আজও ভুলিনি।
অনিরুদ্ধ বিশ্বাস করেন সকলে মিলে কাজ করলে বাংলা ছবির বাজার বাড়বে। ছবি: অতনু মণ্ডল।
প্রশ্ন: তার পর যখন পরিচালনায় এলেন তখন পরিবারের সমর্থন ছিল?
অনিরুদ্ধ: ছিল না। পরিবারের সকলে বিলেতে গিয়ে পড়াশোনা করেছে। সবাই বলত, ‘‘কী করছিস!’’ বাবার প্রশ্ন ছিল, ‘‘খাবি কী?’’ কারণ, উনি সব সময় বলতেন যে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবনটা উপভোগ করতে। তার পর এক দিন বাবা রাত ১২.৩০টা নাগাদ আমাকে রাসবিহারী মোড়ে নাটকের পোস্টার সাঁটতে দেখে ফেললেন। পরের দিন আমাকে বলেছিলেন, ‘‘আমার ছেলে ঠিক কাজ করছে। কারণ পরিশ্রম করছে।’’এক জন সহকারী পরিচালকের বাড়িতে কাজের আশায় যেতাম। কী না, অভিনেতা হব!
প্রশ্ন: আপনি শুরুতে অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন! এটা নিশ্চয়ই অনেকেই জানে না।
অনিরুদ্ধ: হ্যাঁ। এক বার মডেলিং করে ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে ব্যর্থ হয়েছিলাম। যাই হোক, ওই পরিচালক আমাকে সকাল থেকে অপেক্ষা করাতেন। মাঝে তাঁর সংসারের জন্য বাজার করাতেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এটা করেও কাজ পাইনি। তার পর ঘেন্না ধরে গেল। বুঝে গেলাম যেখানে সম্মান নেই, আমি সেখানে টিকে থাকতে পারব না। তার পর পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। দূরদর্শনের অনন্যা ঘোষ এবং ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ আমাকে প্রথম সুযোগ দিলেন।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম বাংলা ছবি ‘অনুরণন’-এর প্রিমিয়ারের সন্ধ্যা মনে পড়ে?
অনিরুদ্ধ: চোখের সামনে ভাসে। ২০০৭ সালের ৬ জুলাই। সারা কলকাতা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। প্রিয়াতে প্রিমিয়ার। আমি নতুন। কিন্তু রিনাদি (অপর্ণা সেন) মেসেজ করেছিলেন, ‘‘আমাদের শুভেচ্ছা তোমার সঙ্গে আছে। চিন্তা কোরো না।’’ আমি ভাবিইনি যে অত মানুষের শুভকামনা পাব।
প্রশ্ন: এখন কি টলিউডে এই শুভেচ্ছারই অভাব বলে মনে হয়?
অনিরুদ্ধ: ধুত! এ ওকে মারছে। এ তার ব্যাপারে নিন্দে করে। সব সময় ‘আমি’ আর ‘আমি’!
প্রশ্ন: এখন তো ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে।
অনিরুদ্ধ: শুধু টলিউড নয়, সব জায়গায় এখন টিকে থাকার লড়াই। আমাকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এক বার বলেছিলেন, ‘‘টোনি, দৌড়ে লাভ নেই। পর্দা শেষ কথা বলবে।’’ প্রত্যেক বারই যে আমি দারুণ ছবি তৈরি করব, সেই ভাবনা আমার নেই। প্রত্যেক দিন আকাশের রং এক হয় না, রোজ রাতে ঘুম কারও ভাল না-ও হতে পারে। তাই কখনও সফল হব, কখনও হব না। আমি এ সবকে পাত্তা দিই না।
প্রশ্ন: আপনার শেষ ছবি ‘লস্ট’-এর প্রতিক্রিয়া কেমন?
অনিরুদ্ধ: দুর্দান্ত। কারও ভাল লেগেছে, কারও খারাপ। কিন্তু অসংখ্য ফোন পেয়েছি। প্রযোজকরা আমার সঙ্গে ছবি করতে চাইছেন। ‘লস্ট’ দেখার পরেই তো পঙ্কজ ত্রিপাঠি আমাকে ‘কড়ক সিংহ’-এর জন্য ডেট দিয়েছিলেন। পঙ্কজ কপূর এবং রাহুল (রাহুল বসু) তো আমার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আর কী চাই! দেখুন, আমার কাছে ছবির প্রতিক্রিয়া মানে কিন্তু মন রাখার জন্য বাহবা পাওয়া নয়! আমার কাছে ছবি সফল তখনই, যদি সেটা মানুষের মধ্যে একটা ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে পারে এবং অবশ্যই তার সঙ্গে যদি সামান্য অর্থ ঘরে আসে।
প্রশ্ন: আপনি প্রায়ই বলেন আপনার প্রত্যেকটা ছবি বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি।
অনিরুদ্ধ: ‘অনুরণন’, ‘বুনোহাঁস’, ‘পিঙ্ক’— আমি আমার ছবি নিয়ে গর্বিত। চোখের সামনে দেখেছি মহিলাদের ‘জাজ’ করা হচ্ছে। আমার তখন একটা পয়সা নেই। এ দিকে একটা ভিসিআর কিনতে হবে। আমাকে এক জন একটা ব্যাগ এক জায়গায় পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। পারলে ১ লক্ষ টাকা দেবে। কিন্তু ধরা পড়লে জেল দু’বছরের। আমি পারিনি। ‘বুনোহাঁস’ তো সেই কথাই বলে। আমেরিকায় মানুষের শূন্যতা আমি দেখেছি। সেই ভাবেই তো ‘অপরাজিতা তুমি’ তৈরি করি। এক জন পুরুষ এবং মহিলার রোম্যান্সে একটা তরঙ্গ থাকতেই পারে। কিন্তু সেখানে যৌনতা থাকতেই হবে, এ রকম কোনও নিয়ম নেই। সেই ভাবেই তো ‘অনুরণন’।
প্রশ্ন: ‘পিঙ্ক’ মুক্তির পর বলা হল, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বলিউডে আধুনিক নারীকেন্দ্রিক ছবির ধারা শুরু করলেন। আপনার কি এই বিষয়টা নিয়ে কখনও গর্ববোধ হয়?
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘পিঙ্ক’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত।
অনিরুদ্ধ: আমাকে দেখে কি আপনার খুব গর্বিত মনে হচ্ছে? ‘অনুরণন’, ‘অন্তহীন’ বা ‘অপরাজিতা তুমি’তেও তো নারী ক্ষমতায়ণের কথাই বলেছি। আর গর্বের কী আছে! আমি সাধারণত লিখি না ‘আ ফিল্ম বাই অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী’। ছবি একটা দলগত প্রচেষ্টা। প্রত্যেকের সেখানে সমান ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন: রাধিকা আপ্তে, তাপসী পান্নু, বিজয় বর্মা, পদ্মপ্রিয়া, কীর্তি কুলহরি— লম্বা তালিকা। আজকে এরা প্রত্যেকেই বলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। কিন্তু আপনি যখন সুযোগ দেন তখন তাঁদের কেউই চিনতেন না।
অনিরুদ্ধ: আমি তো জানতাম না এঁরা ভবিষ্যতে জনপ্রিয় হবেন। আমার শুধু ওঁদের উপর বিশ্বাসটা ছিল। সেটা কখনও কাজ করে, কখনও আবার করে না। আজকে এঁরা যেখানে পৌঁছেছেন, সেটা কিন্তু তাঁদের প্রতিভার জোরে। আমার বিশ্বাস ‘কড়ক সিংহ’-তে সঞ্জনা সাংঘিকে দেখলেও দর্শক চমকে যাবেন।
প্রশ্ন: দেব এখন অন্য ধারার ছবিতে মন দিয়েছেন। কিন্তু ‘বুনোহাঁস’ ছবিতে আপনিই প্রথম ওঁকে অন্য ভাবে ভেবেছিলেন।
‘বুনোহাঁস’ ছবির একটি দৃশ্যে শ্রাবন্তী-দেব। ছবি: সংগৃহীত।
অনিরুদ্ধ: অসাধারণ অভিনয় করেছিল দেব। বাংলাদেশে শুটিং। নোংরা শৌচাগার। সেখানে হামাগুড়ি দিয়ে পাসপোর্ট খুঁজছে দেব। এখনও ভাবলে অবাক হই। ওকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। শুধু ছবিটা আরও একটু সাপোর্ট পেলে খুশি হতাম। অভিমান থেকেই বলছি, আর এক বার পুজোয় ছবিটা রিলিজ় করা হোক, দেখবেন কী হয়!
প্রশ্ন: আপনি সাপোর্টের কথা বললেন। শুক্রবারে তারকাদের একটা টুইটে কি সাপোর্ট পাওয়া যায়?
অনিরুদ্ধ: ওতে কিস্সু হয় না! সমাজমাধ্যমে প্রশংসা, আর পিছনে গালাগাল করছি, এটা পছন্দ নয়। আমার বিপরীতটা পছন্দ। সমাজমাধ্যমে গালাগাল করুন। কিন্তু সামনে দেখা হলে যেন আলিঙ্গন করেন। আমি এই ভালবাসায় বিশ্বাসী। ‘নকল’ জীবনে নয়।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছে, বাংলা ছবির বাজার বাড়ছে না। কোথায় সমস্যা রয়েছে বলে মনে হয়?
অনিরুদ্ধ: একটু অন্য ভাবে উত্তর দিতে চাই। আমার এক বন্ধুর ওজন খুব বেশি ছিল। কিন্তু এখন ওজন কমিয়েছে। ভাল স্বাস্থ্য চায়। কারণ ও বাঁচতে চায়। যে গলিতে অনেক খাবারের দোকান আছে, সেগুলোর বিক্রি ভাল। দূরে একটা দোকান থাকলে সেটা খুব একটা চলে না। বাঁচতে হলে একসঙ্গে বাঁচতে হবে। একা বাঁচা যায় না। ‘টনিক’ আমার খুব ভাল লেগেছে। ‘দোস্তজি’ ছবিটাও তো চলেছে। ভাল ছবির কোনও বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: টলিউডে এখন ১ বৈশাখ, পুজো, বড়দিন— বছরের বিশেষ উৎসবকে মাথায় রেখে ছবি রিলিজ় করা হয়। এই নতুন নিয়ম কি ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে?
অনিরুদ্ধ: আমার ভাই কোনও দিন ১ বৈশাখ বা বড়দিনে ছবি মুক্তি পায়নি। আমার সে রকম কোনও ইচ্ছেও নেই। পুজোয় ছবি তৈরি করব বলে তো এই পেশায় আসিনি! তবে হ্যাঁ, ‘বুনোহাঁস’ পুজোয় মুক্তি পেলে ভেবেছিলাম একটু বেশি দর্শক দেখবেন। এই তো সে দিন শান্তনুর (সুরকার শান্তনু মৈত্র) বাড়িতে বসে আমি আর সুজিত (পরিচালক সুজিত সরকার) ‘পথের পাঁচালী’ দেখলাম। আমার কাছে প্রতিটা দিন একটা উৎসব। ভাল জিনিসের কোনও তিথি হয় না।
প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেন, এ বার থেকে বছরে একটা বাংলা ছবি করবেন। ‘কাফে কিনারা’র শুটিং কবে থেকে শুরু করবেন?
অনিরুদ্ধ: বাজেট একটু বেশি। তাই ওটা পরে শুরু করব। তার আগে ‘ডিয়ার মা’ শুরু করব।
প্রশ্ন: এতটা সময় নিয়ে ছবি করেন। টলিউড থেকে আপনার কাছে নিশ্চয়ই ঘন ঘন ছবি তৈরির প্রস্তাব আসে?
অনিরুদ্ধ: কেউ প্রস্তাব দেয়নি। ব্যতিক্রম হাতেগোনা কয়েক জন। আমি আসলে প্রস্তুত নই। আমার গল্প ভাবতে, চিত্রনাট্য লিখতে সময় লাগে। তার থেকেও বড় কথা যত ক্ষণ না ছবির বিষয়বস্তুর প্রেমে পড়ছি, তত ক্ষণ আমি ছবি তৈরি করি না।
প্রশ্ন: ছবির কাজের বাইরে বাড়িতে কী ভাবে সময় কাটে?
অনিরুদ্ধ: গান শোনা, আড্ডা, ভাল ছবি দেখা।
প্রশ্ন: আর এই যে শরীরচর্চা শুরু করেছেন।
অনিরুদ্ধ: আমি খাদ্যরসিক। কিন্তু বয়স বাড়ছে। তাই বুঝতে পেরেছি একটু শরীরের যত্ন না নিলে হবে না। তাই চেষ্টা করছি। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। এখন হাতে সময়ও থাকবে। স্ত্রীকে (ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়) বলেছি, আগের থেকে এখন ঘুরতে যাওয়াটাও বেড়ে যেতে পারে (হাসি)।
প্রশ্ন: সম্প্রতি গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কড়ক সিংহ’ ছবি প্রদর্শনের পর কী রকম প্রতিক্রিয়া পেলেন?
অনিরুদ্ধ: আমি তো ছবি দেখি না। পাশে দাঁড়িয়ে দর্শকদের মুখগুলো দেখি। হাউসফুল শোয়ে কেউ হাসছেন, কেউ কাঁদছেন। চোখের পলক পড়ছে না। বাইরে আরও ৩০০-৪০০ মানুষের দাবি, আরও একটা শো চাই। এগুলো দেখে বুঝতে পারি হয়তো একটা ভাল ছবি তৈরি করতে পেরেছি। পঙ্কজ ত্রিপাঠি নিজে নাকি দারুণ প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। জয়া (জয়া আহসান) এবং পার্বতীকে (দক্ষিণী অভিনেত্রী পার্বতী তিরুবোত) নিয়ে উপস্থিত দর্শক হইহই করলেন। খুবই নিষ্ঠাভরে একটা সৎ প্রচেষ্টা করেছি। এ বার বাকিটা দর্শক বলবেন।