চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
বয়সের তোয়াক্কা করেন না। মনের মধ্যে কোনও ভয়ডরও কাজ করে না। কারণ, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী বিশ্বাস করেন, জীবনে যা করেছেন সৎ পথে অর্জন করেছেন। সম্প্রতি, এক সন্ধ্যায় অভিনেতা-বিধায়কের বৈঠকখানায় লিকার চা এবং চানাচুর সহযোগে শুরু হল আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে জন্মদিনের আড্ডা। নিজের পরিচিত ভঙ্গিতেই চলল সাবলীল কথোপকথন।
প্রশ্ন: আপনার বয়স নিয়ে অনুরাগীদের কৌতূহল রয়েছে। বৃহস্পতিবার কি আপনার ৬৮তম জন্মদিন?
চিরঞ্জিৎ: ৭৩তম। উইকিপিডিয়ায় ভুল তথ্য রয়েছে (হাসি)।
প্রশ্ন: এই বছর জন্মদিন কী ভাবে উদ্যাপন করবেন?
চিরঞ্জিৎ: আমি কোনও দিনই আলাদা করে জন্মদিন পালনে বিশ্বাসী নই। বাড়িতেই থাকব। কাছের কিছু মানুষ কেক নিয়ে আসেন। অনুরাগীদের একটা দল আছে, তাঁরা আসেন। আবার আমার বিধানসভা কেন্দ্র (বারাসত) থেকেও অনেকে আসেন। এই ভাবেই দিনটা কাটবে।
প্রশ্ন: কিন্তু ছেলেবেলায় নিশ্চয়ই বাড়িতে আপনার জন্মদিন পালন করা হত?
চিরঞ্জিৎ: (একটু ভেবে) সে রকম নয়। তবে কোনও কোনও বছর করা হত। আমরা অনেক ভাইবোন ছিলাম। সবার জন্মদিন তাই নিয়ম করে পালন করা হত না। সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া হত।
প্রশ্ন: আর জন্মদিনের রেজ়োলিউশন?
চিরঞ্জিৎ: আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, ধূমপান দীর্ঘ দিন আগে ছেড়েছি। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা নাকি সব থেকে কঠিন। পঞ্চাশ বছর ধূমপান করার পর এক দিন মনে হল, ছেড়ে দিলাম। তাই আমার কাছে কোনও রেজ়োলিউশনই খুবই গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনও দিন মনে হলে মদ্যপানও ছেড়ে দিতে পারি। যদি মনে করি, কোনও দিন প্রেম করব না, তা হলে করব না। যদিও আমি প্রেম করি না, তাই সেটা ছাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই (হাসি)। কোনও রকম কেচ্ছা-কেলেঙ্কারিতে আমি নেই। তাই ছাড়ার কিছু নেই।
প্রশ্ন: আপনার আর শাহরুখ খানের জন্মদিন যে এক, সেটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন। শাহরুখের সঙ্গে তো একাধিক বার আপনার দেখা হয়েছে। কী মনে হয়, বলিউডের বাদশা কি জানেন আপনাদের জন্মদিন একই দিনে?
চিরঞ্জিৎ: শাহরুখের ভাগ্য ভাল যে, ওর জন্মদিন এবং আমার জন্মদিন একই দিনে (হাসি)। তবে মনে হয়, জানলেও জানতে পারে। কেউ হয়তো ওকে বলেছে। আমি ঠিক বলতে পারব না।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুতে আপনি সংবাদিকতা করেছেন। পরবর্তী সময়ে আপনার অভিনয়ে আসা কি পরিবার সমর্থন করেছিল?
চিরঞ্জিৎ: হ্যাঁ। কারণ, বাবা (চিত্রশিল্পী শৈল চক্রবর্তী) জানতেন, আমি অভিনয় ভালবাসি। ছোটবেলায় ৬ বছর বয়সে প্রথম ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তখন আমরা ঢাকুরিয়ায় থাকতাম। বাবা শিল্প-সাহিত্যের মানুষ ছিলেন বলে বিষয়টা পছন্দই করতেন। তবে শুধু বলতেন, যেটা করি সেটা যেন মন দিয়ে করি। এর বেশি কিছু নয়।
প্রশ্ন: ১৯৭৯ সালে আপনার প্রথম ছবি ‘সোনায় সোহাগা’ মুক্তি পায়। তার পর এই দীর্ঘ যাত্রা। ঠিক কবে বুঝলেন, আপনি ‘সুপারস্টার’ হয়ে গিয়েছেন?
চিরঞ্জিৎ: শুরুটা কিন্তু বোঝা যায়। আমি যখন খবর পড়তাম, তখনই আমি স্টার হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে মহিলারা পছন্দ করতেন। অনেকের সঙ্গে দেখা হলে শুনতাম, কেউ কেউ নাকি আমাকে তাঁদের পরিবারের জামাই করবেন বলেও ঠিক করে ফেলেছেন! বা আমার মতো কাউকে তারা বাড়ির জামাই হিসাবে দেখতে চান। ‘শত্রু’ ছবিতে অভিনয়ের পর সাংঘাতিক জনপ্রিয়তা পেলাম। ‘নাগপাশ’ ছবি যখন মুক্তি পেল, তখন আমি সুপারস্টার। এই ছবিটা করতে করতেই ‘প্রতিকার’-এর প্রস্তাব এল। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি চরিত্র। তত দিনে উনি আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। অত বড় মাপের অভিনেতা। তার পর ‘প্রতীক’-এর পর তো বুঝতেই পারলাম, সুপারস্টার হয়ে গিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়ক হয়ে গেলাম। আসলে একটা দীর্ঘ সফরের মাঝে এগুলো ছোট ছোট ধাপ।
প্রশ্ন: এক নম্বর আসনে বসে কেমন লেগেছিল?
চিরঞ্জিৎ: ভালই লাগত। তখন তো আর সেল্ফি ছিল না। হাজার হাজার অটোগ্রাফ দিতাম। পাশাপাশি অভিনেতা হিসাবে দায়িত্বও বেড়ে গেল।
প্রশ্ন: বলা হয়, উত্তমকুমারের পর একটা সময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে চিরঞ্জিৎ, তাপস পাল এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আবার লাভের মুখ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আপনাদের তিন জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা নিয়ে তো এখনও নানা কথা শোনা যায়...।
চিরঞ্জিৎ: আমি কোনও দিন প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে অভিনয় করিনি। আমি কোনও দিন কাউকে কোনও ছবি থেকে বাদ দিইনি। কারও ছবিও কেড়ে নিইনি। তা ছাড়া আমার একটা ফর্মুলা আছে। কোনও দিন ছবি চাই না। যা আসে, সেটা করি। তাই কাড়ার প্রশ্ন উঠছে না। প্রতিযোগিতা আর অন্যান্য যা কিছু বলা হয়, সেটা সংবাদমাধ্যমের তৈরি।
প্রসেনজিতের সঙ্গে চিরঞ্জিৎ। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
প্রশ্ন: প্রসেনজিতের সঙ্গে আপনার পেশাগত সম্পর্ক নিয়েও তো অনেক কথা হয়।
চিরঞ্জিৎ: (সামনের সেন্টার টেবিলে রাখা একটা বই তুলে নিয়ে) এই বইতে আমাকে নিয়ে অনেকেরই মতো বুম্বাও তো লিখেছে। প্রশংসাই তো করেছে। আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। হি ইজ় আ ভেরি গুড বয়।
প্রশ্ন: পুজোয় ‘দশম অবতার’ ব্যবসার নিরিখে এক নম্বরে। প্রসেনজিৎ এখনও অ্যাকশন হিরো হয়ে নজর কাড়ছেন। আপনার কখনও মনে হয় না, এ রকম ছবি করি?
চিরঞ্জিৎ: এর আগে কিন্তু ওর বেশ কয়েকটা ছবি বক্স অফিসে লাগেনি। এটা সুপারহিট হয়েছে ঠিকই। আবার কেউ কেউ এটাও বলছেন যে, কনটেন্টের নিরিখে ‘রক্তবীজ’ নাকি আরও ভাল ছবি। যদিও সেই ছবিটা আমি দেখিনি। এখানে আমাদের দু’জনের দর্শনের একটা পার্থক্য রয়েছে। ও যেমন লেগে থেকে একটা ছবি তৈরি করে। আমি তো ছবি চাই না। কে কী ছবি করছে, তা জানতে কখনও ফোনও করিনি। এটা মনে হয়, নজির হতে পারে। এক জন অভিনেতা, যে কিনা তার গোটা কেরিয়ারে কোনও দিন হাত পেতে কাজ চায়নি। এমনকি, কোনও দিন তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, প্রভাত রায় বা সুজিত গুহর কাছেও ছবি চাইনি। গৌতম ঘোষ আমার বন্ধু। ওঁকেও তো কোনও দিন বলিনি যে, আমাকে ছবি দাও। আমার কাছে এখনও প্রতি দিন একটা করে চিত্রনাট্য আসে। পছন্দ হলে কাজটা করি। বাড়ি-গাড়ি আছে, ভালই আছি। আরও টাকা চাই, দশটা বাড়ি, দুটো বাংলো চাই। এ দিকে তার কোনওটায় থাকতেই পারি না! সেই জীবন আমি কোনও দিনই চাইনি। গরু পাচার বা কয়লা পাচারে নাম জড়াতে চাই না।
প্রশ্ন: নতুনদের জন্য পুরনোদের এক সময় জায়গা ছেড়ে দিতেই হয়। আপনার কি কখনও মনে হয়েছে যে, আপনি টলিপাড়ার রাজনীতির শিকার?
চিরঞ্জিৎ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে হত। এখনকার মতো তখনও তো ইন্ডাস্ট্রিতে ‘গোষ্ঠী’ রাজনীতি ছিল। আমার চরিত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু আমি তো তখন সুপারস্টার। তাই আমার কাছে চরিত্র ঠিক এসে যেত (ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি)।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরে বাংলা সিনেমায় আমূল বদল এসেছে। কিন্তু মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিকে ফিরিয়ে আনার জন্য শুরু থেকেই আপনি সোচ্চার। কী মনে হচ্ছে, তা কি হচ্ছে?
চিরঞ্জিৎ: এক দিকে শাহরুখের ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’। অন্য দিকে, কমল হাসনের ‘বিক্রম’ বা রজনীকান্তের ‘জেলর’। পুরনো চেনা ছকই তো ফিরে আসছে। ‘দশম অবতার’ বা ‘রক্তবীজ’ দেখে তো মনে হচ্ছে, বাংলা ছবি আবার ঘুরছে। তা ছাড়া সৃজিত (মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) বা শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) তো ভাল পরিচালক। এরা বাণিজ্যিক ছবিতে এলে তো ইন্ডাস্ট্রির মঙ্গল। বাংলাতেও কিন্তু আমার কথা মিলে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। আমার একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে।
প্রশ্ন: একটা উদাহরণ দেবেন?
চিরঞ্জিৎ: আমি বিগত ১২ বছর ধরে বলেছি, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। সবাই আমার কথা শুনে হাসাহাসি করত। কিন্তু দেখুন, সম্প্রতি হার্ভার্ডের সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক গবেষকও কন্যাশ্রী প্রসঙ্গে এই একই কথা বলেছেন। আমি সত্যিই অবাক হয়েছি।
প্রশ্ন: গত বিধানসভা ভোট থেকেই আপনি বার বার বলছেন আর ভোটে দাঁড়াবেন না। কেন?
চিরঞ্জিৎ: প্রথমত, বয়স বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতিতে তো আমার কোনও আগ্রহ নেই। একে অপরের নামে কাদা ছোড়াছুড়ি, মিছিলে হাঁটা এ সব আমার পছন্দ নয়।
প্রশ্ন: তা হলে ২০১১ সালে ভোটে দাঁড়াতে রাজি হয়েছিলেন কেন?
চিরঞ্জিৎ: তখন তো আমাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর করে বুঝিয়ে রাজি করালেন। কিন্তু এটাও মানতে হবে, তখন রাজ্যে পালাবদলের সময়। তখন সিপিএমকে সরানো প্রয়োজন বলে আমারও মনে হচ্ছিল। তাই চেয়েছিলাম, একটা আসনে আমার অবদান রেখে দলকে সাহায্য করি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আসন এনে দিতে পারব। ২০১১ সালে আমার ওই আসনটার যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। পরে হয়তো অনেক আসন পেয়ে গেল। আমার আসনের গুরুত্ব কমল। কিন্তু আমি আমার কথা রেখেছি।
একান্তে ছবি আঁকছেন চিরঞ্জিৎ। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
প্রশ্ন: তা হলে আগামী বিধানসভা ভোটে কি দাঁড়াচ্ছেন?
চিরঞ্জিৎ: দেখুন, আমার সততার একটা ইমেজ আছে। আমি ‘রাজনীতি’ করি না। ঘুষ নিই না। মন্ত্রী হওয়ার কোনও লোভ আমার নেই। বলেই দিয়েছিলাম আমি মন্ত্রী হতে চাই না। সারা দেশে এমন কোনও বিধায়ক আছে কি, যে ক্ষমতা চায় না? অন্তত আমি তো শুনিনি। এই ইমেজ নিয়েই ২০১৬ এবং ২০২১ পার করেছি। পরের বারেও আমি একই কথা বলব। তার পর দেখা যাক কী হয়!
প্রশ্ন: কিন্তু দল নিয়ে তো বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে আপনি অনেক কথা বলে থাকেন। তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হওয়ার ভয় কাজ করে না?
চিরঞ্জিৎ: কখনওই নয়। এখনও পর্যন্ত দলের কেউ আমাকে এই প্রসঙ্গে কিচ্ছু বলেননি। কারণ, আমি নীতি নিয়ে কথা বলি। দলের ক্ষতি হবে, এ রকম কোনও কথা আমি বলি না। তাই অপছন্দ হলেও সরাসরি আমাকে বলার কোনও অবকাশ থাকে না। এটা বললে পরের বার টিকিট পাব না— এই চিন্তা আমার মধ্যে নেই। তাই আমার ভয়ের কোনও কারণ নেই।
প্রশ্ন: চার দশকের অভিনয় জীবনকে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
চিরঞ্জিৎ: সত্যি বলছি, ভালই লাগে।
প্রশ্ন: কোনও আক্ষেপ?
চিরঞ্জিৎ: না নেই। ঈশ্বর এবং মানুষের আশীর্বাদে যা পেয়েছি, তা যথেষ্ট। বলিউড থেকে পার্শ্বচরিত্রের প্রস্তাব আসত। তাই রাজি হইনি। প্রমোদ চক্রবর্তী এবং শক্তি সামন্তের মতো পরিচালককেও আমি ‘না’ বলেছি। শক্তি সামন্ত ‘দেবদাস’-এ চুনীলালের প্রস্তাব দিলেন। আমি বললাম দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করব। রাজি হলেন না, হল না। পরে তো বুম্বা এবং তাপসকে নিয়ে উনি ছবিটা করেছিলেন। বিপরীত উদাহরণও রয়েছে। রানির (মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী) বাবা (রাম মুখোপাধ্যায়) যখন আমাকে পর পর তিনটি ছবিতে মুখ্য চরিত্র দিলেন, সেখানে কিন্তু বুম্বা পার্শ্বচরিত্রে। যেটা হওয়া উচিত, আমি সেটাই দাবি করেছি। তাই আমার কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: এমন কোনও স্বপ্ন যাকে এখনও ধাওয়া করেন?
চিরঞ্জিৎ: নেই।
প্রশ্ন: সে কী! আপনি এত ভাল ছবি আঁকেন। তা নিয়েও কোনও পরিকল্পনা নেই?
চিরঞ্জিৎ: (মোবাইল খুলে সাম্প্রতিক আঁকা ছবি দেখালেন) আসলে আমার আঁকা ছবি আমার কাছেই থাকে না। সবাই নিয়ে নেয়। ইচ্ছে আছে, যদি গোটা কুড়ি ছবি শেষ করতে পারি, তা হলে কোনও দিন হয়তো একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করব।
প্রশ্ন: আপনার মেয়ে (দীপাবলি) তো বিজ্ঞানী। আমেরিকায় চাকরি করেন। মেয়ে কখনও অভিনয়ে আসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেননি?
চিরঞ্জিৎ: না। অনিশ্চিত পেশা। সকলে সফল হয় না, সুপারস্টার হয় না। ও বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। যেটা করতে চেয়েছে, আমি সমর্থন করেছি।
প্রশ্ন: এই বয়সেও ‘পর্ণশবরীর শাপ’ ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ে আপনার এনার্জি দেখে পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও চমকে গিয়েছেন। আপনার এই ফিটনেসের রহস্যটা জানতে ইচ্ছে করছে।
চিরঞ্জিৎ: (হেসে) নিয়ন্ত্রিত খাবার খাই। নিয়মিত এক্সারসাইজ় করি। আরও একটা বিষয়, জীবনে উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বিশ্বাসী নই। কপালে যা আছে সেটাই হবে। তাই এখনও সুস্থ রয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু শুনেছি, আপনি তো একটা সময় খাদ্যরসিক ছিলেন...।
চিরঞ্জিৎ: চিকেন খেতে ভালবাসি। পরোটা দিয়ে বাটার চিকেন পেলে এখনও খেয়ে নেব। পাশাপাশি বাড়ির মাছের ঝোলও অনবদ্য। নবরত্ন কোর্মা বা তড়কা-রুটি। কোনও ঠিক নেই, সবই খাই (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনার আত্মজীবনীও তো লেখা হচ্ছে। সেখানে কি এতটাই সাহসী এবং সৎ চিরঞ্জিৎকে পাঠক পাবেন?
চিরঞ্জিৎ: একশো শতাংশ। টোটা (রায়চৌধুরী, অভিনেতা) বা অভিষেক (চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা) তা-ও একটু-আধটু অভিযোগ করেছে বলে জানি। কিন্তু আমার তো কারও প্রতি কোনও অভিযোগ ছিল না। কারণ, বুম্বা তো আমার পরেই ছিল। আমি জায়গা ছাড়তে ও এক নম্বরে চলে এল। কিন্তু সেই জায়গাটা বছরের পর বছর ও ধরে রেখেছে। এটাই ওর গুণ। আমার অনেকটাই লেখা হয়ে গিয়েছে। এখনও নাম ঠিক হয়নি। এখনও বইটা শেষ হতে সময় লাগবে। তবে অন্য একটা বই প্রায় শেষের পথে। সেখানে আমি সারা জীবনে যে সব তারকার সঙ্গে দেখা করেছি, সেই অভিজ্ঞতার কথা থাকবে।
প্রশ্ন: মনে হচ্ছে, জাগতিক সুখের প্রতি আপনি বড্ড নির্লিপ্ত। এটা কি বয়সজনিত কারণে?
চিরঞ্জিৎ: শুরু থেকেই তো আমি এ রকম। বিশ্বাস করি, যা প্রাপ্য সেটাই পাব। ছবি আঁকছি যখন, বা অভিনয় করছি, সেখানে আমি আমার একশো শতাংশ দেব। কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি চড়ার জন্য কাজ খোঁজা বা অন্য কোনও পথে হাঁটতে আমি উৎসাহী নই। আবার এটাও হতে পারে যে, আমি হয়তো তত বড় অভিনেতা নই, তাই আমার মধ্যে কোনও ইগো নেই। ফলে জীবনে আমি কখনও অবসাদে ভুগিনি। আমি জানি, আমি রবীন্দ্রনাথ নই, অমিতাভ বচ্চন নই, দ্য ভিঞ্চিও নই। আমার মতে, জীবনে যে কারও নিজের অবস্থানটা বোঝাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অভিনয় থেকে অবসর গ্রহণের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
চিরঞ্জিৎ: না! যত দিন পারব অভিনয় চালিয়ে যাব।