দিন কাটছে চিন্তায়। বাড়িতে শ্যামলীদেবী এবং গদাধর। —নিজস্ব চিত্র
এত দিন পরীক্ষা শেষ হতেই ‘রেজাল্ট কবে’ বলে মেয়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে এসেছেন। এ বার একই প্রশ্নে সেই মেয়েই ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে বাবাকে!
আর মেয়ের সেই প্রশ্নই স্নায়ুর চাপ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে নানুরের তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরার। বাইরে অবশ্য বলছেন, ‘‘পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। তাই ফল নিয়ে কোনও টেনশনই নেই।’’ মুখে বলছেন বটে, কিন্তু তাঁর চোখমুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে— পরীক্ষার ফলের দীর্ঘসূত্রিতার এই চাপ আর নেওয়া যাচ্ছে না। ফল যাই হোক না কেন, তা জানা গেলে এত দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো না। তবু সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষাটা জানা গেলেও একটা ধারণা পাওয়া যেত। গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে যে নানুরে তৃণমূল প্রার্থী ৬০ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়েছিলেন, সেখানে গদাধরের দুশ্চিন্তার কোনও কারণই থাকার কথা নয়। তাঁর বরং হইহই করে জেতার কথা। কিন্তু সেই নিশ্চয়তায় জল ঢেলেছে দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
এ দিকে, নানা ভাবে নিজের দুশ্চিন্তা ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন গদাধর। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে মেঘা যখন জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা তোমার ফল কবে বেরোবে?’— তখনই স্নায়ুচাপ বেড়ে যায়। চাপ কমাতে দু’বেলা পার্টি অফিসে ছুটে যান গদাধর। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসে যান স্ক্রুটিনি করতে। যে সব বুথে তাঁরা এজেন্ট বসাতে পারেননি, যে সব বুথে জোটের এজেন্ট বসেনি— তার চুলচেরা হিসাব চলে দীর্ঘক্ষণ। সেই হিসাবের নিরিখেই জেতার ব্যাপারে আশা ছাড়ছেন না গদাধর। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তাই বলছেন, ‘‘পরীক্ষার পরে মেধাবিরাও ফল কেমন ভাল হবে, সেই চিন্তায় থাকে। আমার চিন্তাও সে রকম।’’
নানা কাজে সেই ‘চিন্তাটা’ই ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন এখন। স্ত্রী, দুই মেয়ে, দাদা-বৌদি, ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে গদাধরের একান্নবর্তী পরিবার। স্বামীর শুভ কামনায় ভোটের আগে স্থানীয় বিশালাক্ষ্মী মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন স্ত্রী মমতাদেবী। ভোটের পরে দিয়েছেন নিজেদের দুর্গা মন্দির, পাড়ার কালী মন্দিরেও। মমতাদেবী বলেন, ‘‘উনি বলেন, এত দিন মানুষের পাশে রয়েছি। মানুষও পাশে থাকবে। বুঝি, মানুষটা চিন্তায় রয়েছেন।’’
সমান চিন্তা সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধানেরও। বেশ কিছু বুথে এজেন্ট দিতে না পারার চিন্তা স্বস্তি দিচ্ছে না। ওই সব বুথে তৃণমূল প্রার্থী তাঁকে কতটা পিছনে ফেলতে পারেন, দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসে সেই হিসাব-নিকাশ করছেন তিনি। স্থানীয় কুমিরা গ্রামে বাবা-মা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইপো-ভাইঝি নিয়ে একান্নবর্তী পরিবার তাঁরও। বাবা দিলীপবাবু স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। বাবা বারবার মেয়েকে বোঝাচ্ছেন, ভাল পরীক্ষায় খারাপ ফল হয় না। তবু মন মানে না শ্যামলীদেবীর। বলছেন, ‘‘আগের বার মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে হেরেছিলাম। তাই ভাল-খারাপ কোনও কিছু নিয়েই চিন্তিত নই। তবে যাই হোক না কেন, ফল জানার জন্য এত দিন অপেক্ষা তো এর আগে করতে হয়নি। টেনশন তো হবেই।’’