Badshah Moitra

Bengal Polls 2021: পালাবদল ঘটুক বা না-ই ঘটুক, রাজনৈতিক প্রতিনিধি যেন বাঙালি হন

আমি যেমন দলের নীতি মানব, দলকেও আমার গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা মেনে নিতে হবে। আগামী দিনে এঁকে আপনাদের পাশে পাবেন। এমন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আমি ঘোর বিরোধী।

Advertisement

বাদশা মৈত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২১ ১২:২৩
Share:

নবান্ন

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন সত্যিই আমার কাছে অভূতপূর্ব। একাধিক কারণে। অনেক কিছু বলার আছে আগামী নির্বাচনের প্রচার, সামগ্রিক ছবি নিয়েও। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? বেশ কিছু কারণ আমার চোখে আগের আর আগামী নির্বাচনের মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

Advertisement

প্রথমেই বলব, ছোট থেকে পরিণত হয়ে ওঠা অবধি আমি বহু নির্বাচনের সাক্ষী। কিন্তু কোনও নির্বাচনের আগে এত বেশি পরিমাণে হিন্দিতে ভাষণ শুনিনি! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর বিশ্বভারতী, বাংলার উন্নতির কথা হিন্দিতে শুনছি। এই প্রথম শুনছি, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছেন হিন্দিতে। এবং কোনও দলে এত হিন্দিভাষী! এক আধজন নন, বহু সংখ্যক মানুষ এই দলে রয়েছেন। এমন প্রচারও যে বাংলায় হতে পারে, '২১-এর নির্বাচন না আসলে জানা হত না।

হিন্দি ভাষণের পর দ্বিতীয় কোনও বিষয় যদি আমায় অবাক করে থাকে, সেটা নেতা-মন্ত্রীদের বক্তৃতায় বডি শেমিং! অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একে অন্যের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন এই ধরনের কথা। ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন অমিত শাহকে আক্রমণ করে বললেন 'হোঁদল কুতকুত'! এ কী? রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে শোনা যাচ্ছে কুৎসিত ভাষায় গালাগালি, তুই-তোকারি। পরের প্রজন্ম যখন এই নেতা-মন্ত্রীদেরকেই এই ভাষায় কথা বলবেন তখন যেন তাঁরা গোসা না করেন, ‘আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আমায় কেন এই ভাষায় কথা বলা হল’, এই কথা বলে। কারণ, তাঁরাই এই ধরনের ভাষা, শব্দ ব্যবহার করতে শেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে।

Advertisement

প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এ বার আসি তৃতীয় অভূতপূর্ব দৃশ্যে। অবাক হয়ে দেখছি, সমস্ত রাজনৈতিক দল ভয়ানক সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। কে, ক'টা পুজো জানেন, পুজোর মন্ত্র জানেন, তার তালিকা দিচ্ছেন! আবার মন্ত্র পড়ে শোনাচ্ছেনও। রাজনীতিতে কোনও দিন পুজোও জুড়ে যাবে--- ভাবনাতেও ছিল না। '২১-এর নির্বাচন সেটাও করে দেখাল। অভাব-অভিযোগ, দুর্নীতি নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ শানাতে দেখেছি। কিন্তু শাসকপক্ষ এবং বিরোধী দল একে অন্যকে মন্ত্র শুনিয়ে বাহবা কুড়োচ্ছেন, এটাও বোধ হয় এই প্রথম।

দুর্নীতির কথা আসতেই মনে পড়ল, ভাষণে দুর্নীতি জায়গা করে নেয় ঠিকই কিন্তু সেই দুর্নীতির কথা কোনও পক্ষই স্বীকার করে না। এই নির্বাচনে সেখানেও চমক! দুই পক্ষ বুক ফুলিয়ে নিজেদের দুর্নীতি অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছেন। তার পর সুর চড়িয়ে বলছেন, আমি এই করেছি! অমুকে তো আরও বেশি করেছে, তমুকে ওই কাজটি করেছে। ‘আমি করেছি’ বলা মানেই প্রকারান্তরে নিজের দুর্নীতির কথা জনসমক্ষে নিয়ে আসা। এই বোধ, এই বুদ্ধিও কি লোপ পেতে চলেছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের?

পঞ্চমত, মুড়ি-মুড়কির মতো তারকাদের ব্যবহারও আগে দেখা যেত না। ২০১১-য় শাসকদল প্রথম তারকাদের ব্যবহার করেছিল। ২০২১-এ সেই ট্রেন্ড বিশাল ঢেউয়ের আকারে যেন আছড়ে পড়েছে। কে, কোথায়, কেন যাচ্ছেন, সেটাই অনেকের জানা নেই। জনগণকে ঢাল বানিয়ে, ‘তাদের জন্য কাজ করতে যাচ্ছি’-- এই কথা বলে তাঁরা ছুটছেন। এটা আমার ভাল লাগেনি। শিল্পী, অভিনেতা, বুদ্ধিজীবী রাজনীতিমনস্ক হবেন না বা রাজনীতি করবেন না, এমন কোথাও বলা নেই। আমিও রাজনীতি করি। কিন্তু তার একটা প্রস্তুতি অন্তত থাকা চাই। যাঁরা আসছেন তাঁরা কবে থেকে রাজনীতি সচেতন হলেন, কী করতে চান, সেটাই সম্ভবত ভাল করে জানেন না। অথচ দলে দলে যোগ দিচ্ছেন ‘কাজ’ করবেন বলে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সব শেষে বলি, আমি তখনই সেলেব যখন আমার জনপ্রিয়তা, বুদ্ধিমত্তা, ভাবাদর্শ, কথা কোনও দল ব্যবহার করবে। যাঁরা শাসক দল বা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের সে সব কই? তাঁরা নিজেরাই বলছেন, হয় ‘দিদি’ নয় ‘মোদী’কে দেখে যোগ দিচ্ছেন। নয়তো তাঁদের বুলি, ‘আমরা কিছু জানি না। দলনেত্রী জানেন। তাঁর কথাই সব!’ যাঁদের নিজস্বতা বলে কিচ্ছু নেই, তাঁদের রাজ্যবাসী আদৌ ‘সেলেব’ বলে ভাবেন তো? এত মেরুদণ্ডহীন তারকাদের দেখে বিষণ্ণ হয়ে পড়ছি। আমি যেমন দলের নীতি মানব, দলকেও আমার গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা মেনে নিতে হবে। নেতাদের বলতে হবে, আমায় নয়, এঁকে ভোট দিন। আগামী দিনে এঁকে আপনাদের পাশে পাবেন। এমন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আমি ঘোর বিরোধী।

এত কিছুর পরেও ’২১-এর নির্বাচনের কাছে আমার কিছু চাওয়া আছে। আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটুক বা না-ই ঘটুক, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, শাসক যেন বাঙালি হন। ‘সোনার বাংলা’ গড়তে একমাত্র বাংলার মানুষ-ই পারবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement