প্রতীকী চিত্র পিটিআই
২০২১। উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। চারিদিকে কোলাহল। বিধানসভা নির্বাচন আর দেরি নেই। আমি যদিও রাজনীতির মানুষ নই। কিন্তু ভোট প্রত্যেক বার দিই। কারণ সেটা জরুরি। সকলের কাছে অনুরোধ ভোট বয়কট করবেন না। ‘একটা ভোট না পড়লে কী হবে’, ‘কী লাভ ভোট দিয়ে’ এমন ভাবনাগুলো সরিয়ে রেখে নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলকেই কর্তব্য পালন করতে হবে। না না, অকারণ জ্ঞান দিচ্ছি না। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। এক বার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার দিনই ভোট পড়েছিল। একটু দূরের ট্রিপ ছিল। বেরনোর তাড়ার মাঝেও কিন্তু ভোটটা দিয়ে গিয়েছিলাম।
বরাবর এত নিষ্ঠা করে ভোট দেওয়া সত্ত্বেও, এই সময় জাতীয় বা রাজ্য রাজনীতিতে কী ধরনের উথাল পাতাল হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও রকম টিপ্পনি করব না। আমি বাংলার মেয়ে। কলকাতাতে বেড়ে উঠেছি। নিজের শহরকে খুব ভালবাসি। তাই এই শহরটা এবং তাঁর মানুষগুলোর ভালর কথা বিবেচনা করে কোন দলকে ভোট দেব সে কথা ভাবব। চাইব আমার মতো করে অন্যেরাও ভাবুন। তা হলেই আগামী দিনে কলকাতা আরও সুন্দরী হবে।
কলকাতার মানুষ, বাঙালিরা খুব শান্তিপ্রিয়। এখানে ঝামেলা-দাঙ্গা, মারামারি হবে, সেটা আমরা কেউই দেখতে বা ভাবতে পারিনা। তাই এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা ভেবেই মানুষকে ব্যালট বক্সের বোতামটা টিপতে হবে। যে কোনও নির্বাচনের আগেই অনেক প্রচার হয়। হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু সে সবের আতিশয্যে না ভুলে, মানুষকে নিজের মতো করে চিন্তা করতে শিখতে হবে। বলা ভাল, ভাবা প্র্যাকটিস করতে হবে। বাড়িতে বসে মাথা ঠাণ্ডা করে ঠিক করতে হবে কাকে ভোট দিলে সামগ্রিক উন্নয়ন হতে পারে।
বিগত কয়েক বছরে কলকাতাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। শহরের এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে গেলে চিনতেই পারি না ঠিক কোথায় এসেছি! আমার অনেক চেনাশোনা এবং আত্মীয়রা বাইরে থেকে এসে কলকাতাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইছেন। এটা কলকাতাবাসী হিসেবে আমার কাছে খুবই গর্বের। চাইব আগামী দিনে শহর সেজে উঠুক আরও সুন্দর ভাবে। শহরের সঙ্গেই শহরবাসীরাও দেখুক ঝলমলে দিন। যেখানে থাকবে না ভয়, বাসা বাঁধবে না আতঙ্ক। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকে পাবেন তাঁদের অধিকার, যোগ্য সম্মান।
ভোট নিয়ে এত কথা বলতে বলতে পুরনো একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেল। সে বার প্রথম ভোট দিচ্ছি। অন্যান্য দিন সকালে ঘুম যেন চোখ ছেড়ে যেতেই চাইত না। কিন্তু সেই দিনটায় সময়ের আগেই উঠে তৈরি। ভবানীপুরে ভোট দিই আমরা। বুথে গিয়ে সে কী প্রচণ্ড উত্তেজিত আমি। দেশের নাগরিক, পশ্চিমবঙ্গবাসী হয়ে এই প্রথম নিজের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ! যখন ভোটযন্ত্রের বোতামটা টিপেছিলাম, কেমন একটা অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল আমার মতামতটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমি কী মনে করি না করি, তারও একটা মূল্য আছে তবে!
(লেখক বাংলা টিভি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী)