দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব চাইছে ‘মহাগুরু’ মিঠুনদা প্রার্থী হন। কিন্তু কী চাইছেন বাঙালি সুপারস্টার নিজে? ছবি: সংগৃহীত।
বিজেপি চাইছে এটা স্পষ্ট। কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তী চাইছেন কি? অস্পষ্ট এখনও। তবে নানা সূত্রেই ইঙ্গিত মিলছে, শুধু প্রচারের মুখ না হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত পদ্মের প্রার্থী হতে পারেন। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব চাইছে ‘মহাগুরু’ মিঠুনদা প্রার্থী হন। বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবার দিল্লিতে প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনায় বারবার উঠেছে মিঠুনের নাম। কিন্তু কী চাইছেন বাঙালি সুপারস্টার নিজে? তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা না গেলেও তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই ‘দাদা’ মুম্বই চলে গিয়েছেন। ছবির ‘ফাটাকেষ্ট’ যে ‘এমএলএ’ হতে রাজি তার ইঙ্গিত এই চলে যাওয়ার মধ্যেই রয়েছে বলে দাবি বিজেপি শিবিরের একাংশের।
তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ অবশ্য কোনও দিন নির্বাচনের ‘অগ্নিপথ’-এ পা রাখেননি। এ বার সেটাই করতে চাইছে গেরুয়াশিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত মিঠুন বাংলার ভোটার নন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটার লিস্টে নাম থাকাটা জরুরি। কিন্তু সংশোধিত ভোটার লিস্ট প্রকাশের পরে নির্বাচন পর্ব শুরু হয়ে গেলে কি সেটা আর সম্ভব? নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী এখনও ভোটার হওয়ার সময় রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে যে এলাকার ভোটার তিনি হবেন সেখানকার নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে।’’
এখনও রাজ্যের শেষ ৫টি পর্বের ভোটগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। সর্বশেষ তথা অষ্টম দফার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে ৩১ মার্চ। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের যে কোনও জায়গার ভোটার হলেই বিধানসভা ভোটে যে কোনও কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়। যদি কলকাতা বা সংলগ্ন কোনও আসনের জন্য মিঠুনকে প্রার্থী করা হয় তবে তার জন্য এখনও হাতে অনেকটা সময় রয়েছে। বিজেপি শিবিরের একাংশ বলছে, সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যই পূর্ব ঘোষণা মতো প্রচারে না নেমে পড়ে মুম্বই চলে গিয়েছেন মিঠুন। বিজেপি সূত্রে এমনটাও জানা যাচ্ছে যে, মিঠুনের জন্য যে আসনটি ভাবনার মধ্যে রয়েছে সেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৩ মার্চ। তার জন্যও হাতে সময় আছে। তবে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘মিঠুন চক্রবর্তী বাংলার মুখ। তাঁকে রাজ্যের যে কোনও কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবেই বাছা যেতে পারে। তাই ওঁর মতামতের জন্য অপেক্ষা করার সময় নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও চাপ নেই।’’
মিঠুন যে প্রার্থী হতে পারেন সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। গত শুক্রবার কৈলাস বলেন, ‘‘মিঠুন বলেছেন নির্বাচনে লড়বেন না। তবুও আমরা মিঠুনের সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করার চেষ্টা করব।’’ মোদীর সভায় মিঠুনের হাজির থাকা থেকে তাঁর বিজেপি-তে যোগদান গোটাটাই হয়েছে কৈলাসের মাধ্যমে। সেই সময়ে কার্যত মিঠুন-যোগ নিয়ে খানিক অন্ধকারেই ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিল্লিতে শনিবারের প্রার্থী-বৈঠক সেরে ফেরার পরে তিনিও বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যাঁরা যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সকলকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে চাই। মিঠুনদা অনেক প্রবীণ মানুষ। সবটাই নির্ভর করছে ওঁর ইচ্ছার উপরে।’’ বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা স্বীকার করতে না চাইলেও দলের একাংশের দাবি, ‘পাকা কথা’ হয়ে গিয়েছে। তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন ‘মহাগুরু’। সময় মতো ঘোষণা করা হবে।
গত ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশে ধুতি-পাঞ্জাবিতে ‘বাঙালিবাবু’র সাজে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন মিঠুন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় হুঙ্কার ছেড়েছিলেন সুপারস্টার। সভার পর আলাদা করে তাঁর সঙ্গে মিনিট পনেরো কথাও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তখন জানা গিয়েছিল, তাঁকে শুধু প্রচারে ব্যবহার করার কথাই ভাবছে বিজেপি। মিঠুন নিজেও বলেছিলেন, তিনি শুধু প্রচারই করবেন। বিজেপি-তে যোগদানের দু’দিন পরেই মিঠুনের জন্য ‘ওয়াই প্লাস’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ঠিক ছিল, শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামের প্রার্থিপদে মনোনয়ন দাখিল করার পর মিঠুন শুভেন্দুর সঙ্গে নন্দীগ্রাম যাবেন। কিন্তু তা হয়নি। শোনা গিয়েছিল, তিনি রবিবার কেশপুরে প্রচারে যেতে পারেন। সেটাও হয়নি। মিঠুন এখন মুম্বইতে। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বললেন, ‘‘দাদা ফিরে আসবেন চলতি মাসেই। তার পরে শুরু হবে রাজনৈতিক কর্মসূচি।’’