বামেদের প্রার্থিতালিকায় এ বার একঝাঁক তরুণ মুখ।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বামপন্থীরা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন। এ বার তাদের প্রার্থিতালিকা আলো করে আছেন একদল যুবক যুবতী। এঁদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত। চাইলে কোনও একটি অফিসে চাকরি করতে পারতেন, কিংবা পড়াতে পারতেন কোনও স্কুলে। অর্থাৎ কিছু না পেয়ে রাজনীতি করতে এসেছেন এমনটা নয়। ছয় ও সাতের দশকে বামপন্থী নেতাদের মধ্যে এই গুণ ছিল। এমনকি বাম জমানা হটিয়ে তৃণমূলের ক্ষমতায়নের সময়েও এই ধরনের কিছু মানুষ সামনে এসেছিলেন। আজকে কিন্তু একেবারে ফাঁকা জায়গা। সিপিএম-এর আমলে তোলাবাজির দায়ে বিদ্ধ ছিলেন নীচের বা মাঝের সারির যে নেতারা, এখন তার বিনির্মাণ তৃণমূল-বিজেপির শীর্ষনেতাদের পারস্পরিক বাক্য বিনিময়ে। মূল দুই প্রতিপক্ষের তরজার একটা বড় অংশ দুর্নীতির অভিযোগ। মনে রাখতে হবে যে, সত্যিই দুর্নীতি কতটা হয়েছে সে কথা কোনও দিন আমজনতা জানতে পারবে না। নির্বাচনে যা কাজ করে তা হল দুর্নীতির উপলব্ধি (পারসেপশন)। রাজীব গাঁধী ভুগেছেন, বিভিন্ন সময় ভুগেছে কংগ্রেস। ২০১৬ নির্বাচনে অবশ্য এর প্রভাব পড়েনি তৃণমূলের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায়নে। বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্তরে সাধারণ ভাবে এই অভিযোগ কম। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে প্রচুর নেতা দল পরিবর্তন করায় দুই দলের মধ্যে উপলব্ধ দুর্নীতির অভিযোগ বৃত্তাকার। এই জায়গায় অবশ্যই কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আজকের বামপন্থীরা। তাদের প্রার্থী তালিকায় দলবদলের হিড়িক নেই, নেই অভিনেতা অভিনেত্রীদের ঢল। বরং একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা বেশ কয়েক জন ছাত্র-যুব প্রতিনিধিকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। এ প্রসঙ্গে অবশ্য একথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল যে তৃণমূল এবং বিজেপি-র তালিকাতেও অনেক অভিজ্ঞ এবং দায়িত্বশীল প্রার্থী আছেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে খুব বেশি প্রচার নেই এই দু’টি দলে। বরং নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁদের অক্লান্ত কর্মীরা ঢাকা পড়ে গিয়েছেন লাইট, ক্যামেরা, সাউন্ডের ঝলকানিতে।
এই প্রসঙ্গে বলতেই হয় যে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাম বৃদ্ধতন্ত্র নিয়ে সরাসরি সমালোচনা চলছে। বৃদ্ধতন্ত্র মানে শুধু বয়স্ক মানুষের দখলদারি নয়। সে তো সব দলেই আছে। বিজ্ঞানের কারসাজিতে বাঁচার গড় বয়স সবসময়েই ক্রমবর্ধমান। আর নেতা মানেই দিনের শেষে শাসক। ফলে একবার ক্ষমতা হাতে পেলে ছেড়ে দেওয়ার জায়গা কম। সংসার থেকে অফিস কাছারি, পড়াশোনা কিংবা খেলাধুলো, সব জায়গাতেই শাসকের চেহারা একই রকম। তবু শাসক ছাড়া চলবে না, সে সমাজতন্ত্রই হোক কিংবা ফ্যাসিবাদ। চেয়ার একটা থাকবে, সেখানে কোনও একজন নারী বা পুরুষ বসবেন এবং প্রজাকে ধমকাবেন। এর উদাহরণ প্রচুর। যেমন রাষ্ট্র, দল, পরিবার, কোনও একটি সংস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনও একসময় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা মানুষকে সরতেই হয়। সেই পরিবর্তনের সময়গুলো আশাবাদের, বাকি সময়টুকু আশা বাদ। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সিপিআই সম্ভবত সেই ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছে। যেখানে দলের শাসকগোষ্ঠী জায়গা ছাড়ছেন নবীনদের। যাঁরা নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত তাঁরা তা বুঝতে পেরেছেন এবং সসম্মানে পিছনের সারিতে গিয়ে বসছেন।
ফিরে দেখুন সাতের দশকের সিপিএম-কে। ১৯৭৭ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস এবং শ্যামল চক্রবর্তী তিন জনেই ৩৩, সুভাষ চক্রবর্তী ৩৫, বিমান বসু ৩৭। বামফ্রন্ট যখন ইতিহাস লিখে ক্ষমতায় আসছে, তার বেশ আগে থেকেই এই সমস্ত নেতার পথ চলা। অর্থাৎ অঙ্ক সহজ। ছয় কিংবা সাতের দশকের বামপন্থী নেতারা যৌবনেই বেশ নাম করেছিলেন। তার পর ক্ষমতার অচলায়তন। নয়ের দশক পর্যন্ত তা-ও কিছু প্রগতিশীল ভাবনার জায়গা ছিল। তার পর পুরোটাই পার্টি অফিস থেকে ইট বালি সুরকি। ওপরের দিকের নেতারা তুলনায় সৎ এবং পরিচ্ছন্ন হলেও, মাঝের সারির লাখখানেক পাড়া কিংবা পঞ্চায়েতের কার্যকর্তা দাপিয়ে বেড়ালেন সহস্রাব্দের আগে ও পরের দুই দশকে। শীর্ষ নেতারা তখন ষাটের কোঠা পার করছেন। ফলে তাঁদের উৎসাহে ভাঁটা পড়াটাই স্বাভাবিক। কাজের কথা বলতে গেলেই সেই পুরনো মাও কিংবা লেনিনের বুলি, শুধুই জ্ঞানের আস্ফালন। সঙ্গে পার্টি অফিস সমস্ত ক্ষমতার উৎস, বন্দুকের নল পালিয়ে বেঁচেছে। অর্থাৎ তাঁদের দেখে আর খুব নিজের আদর্শ হিসেবে ভাবার কথা মনে করত না আমজনতা। এই দলকে সরতেই হত কোনও একদিন। কিন্তু বিরোধীপক্ষ আদৌ উন্নততর বিকল্প দেখাতে পারেনি। তাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিভিন্ন শ্লোগানের লাঠিতে ভর করে সরকার চলছিল। তার মধ্যে শিল্প সম্ভাবনা যেটুকু দেখা গিয়েছিল তা সামলানোর জোর ছিল না বাম বৃদ্ধতন্ত্রের। সেখান থেকেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম।
২০১৬-য় হেরেও এক শ্রেণির বামপন্থী সমব্যথীকে জাগিয়ে রাখতে পেরেছেন শতরূপ।
২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে মানুষ বুঝল বিকল্প যত মন্দই হোক না কেন, বর্তমানকে অতীত করতেই হবে। ২০০৯ লোকসভা সেই ভাবনায় গাঢ় শিলমোহর দিল। ২০১১ সালের ফল জানাই ছিল আগে থেকে। মনে রাখতে হবে যে জ্যোতি বসু বুদ্ধি করে সরে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জায়গা করে দিয়ে। সহস্রাব্দের গোড়ার দিকেও সিপিএম-এ আগামী ভাবনার মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার ১০ বছর পরে বৃদ্ধতন্ত্রের চেতনায় শুধুই কার্ফু। সেই কারণেই জনগণের ভোটে হারতে হল বুদ্ধদেবকে। এই প্রত্যাখ্যান বুঝতে পেরে তখনও ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু সেখানেও দম্ভ বর্তমান, রাজনৈতিক ভাবনায় স্বচ্ছতা কম। ফলে উদাহরণ বাড়ল। ২০১৬ সালে নির্বাচনে হারলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। এখানেই মনে করাতে হবে শতরূপ ঘোষের কথা। এই যুবকও হারলেন ২০১৬ নির্বাচনে। কিন্তু হেরেও জিতলেন তিনি। কারণ তাঁর নেতৃত্বের সঙ্গে রয়ে গেল উদ্ধত যৌবনের আবেদন। টেলিভিশন বিতর্ক থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মিটিংয়ের ছবি ইউটিউবে পেশ করে জেগে থাকলেন তিনি। জাগিয়ে রাখলেন এক শ্রেণির বামপন্থী সমব্যথীকে। এর মধ্যে অন্য দু’একজন যুব বাম নেতা প্রখ্যাত হয়েও ছোটখাটো ভুলে পথ হারালেন। জুড়ে গেলেন প্রত্যাখ্যাতদের সারিতে। কেউ বদলালেন দল। বেশ কয়েকজন নেতা থাকলে তেমন কিছু যেত আসত না, কিন্তু হারাধনের মাত্র ১০টি ছেলে হওয়ায় এতেও বেশ মুশকিলে পড়ল সিপিএম। তার সঙ্গে দলের মধ্যে একে অপরকে খোঁচা দেওয়ার বিষয় তো থাকবেই, যা নাকি বেশি বাড়ে বৃদ্ধতন্ত্রের দখলদারিতে।
বামপন্থী বৃদ্ধতন্ত্রের দীর্ঘ শাসন ছাড়াও তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার মূল কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদর্প নেতৃত্ব (তিনিও একুশে বেশ পরিচিত, এবং ১৯৮৪ লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ২৯ বছর বয়সে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে) এবং বিজেপি-আরএসএস-এর বামপন্থীদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার রাজনৈতিক অভিমুখ। সে কাজে কেন্দ্রের শাসকদল যথেষ্ট সফল। ২০০৪ সালে লোকসভায় ষাটের বেশি আসন পাওয়া বামপন্থীদের তারা এক অঙ্কের সংখ্যায় নামিয়ে এনেছে ২০১৯ সালে। বিশেষ করে আরএসএস যে ভাবে শুরু থেকেই তাঁদের ভবিষ্যতের নেতাদের তৈরি করে, তার ফল মেলে দুই বা তিন দশক পর। এই সাপ্লাই লাইন এখন বিজেপির মূল ভিত্তি। বোঝাই যাচ্ছে গত দশকের পুরোটাই বামেদের অস্তিত্ব বিপন্ন, এবং তার কারণ নবীন নেতৃত্ব তৈরি করার ব্যর্থতা। এই সুযোগে ত্রিপুরাতে কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ঘুরে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি এবং বাম বিদায়। পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে বামেরা হারল, ২০১৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেও হার। কিন্তু ভোটের হার তখনও যথেষ্ট ভাল ছিল। মুশকিল হল তার পর থেকে। যেখানে বিজেপির উত্থানের কারণ তৃণমূল বিরোধিতায় বড় অংশের বাম সমর্থকের রামভাবনা এবং বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীদের দলবদল। তৃণমূল যে ভাবে ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। সেই পথই নিল বিজেপি, তবে আঙ্গিক কিছুটা ভিন্ন। কারণ অন্য দলের লোক ভাঙিয়ে দল বাড়ানো বা সরকার গঠনে বিজেপি অনেক বেশি দক্ষ। তাই বিজেপি যখন বুঝল যে বামেদের শক্তিক্ষয় চূড়ান্ত, তখনই তারা পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের পরিবর্তন শ্লোগান তুলল। একথা তো মানতেই হবে যে এখনও পর্যন্ত নির্বাচনে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। সেখানে বাম-কংগ্রেস এবং হঠাৎ উদয় হওয়া তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা অলীক বললে খুব ভুল হবে না।
এই তরুণদের কেউ পার্টি অফিসে বসে সুবিধাবাদী সিপিএম করেননি।
তাই এখনও প্রশ্ন আসছে যে আসন্ন নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীদের জেতার কথা কেউ ভাবছেন কি? এ রাজ্যে মোট ভোটার ৭ কোটির বেশি। আশা করা যায় তার মধ্যে অন্তত ৫ কোটির বেশি মানুষ ভোট দেবেন। এক একটি কেন্দ্রে গড়ে ভোটদান হবে দেড় থেকে পৌনে দু’লক্ষর মতো। সেখানে ত্রিমুখী লড়াইতে অন্তত ৩০ শতাংশের মতো ভোট না পেলে জেতার আশা কম। অর্থাৎ প্রায় ৬০-৭০ হাজার করে মানুষের সমর্থন পেতে হবে জেতার জন্যে। এ রকম ভোট অবশ্যই ২০১৬ নির্বাচনে জোটের হাতে ছিল। কিন্তু তার পরের ৩ বছরে এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তার বেশিরভাগটাই চলে গিয়েছে বিজেপি-তে। সিপিএম-এর পোড় খাওয়া নেতারা আলিমুদ্দিনে বসে যতই গভীর যুক্তিজাল বুনুন না কেন, এর মূল কারণ তিনটি। এক, কেন্দ্রে শক্তপোক্ত সরকার গড়ার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতা, দুই তৃণমূলের বিরোধিতায় বিজেপিকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করা, এবং তিন, এক শ্রেণির মাঝের সারির সিপিএম নেতার বিশ্বাসভঙ্গ, যাঁরা মনে করেন আগে রাম, আর তৃণমূল উৎখাতের পরে বাম। এর মধ্যে শেষের দু’টি চলরাশি এই নির্বাচনেও বর্তমান। ফলে প্রেক্ষিত খুব বদলায়নি। সুতরাং বদলাতে হত বামেদেরই।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধিতায় সিপিএম প্রার্থীতালিকার যুবকযুবতীরা অবশ্যই অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। এই খাতায় আছেন জেএনইউ-তে লড়াই করে মাথা ফেটে যাওয়া ঐশী ঘোষ। আছেন পৃথা, যিনি বাবাকে হারিয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। আছেন মীনাক্ষী, যিনি ছাত্রযুবদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচাতে আগলাতে পারেন রাস্তায় পড়ে থাকা কর্মীকে। এঁরা পার্টি অফিসে বসে সুবিধাবাদী সিপিএম করেননি। একেবারে পথে নেমে প্রমাণ করেছেন এঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা। রাজনীতি বদলায়, তবে এটুকু আপাতত মনে করা যেতেই পারে যে এঁরা খুব সস্তায় বিক্রি হবেন না বঙ্গ রাজনীতির হাটে। হয়ত রাজনীতির গোলকধাঁধায় কানহাইয়ার মতো চুপ করে বসে থাকবেন, তবু চটজলদি জার্সি বদলাবেন না। সবথেকে বড় কথা ছয় ও সাতের দশকে বাম রাজনীতির নেতৃত্ব ছিল পুরুষদের হাতে। সেখান থেকে অর্ধেক আকাশের এই দখলদারি অবশ্যই অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। তবে সিপিএম-এর পাড়ার যে নেতারা বৃদ্ধতন্ত্রে শিলমোহর দিয়ে গোপনে বিজেপিতে ভোট সরাচ্ছেন তাদের পুনর্বাসন দেওয়াও জরুরি। বিজেপি ভারতের একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। সিপিএম ছেড়ে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ মানুষ সেই দলে যেতেই পারেন। কিন্তু তাদের সেই রাস্তা প্রকাশ্যে দেখিয়ে দেওয়ায়ও দলের এই নতুনদের দায়িত্ব। তবেই জনগণ গন্ধ পাবে যে বামেরা নিজের যোগ্যতায় জিততে চাইছে। জিততে চাইছে তারুণ্যের স্পর্ধায়। আর তা না হলে ভোট বেড়ে যাওয়ার বদলে কমবে, আরও জাঁকিয়ে বসবে বৃদ্ধতন্ত্র।
আসন নয়, ২০১৯ সাল থেকে ভোট শতাংশ বাড়ানোই এখন সিপিএম-এর মূল চ্যালেঞ্জ।
উপসংহারে বাস্তবতা ছুঁতেই হবে। সিপিএম ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দল হলেও আজকে তারা এই বাংলা এবং দেশের ভোট রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই উপহাসের পাত্র। ব্রিগেড মিছিলের উন্মাদনায় কবিতা লেখা যায়, ফাগুনের আকাশে ওড়ানো যায় রোমান্টিসিজমের লাল আবির। কিন্তু তাতে ভোট আসে না। হারলেও এই নির্বাচনে সিপিএম-কে বাড়াতে হবে ভোট। সারা বছর পড়ে পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে যেমন পড়াশোনার অনেকটাই বৃথা, সংসদীয় রাজনীতিও তাই। যেখানে ভোটের সংখ্যাই নম্বর, আর আসনের সংখ্যা প্রথম হওয়ার পুরস্কার। যুব বাম নেতৃত্ব ভালই বোঝেন ফিদেল, চে, মাও, লেনিন নিয়ে আজকের বাংলায় আলোচনার জায়গা কম। মানুষের দরকার কাজ। কেরলে যেখানে দৈনিক মজুরি সাতশো টাকার ওপরে, সেখানে সারা দেশে তা অনেক কম। সেই রুটি-কাপড়া-মকান কিংবা বিজলি-সড়ক-পানির জায়গাটা এ বারের নির্বাচনে হারিয়ে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় শ্লোগানের অবাস্তবতায়, দুর্নীতি আর ধর্মের কচকচিতে। সেই জায়গাটা সিপিএম-এর জন্য ফাঁকা পড়ে আছে কারণ ভারতীয় রাজনীতিতে দল হিসেবে এই জায়গাটা তাদেরই। কোভিড পরিস্থিতিতে জনগণের রান্নাঘরে তাই তাদের উপস্থিতিই সবথেকে উজ্জ্বল। আসনের হিসেবে হারলেও, এ বার বামপন্থীদের কাছে সবথেকে জরুরি প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে কিছু ভোট ফিরিয়ে আনা। অর্থাৎ আসন নয়, ২০১৯ সাল থেকে ভোট শতাংশ বাড়ানোই এখন সিপিএম-এর মূল চ্যালেঞ্জ। তারপর বালিতে দীপ্সিতা কিংবা কসবায় শতরূপ যদি বাজি মারেন, সে তো অধিকন্তু ন দোষায়। ২০১৬ নির্বাচনে জয়ী সুজন চক্রবর্তী কিংবা তন্ময় ভট্টাচার্য কি এই নতুনদের পথ দেখাতে পারবেন? নাকি নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর বামফ্রন্ট আবার ফিরে যাবে বৃদ্ধতন্ত্রে?
(লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, মতামত ব্যক্তিগত।)