প্রতীকী ছবি।
জেলার বাইরে থেকে কাউকে প্রার্থী করা হয়নি। শুধু কয়েকটি আসনে ‘অদলবদল’ করা হয়েছে। তাতেও ‘দ্বন্দ্ব’ সামাল দিতে বেশ সময় দিতে হচ্ছে নেতা-কর্মীদের, প্রার্থী ঘোষণার পরে পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলে এমনই পরিস্থিতি বলে দল সূত্রের দাবি। নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, প্রার্থীদের অনেককেই ‘মানভঞ্জন’ করতে কিছুটা সময় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব এ বার জেলার কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থী ‘ওলটপালট’ করেছেন। রায়না থেকে গলসিতে পাঠানো হয়েছে নেপাল ঘোড়ুইকে। গলসি থেকে জামালপুর বিধানসভার প্রার্থী হয়েছেন অলোক মাঝি। আবার খণ্ডঘোষের বাসিন্দা, জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়া রায়নার প্রার্থী হয়েছেন। তালিকা ঘোষণার আগে নানা জায়গায় স্থানীয় প্রার্থী চেয়ে পোস্টার পড়েছিল। প্রার্থীরা অবশ্য পুরোদমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন, দাবি দল সূত্রের।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগেই রায়না ২ ব্লকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে সভা ডাকেন শম্পাদেবী। কাইতি বাজারের একটি খামারে সেই সভায় ব্লকের অনেক নেতা হাজির হননি বলে দাবি। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের অনেককেও দেখা যায়নি। কাল, সোমবার ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে ফের এক বার বৈঠকের কথা রয়েছে। দল সূত্রের দাবি, ব্লকের এক নেতার সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তার ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। প্রার্থীর সঙ্গে কারা থাকবেন, সে নিয়ে টানাপড়েন চলছে। পঞ্চায়েত সমিতির ওই কর্তা বলেন, ‘‘কোনও গোষ্ঠীর খপ্পরে না পড়ে দলের মতো চলতে হবে প্রার্থীকে। সে কথা জানিয়েছি।’’ রায়নার তৃণমূল প্রার্থীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা নেই।’’
বর্ধমান শহরে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বারবার সামনে এসেছে। দল খোকন দাসকে প্রার্থী করার পরে তা ফের প্রকাশ্যে আসতে পারে বলে দলের অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু দল সূত্রের খবর, নাম ঘোষণার পরে তৃণমূল প্রার্থী দলের অন্দরে তাঁর ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত নেতাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ‘সাহায্যে’র হাত বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। তাতে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন নেতাকে প্রার্থীর পাশে দেখা গিয়েছে। আবার অনেকে এখনও ‘মুখ ফিরিয়ে’ রয়েছেন বলে দাবি। খোকনবাবু বলেন, ‘‘আমাকে দল প্রার্থী করেছে ঠিকই। কিন্তু আসল প্রার্থী তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা আমাদের লক্ষ্য। সবাই যাতে প্রচারে নামেন, সেই চেষ্টাই করছি। সবার কাছে গিয়েছি আমি।’’ দলীয় সূত্রের খবর, শহরের এক প্রবীণ নেতা পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে চিঠি দিয়েছেন। খোকনবাবুও দলকে জানিয়েছেন, যাঁরা এখনও ভোটের কাজে নামছেন না, তাঁদের বাদ দিয়েই তিনি সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে প্রচারে যাবেন।
এ বার ভাতারে ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর দাবি তুলেছিলেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা। সেই মতো দল মানগোবিন্দ অধিকারীকে প্রার্থী করেছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, মানগোবিন্দবাবু প্রতিদিনই নিচুতলার বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। সবাই যাতে প্রচারে নামেন, সেই বার্তা দিতে হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, দলের একাংশের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব চোখে পড়ছে। মানগোবিন্দবাবু শুধু বলেন, ‘‘সকলের শুভেচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছি।’’ মন্তেশ্বরেও দলীয় কর্মীদের ‘মান’ ভাঙাতে সময় ‘ব্যয়’ করতে হচ্ছে প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে, দাবি জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের। সিদ্দিকুল্লা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কিছু মান-অভিমান ছিল। সব মিটে গিয়েছে।
গলসি ও কাঁকসা ব্লকে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’-এর অভিযোগ ওঠে অনেক দিন ধরেই। লোকসভা ভোটে তারই ফলশ্রুতিতে এলাকায় বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা তৃণমূল নেতৃত্বের। তৃণমূল সূত্রের দাবি, কাঁকসার চারটি পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন এলাকায় দেওয়াল লিখন চোখে পড়লেও প্রচারের তেমন জোর দেখা যাচ্ছে না। রায়না থেকে গলসির প্রার্থী করা হয়েছে নেপাল ঘোড়ুইকে। দলের স্থানীয় এক নেতার দাবি, ‘‘প্রার্থী কোনও গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ুক, এটা আমরা চাইছি না।’’
জামালপুরেও ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর দাবি উঠেছিল। তা অবশ্য মানা হয়নি। প্রার্থী করা হয়েছে গলসির বিদায়ী বিধায়ক অলোক মাঝিকে। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের দাবি, এলাকায় দলের দু’টি গোষ্ঠীর বড় অংশকে এখনও প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। দলের অফিসগুলিতেও তেমন ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না। প্রার্থী অলোকবাবুকে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক নেতার দাবি, ‘‘বুথ-কর্মীদের উপরে ভরসা করে প্রচার সারছেন প্রার্থী।’’
জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কোনও দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। প্রার্থী ঘোষণার পরে ধীরে-ধীরে প্রচারে গতি আসছে বলে দাবি নেতাদের।