তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় হুমায়ুন কবীর এবং জুন মাল্য। নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ১৯টি আসনে নতুন মুখ ১০ জন। তাঁর মধ্যে ২ জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ১৩টিতে। মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি প্রয়াত হন। সেই জায়গায় শহরের ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের পাশাপাশি মেদিনীপুর শহরে পোস্টার পড়েছিল। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি মেদিনীপুরে বিধানসভা কেন্দ্রীক আলোচনার সময় এক তৃণমূল নেতার সঙ্গে প্রার্থী সংক্রান্ত আলোচনা করেছিলেন। তখন ওই ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘‘এখনও তোমার সময় আছে’’। তার পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। দলের আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় পর মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অভিনেত্রীর জুন মাল্যর নাম ঘোষণা করেন দলনেত্রী মমতা।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে জুন মালিয়া, গড়বেতা কেন্দ্রে আশিস চক্রবর্ত্তীকে সরিয়ে উত্তরা সিংহ হাজরার নাম ঘোষণা হয়েছে। উত্তরা মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি। ডেবরা কেন্দ্রে সেলিমা খাতুনকে সরিয়ে প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ূন কবীরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ডেবরা এলাকাতেই তাঁর পৈতৃক বাড়ি। সবং কেন্দ্রে বিদায়ী বিধায়ক গীতা ভূইয়াঁকে সরিয়ে তাঁর স্বামী মানস ভূইয়াঁর নাম ঘোষণা হয়েছে। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মানস দীর্ঘদিন সবং এলাকায় বিধায়ক ছিলেন। তৃণমূল মানসকে রাজ্যসভা সাংসদ করার পর ওই আসনে উপ-নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী গীতা ভূঁইয়া তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা কেন্দ্রে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের পরিবর্তে অজিত মাইতির নাম ঘোষণা হয়েছে। অজিত মাইতি জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি ও দলের জেলা সভাপতি। সৌমেন লড়বেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে তাঁর পুরনো কেন্দ্রে। চন্দ্রকোনা কেন্দ্রে ছায়া দলুইয়ের বদলে প্রার্থী অরূপ ধাড়া। তিনি চন্দ্রকোনা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান পুরপ্রশাসক। নারায়ণগড় কেন্দ্রে প্রদ্যুৎ ঘোষকে সরিয়ে সূর্যকান্ত অট্টর নাম ঘোষণা হয়েছে। সূর্যকান্ত জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ।
অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলায় তিনটি কেন্দ্রে নতুন প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি সুকুমার হাঁসদা প্রয়াত হওয়ার পর ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বীরবাহা হাঁসদার নাম ঘোষণা করেছে। তিনি বিনপুর এলাকার বাসিন্দা। সাঁওতালি সিনেমার অভিনেত্রী। বীরবাহার বাবা প্রয়াত নরেন হাঁসদা এবং মা চুনীবালা, দু’জনেই বিনপুর কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। তিনদিন আগেই কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। গোপীবল্লভপুর চুড়ামণী মাহাতোকে সরিয়ে খগেন্দ্রনাথ মাহাতোর নাম ঘোষণা হয়েছে। বিনপুরে বিদায়ী বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ হেমব্রমের জায়গায় বিনপুরে প্রার্থী করা হয়েছে দেবনাথ হাঁসদাকে।
মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবি উড়িয়ে জুনকে প্রার্থী করায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন শুক্রবার। যদিও দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মেদিনীপুর কেন্দ্রে একজন অভিনেত্রীর নাম ঘোষণা হয়েছে। জেলায় তারকা থাকছেন। এর থেকে আর কী পাওনা হতে পারে?’’ নাম ঘোষণার পরেই মেদিনীপুর শহরে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জুনের নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে যায়। শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের নেতৃত্বে দেওয়াল লিখন শুরু হয়। চন্দ্রকোনা এবং ডেবরা কেন্দ্রের বিধায়কদের কেন সরিয়ে দেওয়া হল সেই প্রশ্নের উত্তরে অজিত বলেন, ‘‘দিদি ওঁদের অন্য জায়গায় দায়িত্ব দেবেন বলে হয়তো এ বার প্রার্থী করেননি।’’ খড়গপুর সদর কেন্দ্রে দেওয়াল লিখন করতে দেখা যায় ২০১৯-এর উপনির্বাচনে জয়ী বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী প্রদীপ সরকারকে।