চিরঞ্জিতের মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক। —ফাইল চিত্র।
রাজনীতির কচকচি ভাল না লাগায়, সরে যেতে চেয়েছিলেন। শেষমেশ যদিও বারাসত থেকেই ফের তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু প্রচারে বেরিয়ে মহিলাদের পোশাক সংক্রান্ত পুরনো বিতর্কে জিয়নকাঠি ছুঁইয়ে দিলেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। মহিলাদের খাটো পোশাক ‘ধর্ষণ’ এবং ‘ইভটিজিং’-এর মতো ঘটনায় ইন্ধন জোগায় বলে মন্তব্য করে বছর আটেক আগে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন তিনি। নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে সুর খানিকটা নরম করলেও, চিরঞ্জিত জানিয়ে দিলেন, সব ক্ষেত্রে না হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইভটিজিং বা যৌন নিগ্রহের মতো ঘটনায় মহিলাদের পোশাকের একটা ভূমিকা থেকেই যায়।
সম্প্রতি মহিলাদের ছেঁড়া জিন্স পরা নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা তীর্থ সিংহ রাওয়ত যে মন্তব্য করেন, তার সঙ্গে চিরঞ্জিতের মন্তব্যের কোনও ফারাক দেখছেন না অনেকেই। শুক্রবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাসতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিরঞ্জিৎ। সেখানে পুরনো মন্তব্য টেনে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, পরিস্থিতি বদলেছে কি না। জবাবে চিরঞ্জিৎ বলেন, ‘‘সময় পাল্টেছে। এখন যে কোনও সময়ে যে কেউ বেরোতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই মেয়েদের। কোথাও অসুবিধে নেই।’’
২০১২ সালে একটি ধর্ষণের ঘটনার পর অভিনেতার বক্তব্য ছিল, ‘‘ইভটিজিং দীর্ঘদিন ধরে আসছে। এই ধরনের ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ হল মহিলাদের ছোট পোশাক।’’ সেই সময় মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি। তাতে প্রশ্ন উঠেছিল, আইনশৃঙ্খলার ত্রুটি না ধরে মেয়েদের তিনি ‘ড্রেসকোড’ বেঁধে দিচ্ছেন কোন যুক্তিতে?
এত বছর পর কি সেই মত থেকে সরে এসেছেন চিরঞ্জিৎ? শুক্রবার এই প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা বলেন, ‘‘ড্রেসকোড বেঁধে দিইনি। পরামর্শ দিয়েছিলাম। আজও মতামত একই আছে। কিছু পরিবর্তন হয়নি। কথা হল, জায়গা বুঝে পোশাক বাছাই করা প্রয়োজন। শ্রাদ্ধবাসর এবং ডিস্কোথেকের পোশাকের মধ্যে যে পার্থক্য থাকা উচিত, তা সবাই জানে। একই ভাবে ভিড় লোকাল ট্রেনে চেপে যখন কোনও মেয়ে পড়তে যায়, তার পোশাক কেমন হওয়া উচিত, সেটাও সকলের জানা। নতুন কিছু নয়।’’ তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক হওয়ার মতো কিছু নেই বলেও মনে করেন চিরঞ্জিৎ।
কিন্তু অভিনেতার এই মন্তব্যে চটেছেন বারাসতে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী তথা ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতেও লজ্জা করে আমার। মানুষ একবার ভুল করে। কিন্তু কেউ যখন বার বার মেয়েদের আক্রমণ করেন, ছোট করেন, সেটাকে ভুল বলা যায় না। বুঝে নিতে হবে, নিজের জীবনবোধ থেকেই তিনি ওই কথা বলছেন।’’ বারাসতের বিজেপি নেতা প্রতীক চৌধুরী বলেন, ‘‘চিরঞ্জিত বিধায়ক হওয়ার পরেই বারাসত ধর্ষণনগরী হয়ে গিয়েছে। পোশাকের জন্যই মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হন আগেও বলেছেন চিরঞ্জিৎ। বারাসতের মানুষ ভোটবাক্সেই জবাব দেবেন ওঁকে।’’