প্রতীকী ছবি।
দু’পক্ষই অনমনীয় থাকায় শেষ পর্যন্ত জট কাটল না পুরুলিয়ার দুই কেন্দ্র—জয়পুর ও বাঘমুণ্ডিতে।
শুক্রবার ছিল পুরুলিয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু জয়পুর আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোর বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি কংগ্রেস প্রার্থী ফণীভূষণ কুমার। তেমনই বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যহার করেননি ওই আসনের ফব প্রার্থী দেবরঞ্জন মাহাতোও। এর ফলে ওই দুই আসনে সংযুক্ত মোর্চার দুই সঙ্গী কংগ্রেস ও ফব-র মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জোট না হওয়ার জন্য কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক দু’পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে।
তবে জোটের নেতারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন স্ক্রুটিনিতে কাশীপুরের কংগ্রেস প্রার্থী সুভাষচন্দ্র মাহাতোর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার ঘটনায়। ওই আসনে সিপিএমের প্রার্থী মল্লিক মাহাতো প্রার্থী হন। তার পরেও মনোনয়ন জমা করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী। কংগ্রেসের পুরুলিয়ার জেলা সাধারণ সম্পাদক বলরাম মাহাতো বলেন, ‘‘পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কাশীপুরে আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু তার আগেই অবশ্য আমাদের প্রার্থীর মনোনয়নে কিছু ত্রুটি থাকায় তা বাতিল হয়েছে।”
জয়পুর ও বাঘমুণ্ডিতে সংযুক্ত মোর্চার দুই সঙ্গী লড়াইয়ে নেমে পড়ার ঘটনায় সারা জেলাতেই জোটে প্রভাব পড়তে পারে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। তার ইঙ্গিতও মিলেছে এ দিন। ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসীম সিংহ দাবি করেন, ‘‘জয়পুরে আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস নিজের প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। এরপরে আমরা পুরুলিয়া ও বলরামপুরে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করব না। কাকে সমর্থন করা হবে, সেটা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কংগ্রেসের জন্যই দুই আসনে জোট হয়নি বলে অভিযোগ তুলে অসীমবাবু দাবি করেন, ‘‘কংগ্রেস বরাবরই বিশ্বাসঘাতকতা করে, এ বারেও সেটাই করেছে।”
কংগ্রসের বাঘমুণ্ডির প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘বাঘমুণ্ডিতে আমি মনোনয়ন করার অনেক আগে থেকেই ফব-র প্রার্থী দেবরঞ্জন মাহাতোর নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়। পুরুলিয়াতে জোট হোক, সেটা ফরওয়ার্ড ব্লকই প্রথম থেকে চায়নি।”
অন্য দিকে, শেষ পর্যন্ত পুরুলিয়ার তিন আসন— বলরামপুর, জয়পুর ও পাড়া কেন্দ্রে বিজেপির বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় ওই তিন আসনে ‘গোঁজ কাঁটা’ রয়েই গেল। এ দিন অবশ্য বলরামপুরের বিজেপির এক ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী তথা বলরামপুরের জেলা পরিষদের সদস্য গোপীনাথ গোস্বামী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু দলের আর এক ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী তথা বলরামপুরে বিজেপির একটি মণ্ডলের সভাপতি অশ্বিনী সিং সর্দার তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
গোপীনাথবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভা এলাকার দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই স্থির হয়েছে নির্বাচনে লড়াই করবেন মণ্ডল সভাপতি অশ্বীনিবাবু। তাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি।” আর অশ্বিনীবাবু বলেন, ‘‘মনোনয়ন প্রত্যাহার করিনি। নির্বাচনে নির্দল হিসেবে লড়াই করব।”
পাড়া কেন্দ্রেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী স্বপন বাউরি। ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রতীকে লড়াই করা স্বপনবাবু জানান, তিনি নির্দল হিসেবে এয়ারকুলার প্রতীক পেয়েছেন। জয়পুর আসনেও বিজেপির গোঁজ কাটা হয়ে রয়ে গেলেন ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী নেপালচন্দ্র মাহাতো। বাঘমুণ্ডি আসনে বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী বিভূতিভূষণ মাহাতোর মনোনয়ন আগেই বাতিল হওয়ায় সেখানে স্বস্তি পেয়েছে ওই আসনে বিজেপির শরিক দল আজসু।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য বলা হয়েছিল। তাঁরা নির্দেশ মানেননি। এ বার দলগত ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে ‘বিক্ষুব্ধরা’ ভোটে কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হবেন না বলেই দাবি তাঁর।