কলকাতার সদর কার্যালয়ে বিজেপির পতাকা ধরলেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
গৌরীশঙ্কর দত্ত দল থেকে চলে যাওয়া মানে কার্যত নদিয়া জেলা তৃণমূলে একটি যুগের ইতি। তিনি সেই কতিপয় নেতাদের এক জন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে ‘গৌরীদা’ বলে সম্বোধন করতেন, তিনি বলতেন ‘মমতা, তুমি...’।
প্রথম জীবনে কিছু দিন নকশাল রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন গৌরীশঙ্কর। পরে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী ছিলেন। তখন তিনি কৃষ্ণনগর পুরসভার কংগ্রেস পুরপ্রধান, মমতার ডাকে যোগ দেন নতুন দলে। পরে এক বার কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ফের তৃণমূলে চলে আসেন। ওই সময় থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ২০১১ সালে রাজ্যে ‘পরিবর্তনের ভোট’-এ তেহট্ট কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করে দল। কিন্তু সে সময়ে তেহট্টের এক জনপ্রিয় নেতা নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট কাটায় তিনি হেরে যান। পরের বছর, ২০১২ সালে গৌরীশঙ্করকে জেলা সভাপতি পদে বসান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝের কিছু দিন বাদ দিয়ে ২০১৯ পর্যন্ত তিনিই দাপটের সঙ্গে সেই পদ সামলেছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে তিনি ফের তেহট্ট কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। তাঁকে খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যানও করা হয়।
তবে নদিয়ার রাজনীতিতে মহুয়া মৈত্রের উত্থানের পর ইদানীং দলের মধ্যে কিছুটা কোণঠাসাই হয়ে পড়েছিলেন গৌরীশঙ্কর। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে জিতে মহুয়া কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়ার পরে তাঁকে সরিয়ে জেলার সংগঠনকে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী হন মহুয়া আর রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয় শঙ্কর সিংহকে। পরে আবার দু’টি সাংগঠনিক জেলা মিলিয়ে দিয়ে অবিভক্ত নদিয়ার জেলা সভানেত্রী করা হয় মহুয়াকে। পুরনো নেতাদের অনেকের সঙ্গেই মহুয়ার বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে আসে। সেই তালিকায় শঙ্কর সিংহ, কল্লোল খাঁ, উজ্জ্বল বিশ্বাসেরা ছিলেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন গৌরীশঙ্কর। বলা চলে, তিনি অনেকটাই হিসেব কষে পা ফেলছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
এ বারের ভোটে গৌরীশঙ্করের নতুন ভূমিকা কী হয়, তা হয়তো সামনের কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।