প্রচারে উন্নয়ন বনাম দুর্নীতি
West Bengal Assembly Election 2021

West Bengal Election 2021: লোকসভার ফলে ঘাড়ের কাছে বিজেপি

স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, ভোটের লাভপুরে উন্নয়ন এবং দুর্নীতি, দু’টিই সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:৪২
Share:

লাভপুরে টোটোয় চড়ে প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

প্রার্থী ঘোষণা হতেই প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছেন শাসকদলের লাভপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অভিজিৎ সিংহ। এলাকার উন্নয়নকেই প্রচারের হাতিয়ার করছেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিসংখ্যান নিয়ে কখনও হেঁটে, কখনও বা টোটোয় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁচ্ছে যাচ্ছেন। অন্য দিকে, প্রার্থী ঘোষণা না হলেও বিরোধীরা পিছিয়ে নেই। গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট সভা করে শাসকদলের ‘দুর্নীতি’র কথা তুলে আনছে বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস।

Advertisement

স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, ভোটের লাভপুরে উন্নয়ন এবং দুর্নীতি, দু’টিই সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। লা’ঘাটায় কুঁয়ে এবং গুনুটিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে সেতু নির্মাণ সেগুলির অন্যতম। ২০১০ সালে বামআমলে সেতু দু’টির শিলান্যাস হলেও অর্থাভাবে কাজ থমকে যায় সেই সেতুর কাজ এখন শেষের মুখে। লাভপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এই সেতু দু’টি তৈরি করায় তারা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে মনে করছে তৃণমূল।

অন্য দিকে, বিরোধীরা অনুন্নয়নের প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের দাবি, ঠিবা পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি গ্রামে এখনও উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। রামঘাটিতে কুঁয়ে নদীতে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও অথৈ জলে। জেলার অন্যান্য পীঠস্থান ফুল্লরা মহাপীঠে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিক্ষিপ্ত কিছু কাজ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। একই সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগকেও হাতিয়ার করেছে বিরোধী দল। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাটমানির পাশাপাশি পুকুর ভরাটের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। এর সঙ্গে রয়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভও। সে ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।

Advertisement

আবার এটাও ঠিক যে, পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক পরের বছরই (২০১৯) হওয়া লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে লাভপুরে কিন্তু এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলই। যদিও ব্যবধান ছিল সামান্যই। ওই কেন্দ্রে প্রদত্ত ২ লক্ষ ২ হাজার ১৮১টি ভোটের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল ৯৪ হাজার ৫১৪টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৭৩৬ এবং সিপিএম মাত্র ৮ হাজার ২৩১টি ভোট পায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বামজোটের ভোট বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়ায় তাদের ভোট বাড়ে । ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শাসকদলকে চাপে পড়তে হতে পারে।

তবে, লোকসভা ভোটের ফলের পরে পরেই রাজনৈতিক সমীকরণে অনেক বদল এসেছে লাভপুরে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী মনিরুল ইসলাম যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। তবে, মনিরুলের যোগদান ভাল মনে নেননি এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ। মনিরুল-বিরোধী পোস্টারও সম্প্রতি পড়েছে লাভপুরে। সে-সব দেখে বেশ স্বস্তিতে শাসক-শিবির। আবার এটাও ঘটনা যে, এখনও লাভপুরে মনিরুল অনুগামীর সংখ্যা খুব কম নয়। বিদায়ী বিধায়কের প্রভাবও রয়েছে যথেষ্ট।

সব মিলিয়ে লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের এ বারের লড়াই খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিজেপির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘শাসকদলের দুর্নীতি আর দাদাগিরিতে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। সেই ক্ষোভেই ধরাশায়ী হবে তৃণমূল।’’ এই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে অভিজিৎ সিংহ প্রত্যয়ী সুরে বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির জন্য বিজেপি-র আর ভোট চাওয়ার মুখ নেই। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের জন্য এ বারের ব্যবধান বাড়িয়ে জিতব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement