যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
প্রথম দফার ভোটগ্রহণে তেমন নামজাদা আসন না থাকলেও ভোট-সূচনার উত্তেজনা ছিল। আর দ্বিতীয় দফায় ৩০ আসনে ভোটগ্রহণ থাকলেও সব আলো একা কেড়ে নিয়েছিল নন্দীগ্রাম।নীলবাড়ির লড়াইয়ে সবচেয়ে উত্তেজনা আর কৌতূহল যে আসন নিয়ে, সেখানে ঘটনার ঘনঘটাও দেখা গিয়েছে ১ এপ্রিল দিনভর। তৃতীয় দফায় তেমন নজরকাড়া নির্দিষ্ট কোনও আসন নেই। তবে কয়েকটি কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবেই। তার মধ্যে অবশ্যই ডায়মন্ড হারবার।
যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এই লোকসভা এলাকার মধ্যে মোট ৭টি বিধানসভা। তার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া এবং বিষ্ণুপুরে ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী সব ক’টিতেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রাজ্যের বাকি সব জেলায় কোনও না কোনও বিধানসভা আসনে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও ব্যতিক্রম এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা। জেলার ৩১টি আসনের সব ক’টিতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। আর ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে তৃণমূল জয় পায় ৩,২০,৫৯৪ ভোটে। এই এলাকার মধ্যে যে ৪টি আসনে মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ, সেখানেও অনেক অনেক ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বাকি যে ৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে তার মধ্যে একমাত্র কুলতলিতে ২০১৬ সালে জিতেছিল সিপিএম। সব মিলিয়ে তথ্য বলছে, রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গেরুয়া শিবিরের লড়াই অনেকটা পিছিয়ে থেকেই।
তবে কঠিন হলেও ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে এই জেলায়। ২০১৬ সালে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। জেলার সংগঠনে তাঁর দাপটের কথা সর্বজনবিদিত। তবে ২০১৯ সালে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। আর এখন রাজনীতির বাইরে। লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি-তে যোগ দিলেও সদ্যই দল ছেড়েছেন। বিজেপি অবশ্য শোভনের সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তাঁকে দলের সাংগঠনিক কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক করেছিল বিজেপি। তার মধ্যেই পড়ে গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। সেই মতো কাজও করছিলেন শোভন। কিন্তু ছন্দপতন হয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর। পছন্দের বেহালা পূর্ব আসনে নাম না থাকায় বিজেপি ছাড়েন শোভন। তবে শুধু শোভন নন, শুভেন্দু অধিকারীর সাংগঠনিক প্রভাবও এই জেলায় কাজে লাগাতে চেয়েছে বিজেপি। ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার ওই আসন থেকেই বিজেপি-র প্রার্থী। শুভেন্দুর হাত ধরেই দীপক বিজেপি-তে যোগ দেন।
তবে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা শোভন-শুভেন্দুই নন গেরুয়া শিবিরের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারাও এই জেলার উপরে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একের পর এক সভা ও পদযাত্রা করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। আর নীলবাড়ির লড়াই শুরুর প্রথম সফরেই এই ডায়মন্ড হারবারে যান বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তাঁর কনভয়ে হামলা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতি। এর পরে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ কর্মসূচিতে সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানায় যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মথুরাপুর, সোনারপুরে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি সন্তোষও এসেছেন সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে। সোমবারও তাঁর একাধিক কর্মসূচি ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।