দল ও নিজের জয় নিয়ে ‘খুশি’ মুখে প্রত্যয় প্রকাশ করলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
দুপুর ১২টার মধ্যেই ৬০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে নন্দীগ্রামে। সাড়ে ১২টা নাগাদ সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনটাই দাবি করেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। জানালেন, তাঁর বা বিজেপি-র কোনও অভিযোগ নেই। দল ও নিজের জয় নিয়েও প্রত্যয় প্রকাশ করলেন ‘খুশি’ মুখে। এই সব দাবির পাশাপাশি নিজেই বুঝিয়ে দিলেন কোন অঙ্কে খুশি গেরুয়া শিবির।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ ভোট দেন শুভেন্দু। এর পর কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেবেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায় কখনও গাড়িতে, কখনও বাইকের পিছনে বসে বুথ থেকে বুথে ঘুরছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি চলে যান ভেকুটিয়ায়। ভোটগ্রহণ শুরুর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই এক বিজেপি কর্মীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় এই ভেকুটিয়াতে। মৃতের নাম উদয় দুবে, বয়স ৪৮। পরিবারের দাবি, আত্মীয়ের বাড়িতে রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলেন উদয়। স্ত্রী, সন্তানরা অন্য ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে পরিবারের লোকেরা দেখেন, বারান্দায় দেহ ঝুলছে। সেই বাড়িতে যান শুভেন্দু। পরে তিনি বলেন, ‘‘আনিরুল নামে এক জন হুমকি দিত উদয়কে। এটা আত্মহত্যা না হয়ে খুনও হয়ে থাকতে পারে। সবটাই স্পষ্ট হবে ময়নাতদন্তের পরে।’’ সেই সঙ্গে শুভেন্দু জানান, ওই মৃত্যুর পরে আতঙ্কে ২০০ পরিবার ভোট দিতে চাইছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সকালে ভোট দিয়ে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, “৬৬ বছর, (মমতা) আন্টি। আন্টি কো থোড়া শান্ত রহনা চাহিয়ে (আন্টিকে একটু শান্ত থাকবে হবে)। সংযত থাকতে হবে তাঁকে। গুন্ডাগিরি করা চলবে না। উন্নয়ন জিতবে, তোষণের রাজনীতির পরাজয় হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের অঙ্ক মেলানোর বিষয়ে অমিত শাহের জুড়ি নেই। তাই তিনি যেটা বলেছেন সেটাই হতে চলেছে। তিনি আগেও হিসাব মিলিয়ে দিয়েছেন, এ বারও মিলে যাবে।’’ তবে দুপুর গড়ানোর পরে নতুন হিসেব পেশ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সুফিয়ান মডেল, সামাদ মডেল ফেল। বেগমের দুধেল গাইরা কিছু করতে পারবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা জয় শ্রীরাম বলেন, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে বলেন, যাঁরা দুর্গা পুজো করেন, জয় মা কালী বলেন তাঁরা দুপুর ১২টার মধ্যেই ৬০ শতাংশ ভোট দিয়ে দিয়েছেন।’’
শুভেন্দু তাঁর প্রচার পর্বেও বার বার মমতাকে সরাসরি ‘বেগম’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘রোহিঙ্গাদের খালা, অনুপ্রবেশকারীদের ফুফু’ বলেছেন। ‘পাকিস্তান জিতলে এখানে যারা বাজি ফাটায়’-সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ টানায় অনেকেই বলছিলেন, মমতার অঙ্ক-কষা ঝুঁকিকে প্রতিহত করতে মেরুকরণের এই তাস খেলেছেন শুভেন্দু। ভোটের দিন দুপুরে তাঁর বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিত কিনা তা নিয়েও ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
নন্দীগ্রামের বহু বুথে তৃণমূল এজেন্ট দিতে পারেনি বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেই সম্পর্কে শুভেন্দু বলেন, ‘‘তৃণমূল কেন এজেন্ট দিতে পারেনি সেটা ওরা বলবে।’’ বুধবার কেশপুরে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে। তা নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে সেটা রাজনৈতিক সংঘর্ষে হয়েছে না অসুস্থতার কারণে, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। ভোটে যারা হারে তারা এ সব বলে। একজন যেমন ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে ঘুরছিলেন। বেগম হারছে। বিকাশ জিতছে। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ।’’