প্রতীকী ছবি।
বেনজির বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। এই প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে ৮ দফায়। শুধু তাই নয়, এক একটি জেলায় একাধিক দফায় ভোটগ্রহণ হবে। সব চেয়ে বেশি ভাঙা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় অর্থাৎ ১, ৬ ও ১০ এপ্রিল হবে এই জেলার ভোটগ্রহণ।
তবে বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমানের সব আসনে একই দিনে ভোটগ্রহণ। আর কার্শিয়ং জেলায় তো একটিই বিধানসভা আসন। এমনকি কলকাতাতেও এ বার দু’দফায় ভোটগ্রহণ। সপ্তম ও অষ্টম দফায় হবে মহানগরের ভোটগ্রহণ।
রাজ্যে ২৯৪টি কেন্দ্রে মোট ৮ দফায় ভোট গ্রহণের সূচি শুক্রবারই ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই সূচি অনুযায়ী আগামী ২৭ মার্চ প্রথম দফায় ৩০টি আসনে নির্বাচন রাজ্যে। ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ ৩০টি আসনে। ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ভোটগ্রহণ। চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ভোটগ্রহণ ৪৪টি আসনে। এর পরে ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ ৪৫টি আসনে। ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৪৩টি আসনে। সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। অষ্টম দফায় ভোটগ্রহণ ২৯ এপ্রিল। শেষ দফায় ৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ।
রাজ্যে এত বেশি দফায় ভোটগ্রহণ কেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিহারে ২৩৪ আসনে যদি ৩ দফায় ভোট হয়, তা হলে বাংলার ২৯৪ আসনে ৮ দফায় ভোট কেন?’’ কমিশনের সিদ্ধান্তকে যদিও ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন ‘অভিনন্দন’ও। কিন্তু পাশাপাশি বলেছেন, ‘‘আমি শক্ড!’’ এর পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলেও সরাসরি অভিযোগ করেছেন তিনি। ‘বিশেষ’ কাউকে বাংলায় সুবিধা পাইয়ে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
বিজেপি অবশ্য এই সূচিতে খুবই খুশি। রাজ্যে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘আমরা চাই, বাংলার মানুষ যাকেই ভোট দিন, শান্তিতে ভোট দিন। ভোট ঘিরে যেন কোনও হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটে।’’
মমতা বিরোধিতা করলেও সূচিতে খুশি কংগ্রেসও। দলের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে অতীতে এ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে ৮ নয়, ১২ দফায় ভোট করানো উচিত ছিল কমিশনের।’’
মোট ৮ দফায় বাংলায় ভোট করাতে কমিশনের সিদ্ধান্তের পিছনে কেন্দ্রের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র হাতে এজেন্সি রয়েছে। ভোটের আগে এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করছে তারা। ভোটের আগে বাংলায় টাকা পাঠাচ্ছে। আমরা সব বুঝতে পারছি। কমিশনকে বলছি, টাকার খেলা বন্ধ করুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের কাজ করুন। কিন্তু তিনি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সব দল মিলে যদি মনে করে বাংলাকে ধ্বংস করবে, বাংলার মানুষ তার জবাব দেবেন। এক মাসে ৮ দফায় ভোট কি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ঠিক করে দিয়েছে?’’
শুক্রবার কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি যে অখুশি তা প্রতিটি মন্তব্যে বুঝিয়ে দেন মমতা। বলেন, ‘‘মিস্টার নরেন্দ্র মোদী, মিস্টার অমিত শাহ, আপনাদের বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন! আমিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এক মহিলাকে এত ভয়!’’
করোনা আবহের পরে এই প্রথম বাংলায় কোনও নির্বাচন। তাই অনেক নতুন ব্যবস্থাও নিচ্ছে কমিশন। বাংলার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৪ রাজ্য— কেরল, তামিলনাড়ু, অসম এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে নির্বাচন হতে চলেছে। সর্বত্রই ভোট গণনা ২ মে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ