বাইরে থেকে যাঁরা ভোটের কাজে পশ্চিমবঙ্গে আসবেন, কমিশন তাঁদের নিখরচায় চিকিৎসা করানোর নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। ফাইল চিত্র।
করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মীদের মতো প্রথম সারির যোদ্ধার সম্মান ও স্বীকৃতি পাবেন ভোটকর্মীরাও। তাঁদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে প্রতিষেধক। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ভোটের কাজে যুক্ত কারও মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া অন্যান্য বছরের মতোই ভোটের সময় কোনও রকম নাশকতা বা হিংসায় কারও মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের আওতায় থাকবেন তাঁর পরিবারও।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাইরে থেকে যাঁরা ভোটের কাজে পশ্চিমবঙ্গে আসবেন, কমিশন তাঁদের নিখরচায় চিকিৎসা করানোর নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, কোভিড-আবহে সতর্ক কমিশন ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সন্তুষ্ট হতে চাইছে, সেই সঙ্গে সর্বতোভাবে আশ্বস্ত করছে ভোটকর্মীদের।
প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলায় এ বার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১,০১,৯১৬। ভোটের কাজে যুক্ত থাকবেন অন্তত সাড়ে ছ’লক্ষ কর্মী। তাঁদের মধ্যে ২০% থাকবেন রিজ়ার্ভে। কোভিডের জন্য অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কমিশন। ‘ন্যাশনাল এক্সপার্ট গ্রুপ’-এর সুপারিশ মেনে প্রত্যেক ভোটকর্মীকে প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, ভোটের কাজে যাওয়ার আগে কোনও ভোটকর্মীই যেন প্রতিষেধকের আওতার বাইরে না-থাকেন।
তবে আধিকারিক মহল জানাচ্ছে, প্রতিষেধক নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কেউ না-চাইলে তাঁকে জোর করে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না। এই অবস্থায় কমিশনের সিদ্ধান্ত, ভোটের কাজ করতে গিয়ে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এই মর্মে সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছে তারা।
ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের চিকিৎসার ব্যাপারেও আগে থেকে ভোটমুখী রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছে কমিশন। প্রশাসনের অন্দরের খবর, কোনও কোনও নিরাপত্তাকর্মীর চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ নিয়ে আগের ভোটে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এ বার তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) এবং জেলাশাসকদের আগে থেকে প্রস্তুতি চালাতে বলা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ, বাইরের রাজ্য থেকে যাঁরা ভোটে কাজ করতে আসবেন (বিশেষ করে আধাসেনা), তাঁদের কেউ আহত বা অসুস্থ হলে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সে-ক্ষেত্রে কোভিডের চিকিৎসার উপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন অবিলম্বে নিজেদের এলাকার হাসপাতালগুলির সঙ্গে সমন্বয় সেরে রাখেন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা মাথায় রেখে বিশেষ নিভৃতবাসের পরিকাঠামোও প্রস্তুত রাখতে হবে প্রশাসনকে। ভোটের ফলাফ? ঘোষণা পর্যন্ত এই বন্দোবস্ত রেখে দিতে হবে।
এমনিতে বঙ্গে কোভিড সংক্রমণের হার ক্রমশ কমছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, কেরলের মতো রাজ্যে সেই হার বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই সব রাজ্য থেকে আসা বিমানযাত্রীদের কাছে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু ট্রেনেও বহু মানুষ সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই কোভিড সুরক্ষার দিক থেকে কোনও রকম ফাঁকফোকর রাখতে চাইছে না প্রশাসন।