প্রতীকী ছবি।
নির্বাচন কমিশন আগেই পুরুলিয়ার জয়পুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছিল। শুক্রবার হাইকোর্ট কমিশনের সেই সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়ায়, চিন্তায় পড়েছেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই কেন্দ্র নিয়ে দলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ঠিক করতে জেলা নেতৃত্ব বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।
মনোনয়নপত্রে দু’দফায় কিছু ত্রুটি থাকায় জয়পুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী উজ্জ্বল কুমারের প্রার্থিপদ বুধবার বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের প্রার্থী পদের আবেদনকারী উজ্জ্বলবাবু। সে দিনই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে ওই মামলা ওঠে। আদালত জানিয়ে দেয়, মনোনয়নপত্রটি যথাযথ এবং তাতে আইনি সমস্যা নেই। রিটার্নিং অফিসার যে ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে বাতিল করেছিলেন, সেগুলি ‘অতিমাত্রায় প্রযুক্তিগত’ এবং সেই ত্রুটি কোনও ভাবেই যথেষ্ট নয়। আদালত জমা করা ওই মনোনয়নপত্রকে স্বীকৃতি জেয়। তবে সে দিনই নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছিল, তেমন হলে তারা ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
হলও তাই। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচন কমিশন আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানায়। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন কমিশনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এর ফলে পুরুলিয়ার জয়পুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তই বহাল থাকল।
তবে এ নিয়ে বিশদে মন্তব্য করতে চাননি উজ্জ্বলবাবু। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করার পরেই এ বিষয়ে যা বলার বলব।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গুরুপদ টুডুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই অবস্থায় জয়পুর বিধানসভায় আমাদের পদক্ষেপ কী হবে, তা স্থির করতে বৈঠকে বসা হবে।’’ তিনি জানান, উজ্জ্বলবাবুর মনোনয়নে ত্রুটি কী ভাবে হল, তা-ও ওই বৈঠকে পর্যালোচনা করা হবে।’’
সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের পরে উদ্বেগ কেটে গিয়ে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছিল জয়পুর কেন্দ্রের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের রায় জানার পরেই তাঁরা মুষড়ে পড়েন। তাঁদের একাংশের মতে, জয়পুর কেন্দ্রে এরপরে দলের প্রার্থী থাকল না। এই অবস্থায় তাঁদের কী করণীয়, তা জানতে কর্মী–সমর্থকেরা অনেকেই দলের জেলা নেতাদের ফোন করতে শুরু করেন।
তবে ওই ব্লকের নেতাদের একাংশ চাইছেন, ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে যাওয়া হোক। জয়পুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি শঙ্করনারায়ণ সিংহ দেও বলেন, ‘‘রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের কাছে আমাদের আবেদন, এরপরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হোক দল।”
এই অবস্থায় জয়পুরে দলের প্রতি ‘অভিমান’ করে নির্দল প্রার্থী হওয়া দিব্যজ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেওকে তৃণমূলের সমর্থন করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তেমন কথা ভেবে দেখা যেতে পারে বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতিও। দলের অন্দরের খবর, বিষয়টি জেলা নেতৃত্বের আলোচনায় ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিন রাতে জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘জয়পুরে আমাদের দলের কোনও প্রার্থী থাকল না।’’ ওই নেতার দাবি, ‘‘দলের প্রতি ‘অভিমান’ করে নির্দল প্রার্থী হওয়া এক নেতাকে সমর্থন করার কথা ভাবা হচ্ছে।” তবে জয়পুর ব্লক নেতৃত্বের একাংশ আবার তেমনটা হলে কতখানি মানবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। দিব্যজ্যোতি প্রসাদের দাবি, ‘‘আমার অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলেই
সিদ্ধান্ত নেব।’’