নরেন্দ্র মোদী। ফাইল ছবি।
এক দিকে পর পর উৎসব, অন্য দিকে পরীক্ষা— এই দুইয়ের ভারসাম্য রেখে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দিন ক্ষণ ঠিক করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
এত দিন মনে করা হচ্ছিল, আগামী সপ্তাহেই কমিশন ভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণা করবে। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, মার্চের ১ বা ২ তারিখ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ-অসম-কেরল-তামিলনাড়ু-পুদুচেরির মতো ভোটমুখী রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা ও শিলান্যাস করবেন। সে ক্ষেত্রে ৩ বা ৪ মার্চ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা।
সরকারি সূত্রের খবর, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, তামিলনাড়ুতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কর্মসূচি থাকবে। তার আগে অবশ্য ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিয়ো কনফারেন্সে আইআইটি-খড়গপুরের বার্ষিক সমাবর্তনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আইআইটি-র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ-এরও উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর মতোই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভোট ঘোষণা ও আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার আগেই রাজ্যের নানা সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস সেরে ফেলছেন। ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ব্রিগেডে জনসভায় যোগ দিতে পারেন। সরকারি অনুষ্ঠান না-হলে আদর্শ আচরণবিধিতে কোনও সমস্যা হবে না।
আগামী ৪ মে থেকে সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্কুল ছেড়ে দিতে হবে। সেই হিসেবে ৩ বা ৪ মার্চ ভোট ঘোষণা করলে, পাঁচ রাজ্যে ভোট করাতে কমিশনের হাতে দু’মাসের কম সময় থাকবে। পুদুচেরি, তামিলনাড়ুতে এক দফায়, কেরল, অসমে দু’দফায় ভোট করালেও, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত পাঁচ থেকে সাত দফায় ভোট করানোর পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “৩ মার্চ ভোট ঘোষণা হলে সেটির বিজ্ঞপ্তি জারি হতে-হতে ৫ মার্চ পেরিয়ে যাবে। বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার ২১ দিন পরে প্রথম দফার ভোট করানো সম্ভব।” এরই মধ্যে দোল-হোলি উৎসব রয়েছে ২৮-২৯ মার্চ। তাই তার আগে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত এক দফা ভোট সেরে রাখতে চাইছে কমিশন।
গুড ফ্রাইডে পড়েছে ২ এপ্রিল। কেরল ও পুদুচেরি থেকে ওই সপ্তাহে রাজ্যে ভোট না-করানোর অনুরোধ এসেছে। ছোট রাজ্য বলে সকলের আগে ভোট করিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। কারণ সে ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ শেষের পর থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত প্রায় এক মাস দলের কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের বাইরে ইভিএম পাহারায় বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া ১৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে বাংলা নববর্ষ ও অসমে বিহু উৎসব। সে সময়ে আবার ওই দুই রাজ্যে নির্বাচন করানোর সমস্যা রয়েছে। ২১ এপ্রিল রামনবমী ও ২৫ এপ্রিল মহাবীর জয়ন্তী রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি, উৎসব ও পরীক্ষা— এই তিন মিলিয়ে কমিশনের কাছে মূলত পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় কিংবা গত লোকসভার মতো সাত দফায় ভোট করানোর জন্য হাতে এক মাস রয়েছে। দোলের আগে এক দফা ভোটগ্রহণ করা গেলেও প্রতি দফা ভোটগ্রহণের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধান থাকতে চলেছে। এক সপ্তাহ আগেই ভোটমুখী কেরলে একগুচ্ছ পর্যটন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ভিডিয়ো মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন রাজ্যের জন্য একাধিক বিদ্যুৎ এবং নগরোন্নয়ন প্রকল্প। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। মোদী বলেন, “বিকাশ এবং উন্নয়নের কোনও জাতি ধর্ম ভাষা লিঙ্গভেদ হয় না। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাসের এটাই মন্ত্র।’’