ব্রিগেড সমাবেশ। ফাইল ছবি।
দীর্ঘ ১৬ বছরের বিরতি। আগামী রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড ময়দানে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে কংগ্রেসের।
বিধানসভা ভোটের আগে ব্রিগেড ময়দানে মহা সমাবেশের মঞ্চ দেখাতে চাইছে সিপিএম। সেই সমাবেশেই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে নিজেদের ‘প্রাসঙ্গিক’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। একার শক্তিতে রাজ্যে কংগ্রেস শেষ বার ব্রিগেডে সভা করেছিল ২০০৫ সালে। তার ঠিক এক বছর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল সনিয়া গাঁধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। কেন্দ্রে তখন বামেদের সমর্থনে প্রথম ইউপিএ সরকার। নতুন অক্সিজেন নিয়ে সেই ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে এসেছিলেন তত্কালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া। ঘটনাচক্রে, এত বছর পরেও আবার যখন বিগ্রেড সমাবেশ হচ্ছে, তখনও এআইসিসি-র সর্বোচ্চ পদে তিনিই। কিন্তু তখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধুনাপ্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে হাত লাগিয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী ও সোমেন মিত্র। এখন তাঁরাও অতীত। তাই এত বছর পর ব্রিগেড সমাবেশে বামফ্রন্টের ‘সহযোগী’ হয়েছে কংগ্রেস।
২০০৬ সালের পর তৃণমূল দাপটে ক্রমবর্ধমান সাংগঠনিক শক্তিক্ষয়ের কারণে আর ব্রিগেড সমাবেশ করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে জোটের সৌজন্যে একবার ফের ব্রিগেড সমাবেশে সামিল হচ্ছে কংগ্রেস। তাই অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসও নিজেদের সক্রিয় উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে। সূত্রের খবর, বিধান ভবন থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় নির্দেশ গিয়েছে, যে প্রত্যেক জেলা কংগ্রেসের নেতৃত্ব ও কর্মীদের সদর্থক উপস্থিতি রাখতে হবে ব্রিগেডে। সঙ্গে নির্বাচনী জোটের আগে ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে প্রচার, মিটিং, মিছিল করতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সমাবেশে তিন লাখ কর্মীদের সমাবেশ চাইছে নেতৃত্ব। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, ‘‘ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে আমরা আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছি। তাই নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, সফল করতে আমরা নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখছি।’’ কংগ্রেস নেতাদের এমন উদ্যোগের পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা। জোট শরিক সিপিএম একক শক্তিতেই ব্রিগেড ময়দান এখনও ভরিয়ে দেওয়ার শক্তি রাখে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস নেতৃত্ব যদি ব্রিগেডে বড় কোনও যোগদান না রাখতে পারে, তাহলে নির্বাচনের আগেই জোটে কংগ্রেসের কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেতে পারে। তাই জনসমাগমে বামফ্রন্টের অন্য শরিকদের পিছনে ফেলে দিয়ে কর্মী সমর্থকদের হাজিরা চায় কংগ্রেস।
সনিয়া এবং প্রণব। ফাইল ছবি।
২৮ ফেব্রুয়ারির সমাবেশে সিপিএমের পক্ষে হাজির হবেন সীতারাম ইয়েচুরি থেকে শুরু করে প্রকাশ কারাট-সহ পলিটব্যুরোর নেতারা। সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-র মতো বাম শরিকদেরও কেন্দ্রীয় নেতারা হাজির হবেন। তাই কংগ্রেস শিবির থেকে চেষ্টা হচ্ছে এআইসিসি-র গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও ব্রিগেডের মঞ্চে হাজির করাতে। যদিও, কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর নিজেই এখন এআইসিসি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা। সেদিনের সমাবেশে বক্তা তালিকায় তিনি তো থাকবেনই, কিন্তু পাশাপাশি চেষ্টা হচ্ছে এআইসিসি-র আরও নেতৃত্বকে ব্রিগেডে এনে ভোটারদের উদ্দেশে কংগ্রেসের সংগঠনিক শক্তির উপস্থিতি জানান দিতে। রাজনীতির কারবারিদের মতে, এ বারের জোট আলোচনার শুরুতেই সিপিএমের কাছে ১৩০টি আসনের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে তাঁদের দাবি মেনে, ৯২টি আসনে তাঁদের প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে বামফ্রন্ট। আলোচনা সাপেক্ষে আসন সংখ্যা ১১০-এর বেশি হতেই পারে। এত বিরাট সংখ্যক আসন দাবি করার পর ব্রিগেড সমাবেশেই জনসমাবেশ থেকে শুরু করে মঞ্চে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি না ঘটাতে পারলে, যে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে, সেই বিষয়টিও মাথায় রয়েছে কংগ্রেস রাজ্য নেতৃত্বের। তাই জোটের ব্রিগেডে শক্তি দেখিয়েই নীলবাড়ি দখলের যুদ্ধে যেতে চাইছে অধীরের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস।