প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ফাইল চিত্র
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ব্রিগেড সমাবেশে আসার অনুমতি দিলেন না চিকিৎকরা। অন্তত শনিবার পর্যন্ত তেমন কোনও খবর নেই। শনিবার রাজ্য সিপিএম সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে।
শুক্রবার জানা গিয়েছিল, স্বয়ং বুদ্ধদেবই ব্রিগেডে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটের নেতাদের বক্তব্য ছিল, চিকিৎসকরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই তাঁকে ব্রিগেড সমাবেশে নিয়ে আসার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করবে দল। কিন্তু শনিবার জানা গিয়েছে, বুদ্ধদেবের বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই তাঁকে সমাবেশে আসতে দিতে রাজি হচ্ছেন না চিকিৎকরা। বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অসুস্থ। তিনি ব্রিগেড সমাবেশে যাবেন কি না, এ বিষয়ে যাবতীয় উত্তর রবিবারই পাওয়া যাবে। তবে বুদ্ধদেবের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, তাঁর নিজের সাধ থাকলেও সাধ্য নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তবে মনে করা হচ্ছে, ব্রিগেড সমাবেশে যোগ না দিতে পারলেও লিখিত বার্তা পাঠাবেন বুদ্ধদেব। দলের ছাত্র ও যুবনেতৃত্ব চেয়েছিল, একটি বারের জন্য ব্রিগেডে আসুন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। একান্তই অসুস্থতার কারণে তিনি সশরীরে ব্রিগেডে না আসতে পারলে অন্তত ‘ভার্চুয়াল’ উপস্থিতির বন্দোবস্ত করা হোক। কিন্তু মুজফ্ফর আহমেদ ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, অসুস্থতার কারণেই তাঁর ভার্চুয়াল উপস্থিতিও সম্ভব হবে না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘বুদ্ধদা এখনও আমাদের তথা দেশের বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে ‘আইকনিক লিডার’। অবশ্যই তিনি সমাবেশে এলে আমাদের মনোবল বাড়ত। কিন্তু তাঁর লিখিত বার্তাও আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান।’’ এটা ঠিকই যে যতই অসুস্থ বা ঘরবন্দি হোন, বাম জনতার কাছে বুদ্ধদেব এখনও ‘বৈগ্রহিক’।
ব্যক্তিগত সততা এবং সাধারণ জীবন যাপনের জন্য বামপন্থীদের মনে তাঁর অবস্থান বিগ্রহের মতোই। কিন্তু চিকিৎসকদের অনুমতি ব্যতিরেকে তাঁকে ব্রিগেডে আনার ঝুঁকি নিতে চাইছে না আলিমুদ্দিন।
ফলে আপাতত বুদ্ধদেবের সশরীর উপস্থিতি থাকবে না ধরে নিয়েই ব্রিগেডে সমাবেশের আয়োজন করছে সিপিএম। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশে এলেও অশক্ত শরীরে মঞ্চে উঠতে পারেননি তিনি। কাচ তোলা গাড়িতে বসেই শুনেছিলেন দলীয় সতীর্থদের বক্তৃতা। গাড়িতেও তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল অক্সিজেন সিলিন্ডার। দু’বছরের ব্যবধানে আরও অসুস্থ হয়েছেন বুদ্ধদেব। বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়েছে তাঁকে। সঙ্গে বুদ্ধদেবের ‘ডাস্ট অ্যালার্জি’-র কথাও মাথায় রেখেছেন চিকিত্সকরা। কারণ, ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশের দিন ব্যাপক ধুলো ওড়ে। তাই বুদ্ধদেবকে সমাবেশে আসার অনুমতি দিলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সে কারণেই তাঁকে সমাবেশে আসার অনুমতি অন্তত শনিবার পর্যন্ত দেননি চিকিৎসকেরা। তবু রবিবার সকালেও শেষ একটা চেষ্টা করা হতে পারে বলেই খবর। তা-ও সফল না হলে বুদ্ধদেবের লিখিত বার্তা পড়ে শোনানো হবে ব্রিগেড-জনতার সামনে। আর ছয়ের দশকের পর এই প্রথম সিপিএমের কোনও ব্রিগেড সমাবেশে থাকবেন না দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা।